govt-logo-sm20130725071335_44094
ধার দেনায় চলছে সরকার

সরকার পরিচালনার শুরুতেই ধার-দেনায় পড়ে গেছে সরকার। জনগণের সন্তুষ্টি অর্জনে বিভিন্ন জনতুষ্টিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হচ্ছে তাদের। প্রশাসনকে গতিশীল করতে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা। পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এসব করতে গিয়েই সরকারের উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয় দুটোই বাড়ছে। আর এ ব্যয় মেটাতে গিয়ে সরকার সহজলভ্য হিসেবে ব্যাংক থেকেই ধার নেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঘোষণা দিয়েছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ঋণ নেওয়া হবে। সেটি হলে প্রথমবারের মতো বড় আকারের বৈদেশিক মুদ্রা নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে। এমনিতে অবশ্য জ্বালানি ও সার আমদানির জন্যও ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ধার নেবে সরকার।

গত সপ্তাহে সরকারের ঋণ সম্পর্কিত যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাতে দেখা যায়, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে সামগ্রিকভাবে (ব্যাংক ও অন্যান্য) সরকারের নেওয়া ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৯ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের নভেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ২৫ হাজার ১৬০ কোটি টাকায়। এক মাস পর গত ডিসেম্বর শেষে ওই ঋণের স্থিতি ১ লাখ ২৭ হাজার ২০২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ এক মাসে সরকারের ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৪২ কোটি টাকা।

জানা গেছে, গত বছরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের ব্যাংক ঋণ বৃদ্ধির হার কম থাকলেও জানুয়ারিতে এসে তা আবারও বাড়তে শুরু করেছে। নতুন সরকার ক্ষমতায় বসার পর জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে সরকারের ব্যাংক ঋণ এর চেয়ে বেশি থাকলেও তখন অন্যান্য খাতে ঋণ ছিল কম। তবে এবার ব্যাংকব্যবস্থার বাইরে সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য খাত থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ আরও বেশি হারে বেড়েছে। জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার; যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২২ গুণ বেশি। এদিকে সামনের দিনগুলোয় সরকারের খরচ আরও বৃদ্ধি পাবে এমন আশঙ্কা রয়েছে নীতিনির্ধারকদের। সেই আশঙ্কা থেকে আপদকালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অলস টাকা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে সরকার। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এরই মধ্যে ব্যাংকিং খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য বা অলস টাকার পরিমাণ বেড়ে গেছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, রাষ্ট্রীয় চার বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতার যে উদ্বৃত্ত তারল্য জমা হয়ে আছে টাকার অঙ্কে তার পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। এ টাকাটাই আপদকালে বন্ডের মাধ্যমে ধার নিয়ে ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে সম্প্রতি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ রাষ্ট্রীয় চার ব্যাংকের সঙ্গে এ ব্যাপারে বৈঠক করেছে। ব্যাংকগুলো সরকারের কাছে যে হিসাব দিয়েছে, সে অনুযায়ী নভেম্বর পর্যন্ত মোট বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের ৩২ শতাংশ সোনালী ব্যাংকের, ১৮ শতাংশ করে জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের এবং ২০ শতাংশ রূপালী ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য বা অলস টাকা হিসেবে জমা রয়েছে। ব্যাংকগুলো বলছে, সরকার চাইলে স্বল্প মেয়াদে এ টাকা ধার নিতে পারে। বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, সরকার পরিচালনায় কোন খাত থেকে কত ঋণ নেওয়া হবে বাজেটে তার একটি দিকনির্দেশনা দেওয়াই থাকে। তবে কোনো কারণে অপ্রত্যাশিত ব্যয় বেড়ে গেলে সরকারকে তাৎক্ষণিকভাবে ঋণ নিতে হয়। এসব ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে সহজে ঋণ নেওয়া যায় বলে সেদিকেই দৃষ্টি থাকে সরকারের। তবে অর্থনীতিতে এর একটি কুফলও আছে। ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বাড়লে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে এ মুহূর্তে ব্যক্তি খাতের চাহিদা কম থাকায় সরকার যদি ব্যাংকগুলোর অলস টাকা বন্ডের মাধ্যমে ধার নেয় তাহলে বেসরকারি বিনিয়োগে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না বলেই মনে হচ্ছে।