দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে ভুট্টা আবাদ এবং আবাদকৃত জমিতে ভুট্টার বাম্পার ফলন হলেও উৎপাদিত ভুট্টার দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক।
বিভিন্ন হাটবাজারে ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে ৮০ কেজি ওজনের এক বস্তা কাঁচা ভুট্টা এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একই পরিমাণ শুকনা ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫০ থেকে দুই হাজার ১০০ টাকা দরে। অথচ গত বছর কাঁচা ভুট্টা বিক্রি হয়েছে প্রতি বস্তা এক হাজার ৭৫০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা এবং শুকনা ভুট্টা দুই হাজার ১৫০ থেকে দ্ইু হাজার ২০০ টাকা বস্তা। ভুট্টার দাম কম হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্থানীয়ভাবে ভুট্টার আবাদ ও উৎপাদন বেশি হওয়ার পাশাপাশি পশুখাদ্য প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও পুরোদমে ভুট্টা ক্রয় না করায় দাম কমে এসেছে। বর্তমানে ভুট্টার বেচাকেনা যেটুকু হচ্ছে তার সবটাই স্থানীয় বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে। আবার আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত ভুট্টা বিক্রি করতে না পেরে ভুট্টা বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে ভুট্টা চাষে কৃষকরা আশানুরূপ লাভ পাওয়ায় অনেক কৃষক ধান ও আলু আবাদ বন্ধ করে একই জমিতে ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছেন। ফলে উপজেলায় দিন দিন ভুট্টার চাষ বাড়ছে। এ বছর উপজেলায় ভুট্টার চাষ হয়েছে ৪ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫০ হাজার ১২৫ মেট্রিক টন। গত বছর ভুট্টা চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে।
পলি শিবনগর গ্রামের ভুট্টা চাষি মামুন সরকার বাবু বলেন, ১৫ বিঘার মতো জমিতে তিনি ভুট্টা চাষ করেছেন। কিন্তু শেষ সময়ে ভুট্টা দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদিত ভুট্টা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বর্তমান ভুট্টার যে দাম তাতে ভুট্টা বাজারে বিক্রি করলে আর্থিকভাবে লোকসান না হলেও লাভের লাভ কিছুই হবে না। দাম বাড়বে এমন আশা নিয়ে ভুট্টা বাড়ীতে মজুদ করে রেখেছেন।
একই এলাকার বর্গাচাষি নওশাদ আলী বলেন, এক বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করে ফলন আশানুরুপ হলেও দাম না পাওয়ায় হতাশায় পড়েছেন। দাম বাড়বে এমন আশায় আছেন। দাম না বাড়লে ভুট্টা আবাদ করে তার কোনো লাভ হবে না।
একই ইউনিয়নের পুরাতন বন্দর এলাকার কৃষক মামুনুর রশীদ বলেন, ১৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। তবে ভুট্টার চাহিদানুযায়ী দাম না পাওয়ায় সব ভুট্টা বিক্রি করা যাচ্ছে না।
উত্তর কৃষ্ণপুর গ্রামের ভুট্টা চাষি অজিত চন্দ্র সরকার বলেন, নিজের এক একর জমিতে দুর্জয় জাতের ভুট্টা চাষ করেছেন। এবার ভুট্টার ফলন খুব ভালো হয়েছে। সময়মতো বৃষ্টি এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি। বর্তমানে দাম কম হওয়ায় জরুরি প্রয়োজনে কিছু ভুট্টা বিক্রি করতে হয়েছে। দাম বাড়বে এমন আশা নিয়ে অবশিষ্ট ভুট্টা বাড়ীতে মজুদ রেখেছেন।
ফুলবাড়ী পৌরশহরের পাইকার ভুট্টা ব্যবসায়ী বাবুল্লা মজিবর, রাজু আহম্মেদ, সাহাদত আলী, আমডুঙ্গিহাটের পাইকার ভুট্টা ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী, আব্দুল মান্নান, আবু দাউদ ও আমিনুল ইসলাম বলেন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকার ব্যবসায়িরা না আসায় ভুট্টার দাম কমে গেছে। বর্তমানে প্রকার ভেদে পালোয়ান জাতের কাঁচা ভুট্টার ৮০ কেজি ওজনের প্রতিবস্তা এক হাজার ৬০০ এবং দুর্জয় জাতের এক হাজার ৬৫০ টাকা। একইভাবে পালোয়ান জাতের শুকনা ভুট্টা দুই হাজার ৫০ টাকা এবং দুর্জয় জাতের দুই হাজার ১০০ টাকা দরে বেচাকেনা চলছে। তবে এতে বেচাকেনা অনেকটাই কমে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ মো. শাহিনুর রহমান বলেন, এ বছর ফুলবাড়ীতে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। প্রাকৃতি কোনো দুর্যোগ না আসায় ভুট্টার বাম্পার ফলনও হয়েছে।
অমর গুপ্ত, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি