স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের রহস্য শিগগিরই উদ্ঘাটন হবে ।তিনি শুক্রবার রাজধানীর ইনঞ্জিনিয়ার্স ইনিষ্টিটিউশন (আইইবি) মিলনায়তনে ঢাকাস্থ চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলা সমিতি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথাবার্তাকালে এ কথা বলেন।ইঞ্জিনিয়ার মো. নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে সংসদ সদস্য মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস ও মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী বক্তব্য রাখেন।এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাগর-রুনি হত্যা মামলার বাদীর অভিযোগ সঠিক নয়। চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি তদন্ত করছেন র‌্যাবের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা। তদন্তের স্বার্থে র‌্যাব এ ব্যাপারে বাদীপক্ষকে কিছুই জানায়নি। র‌্যাব প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য,২০১২ সালের ১১ ফেব্র“য়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সারোয়ার ওরফে সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি খুন হন।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধে চাঁপাই নবাবগঞ্জবাসীর অনবদ্য অবদানের কথা উল্লেখ করেন।তিনি চাঁপাইয়ের বিশ্ববিখ্যাত সুস্বাধু মিষ্টি আম ও রেশম শিল্পেরও প্রশংসা করেন। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যাকান্ডের চার পূর্ণ হলো বৃহস্পতিবার। ২০১২ সালের এ দিনেই সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনিকে রাজধানীর রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। পরদিন ছুরিকাঘাতে ক্ষতবিক্ষত দু’জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ঘটনাস্থলে গিয়ে সবার সামনে বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে; যা না ঘটার পর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে।চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই নওশের শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন। থানার হাত ঘুরে তদন্তের দায়িত্ব যায় ডিবিতে।৬২ দিন পর ডিবির আদালতের কাছে ব্যর্থতা স্বীকার করলে তদন্তের দায়িত্বে আসে র‌্যাব। এখনও তারাই তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।শুধু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নয় তৎকালীন অনেক মন্ত্রীই আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের খুনিদের গ্রেপ্তারে নানা আশ্বাস দিলে কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন হয়নি।বেঁধে দেয়া সময় ৪৮ ঘণ্টা তা এখন দিন গুনে দাঁড়িয়েছে ৪৮ মাসে। ৪৮ মাসেও এ আলোচিত হত্যাকাণ্ডের কোন কূল কিনারা পায়নি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।দীর্ঘ সময়েও আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন না হওয়ার কারণে হতাশ সাগর-রুনির পরিবারের সদস্য ও সাংবাদিক সমাজ। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যাকান্ডের চার পূর্ণ হলো বৃহস্পতিবার। কিন্তু সবার্ধিক গুরুত্ব দেয়ার পরও এই হত্যা মামলার কোনো ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা । ঘটনার চার বছরের মাথায় এসে তদন্ত কারী কর্মকর্তা বলেছেন এখনো সাগর সরোয়ারের ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপের সন্ধান করে যাচ্ছেন তারা।

রাজধানীর রাজাবাজারের হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল থেকে এই ল্যাপটপটি খোয়া যায়। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা ল্যাপটপটি উদ্ধার করতে পারলেই এই সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত অনেকটাই সহজ হবে। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর বিচারের আশা ছেড়েই দিয়েছেন সাগর সরোয়ারের মা সালেহা বেগম । আর র‌্যারের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রুনির ভাই ও মামলার বাদী নওশের আলম রোমান । তবে সাগর রুনী হত্যা মামলা বিষয়ে কথা বলতে রাজী হননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল । এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাগর রুনী হত্যাকান্ডের বিষয়ে বহু বলেছি । আর এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না । সরকারের অন্য মন্ত্রীদেও কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইতে পারেন । এদিকে, ছেলের হত্যার বিচার সর্ম্পকে জানতে চাইলে সাগর সরোযারের মা সালেহা মনির বলেন, এ হত্যাকান্ডের বিচার হবে না । এর সঙ্গে উচ্চ মহলের হাত রয়েছে । চার বছর শেষ হয়ে গেল বিচার পাইনি এখন আর এ বিচার চাই না বিচার আল্লাহর কাছে দিয়ে রেখেছি । তিনি বলেন, সরকারের সদিচ্ছা নেই , পাশাপাশি প্রশাসনও নীরব। যে এ কাজটা করেছে সে সরকারের চেয়েও প্রভাবশালী। তা না হলে কে এম লোক যার কথা প্রকাশ করছে না সরকার । নিশ্চই সরকারের কাঁধের ওপর রাইফেল আছে । রুনির ভাই ও মামলার বাদী নওশের আলম রোমান বলেন, মামলার তদন্তে আমার হতাশ এ মামলার তদন্ত সঠিক ভাবে হচ্ছে না । মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব সদর দপ্তরের উপপরিচালক সহকারী পুলিম সুপার ( এএসপি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মামলার তদন্ত এখনো চলছে । কয়েকটি বিষয় নিয়ে আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি । এছাড়া হারিয়ে যাওয়া ল্যাপটপের তথ্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি ) মাধ্য্যমে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে । ল্যাপটপটি অন করা হলে আমরা তার লোকেশন জানতে পারবো।এজন্য ব্যবস্থা ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে । মামলার সুষ্ঠু তদন্ত্রেও স্বার্থেই আমার অপেক্ষা করছি ।

আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বাদী হয়ে সেই সময় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে সেই মামলা থানা পুলিশ পরে তা ডিবিতে ( গোয়েন্দা পুলিশ) গড়ায়। ডিবিও হত্যার মোটিভ বের করতে ব্যর্থ হওয়ায় তা পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিলে র‌্যাবে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে র‌্যাব।ইতিমধ্যে একাধিকবার বদল করা হয়েছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও। সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও আলামত পাঠিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়েছে। মামলার তদন্ত সংস্থার কাছে সেই পরীক্ষার প্রতিবেদনও এসেছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।সাংবাদিক এই দম্পতির মধ্যে সাগর সারোয়ার ছিলেন বেসরকারি টেলিভিশন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক ও তার স্ত্রী মেহেরুন রুনি ছিলেন এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান মেঘ। সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি ২০১২ সালে খুন হওয়ার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের ধরার আশ্বাস দিয়েছিলেন।তার নয় মাস পর কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন ঘটা করে।এরপর ৪৮ মাস গড়িয়ে গেলেও এখনও এই সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।