kurigram1436182062

দৈনিকবার্তা-লালমনিরহাট, ০৬ জুলাই ২০১৫: বাংলাদেশ-ভারতের ১৬২ ছিট মহলে জনগণনা শুরু হয়েছে।গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের রূপরেখা মোতাবেক এ জনগণনা সম্পন্ন হবে।দু’দেশের সীমান্তের প্রত্যেকটি ছিট মহল একদল কর্মকর্তা পরিদর্শন করে নির্ধারণ করবেন যে সেখানকার বাসিন্দারা বর্তমান আবাসে থাকবেন কিংবা বাংলাদেশ বা ভারতে যেতে চান।এ প্রক্রিয়া ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে ছিট মহলগুলো সংশ্লিষ্ট দেশে হস্তান্তরের জন্য প্র¯‘ত হবে।চুক্তি মোতাবেক ভারতের ১১১টি ছিট মহল বাংলাদেশ পাবে। এতে জমির পরিমান হচ্ছে ১৭ হাজার ১৬০ একর। অপরদিকে বাংলাদেশের ৫১টি ছিট মহল ভারত পাবে। এতে জমির পরিমাণ হচ্ছে ৭ হাজার ১১০ একর। ভারতের ছিট মহলগুলোতে প্রায় ৩৭ হাজার ৩৩৪ জন এবং বাংলাদেশের ছিট মহলগুলোতে ১৪ হাজার ২১৫ জন মানুষ বসবাস করে।

ভারত ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২টি ছিটমহলে সোমবার যৌথ জরিপের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর আগে জরিপকাজে অংশ নেওয়া সদস্যদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছিটমহলে যৌথ জরিপে অংশ নিতে শনিবার বাংলাদেশ থেকে ৩৪ সদস্যের একটি দল ভারতে যায়। একই দিন ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে ৬৮ সদস্যের একটি দল। সোমবার সকালে গোতামারী ছিটমহলে গিয়ে দেখা যায়, ভারতের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে উপস্থিত স্পেশাল রিভিনিও অফিসার গ্রেড-২ (বি.আর.ও) দাওয়া নুরবু লামা, প্রতিনিধি ক্লার্ক পিন্টু রয় ও পঞ্চ্যায়ত ক্লার্ক প্রফুল্ল্য সরকার। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, হাতীবান্ধা উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, হাতীবান্ধা ২ নং মডেল সরকাকরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রোকনুজ্জামান সোহেল ও উপজেলা সহকারী ভুমি কর্মকর্ত আনোয়ার হোসেন।

জরিপকারীরা জানায়, ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত যৌথ জরিপের তথ্যকে ভিত্তি করেই এবারের জরিপ চলছে। ওই জরিপের পর ছিটমহলে কারো বিয়ে হয়েছে কি না, কেউ মারা গেছেন কি না, কোনো শিশুর জন্ম হয়েছে কি না এসব তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এসব তথ্য ছাড়াও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ছিটমহলের বাসিন্দারা কোন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করবেন, সেই তথ্যও সংগ্রহ করবেন জরিপকারীরা। ছিটমহলের প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হবে। জানা গেছে, অপেক্ষাকৃত ছোট ছিটমহলগুলোতে টওতিটির জন্য একজন বাংলাদেশি এবং দুজন ভারতীয় জরিপকারী কাজ করবেন। তাঁদের সহায়তায় থাকবেন একজন সুপারভাইজার। লোকসংখ্যা ও আয়তনের দিক থেকে বড় ছিটমহলগুলোতে এর দ্বিগুণ জরিপকারী কাজ করবেন।রোববার বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতীয় ছিটমহলে জরিপকাজে অংশ নেওয়া ভারতীয় দল এবং তাঁদের সহায়তায় কাজ করা বাংলাদেশিদের নিয়ে আলোচনা ও প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জরিপকারীদের কর্ম এলাকাও ভাগ করে দেওয়া হয়।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম জেলার অভ্যন্তরে ১২টি ছিটমহলসহ বাংলাদেশ-ভারতের ১৬২টি ছিটমহলে একযোগে শুরু হয়েছে যৌথ সমীক্ষার কাজ। ছিটমহলবাসীর নাগরিকত্ব নির্ধারণ এবং হেড কাউন্টিং হালনাগাদের এ কার্যক্রম চলবে ১৬ জুলাই পর্যন্ত। সোমবার সকাল ৯টায় ফুলবাড়ী উপজেলার অভ্যন্তরের দাসিয়ার ছড়া ছিটমহলে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত ভারতের সবচেয়ে বড় ছিটমহল দাসিয়ার ছড়াসহ কুড়িগ্রাম জেলার অভ্যন্তরে ১২টি ছিটমহলে যৌথভাবে দু’দেশের ১০ টি সমীক্ষা টিম কাজ শুরু করেছেন। প্রতিটি টিমে ভারতের ১১ জন ও বাংলাদেশের ৯ জন কাজ করছেন।১৯৭৪ সালের চুক্তি অনুযায়ী এ সমীক্ষা কাজের মধ্যে নির্ধারণ হবে কে কোন দেশের নাগরিক হতে চায়। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এ নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ পাবে ছিটবাসী। এ ছাড়া নাগরিকত্ব নির্ধারণ ও হেড কাউন্টিং হালনাগাদ নির্বিঘ্নে করার পাশাপাশি অন্যান্য জটিলতা এড়াতে গত ২২ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ছিটমহলের জমি ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ রাখাসহ সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তসমূহ বিজ্ঞপ্তি আকারে ছিটমহবাসীকে অবগত করা হয়েছে। আগামী ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের এবং ৫১টি ছিটমহল ভারতের অন্তর্ভূক্ত হবে।