narayanganj--linkroad---4দৈনিক বার্তা : নাসিক প্যানেল মেয়র নরজরুল ইসলামসহ পাঁচজন অপহরণ, জেলার সিনিয়র আইনজীবী মানিক সরকার ও তার গাগিচালক নিখোঁজ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ এবং শিবিরের হামলায় পুলিশের এক সদস্যের মাথা ফাটার ঘটনায় পুরো জেলা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

অপহরণের ২৪ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ছাত্রলীগ নারায়নগঞ্জ জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামকে এখনো উদ্ধার করতে পারেনি আইন শৃংখলা বাহিনী। অপরদিকে একই সময় নিখোঁজ নারায়নগঞ্জ বারের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট চন্দন সরকার এবং তার ড্রাইভার ইব্রাহিম এখনো নিখোঁজ রয়েছে। একই দিনে সাতজন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ –উৎকন্ঠায় সময় কাটাচ্ছে তাদের পরিবারের সদস্যরা।নজরুলের পরিবারের অভিযোগের আঙ্গুল আরেক ওয়ার্ড কমিশনার নুর হোসেনের দিকে। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় নির্বাক এডভোকেট চন্দন সরকারের পরিবার।কবি ও আইনজীবি চন্দন সরকার কেন নিখোজ তা বুঝে উঠতে পারছেনা তার পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে সকাল এগারটায় নজরুল ইসলামের সমর্থকরা ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়কের মৌচাক এলাকায় অবরোধ করে রাখে।  বিক্ষুব্দ লোকজন রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এসময় মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অপহ্রত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম আজকেও দাবী করেন সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের ক্উান্সিলর নুর হোসেন পরিকল্পিতভাবে তার স্বামীকে অপহরন করেছে।


এডভোকেট চন্দন সরকারের নিখোজের প্রতিবাদে এবং তাকে খুজে বের করার দাবীতে নারায়নগঞ্জ আইনজীবি সমিতির আহবানে সকাল থেকেই আদালত বর্জন করে আইনজীবীরা। তারা আদালত প্রাঙ্গনে সমাবেশ শেষে ঢাকা নারায়নগঞ্জ লিংক রোড সকাল এ্গারটা থেকে একঘন্টা অবরোধ করে রাখে। এসময় আইনজীবীরা আইনশৃংখলা বাহিনীকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়। পরে তারা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও করে । এদিকে চন্দন সরকারের ভাতিজা অরুণাভ সরকার বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি সাধারন ডায়রি করেন।

এদিকে সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর  এবং প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম সহ ৫জন অপহরনের পর ২৪ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও তাদের কাউকে উদ্ধার করা যায়নি। অপহরনের ২০ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো থানায় মামলা হয়নি।

বিছিন্ন এসব ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে।  জেলা শহর ঘুরে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জে অ্যাডভোকেট মানিক সরকার নিখোঁজ হওয়ার প্রতিবাদে আদালত বর্জন করেছেন আইনজীবীরা। এ সময় তারা আদালত চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। পরে তারা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। এ ঘটনায় ওই রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সোমবার সকাল ১০টায় নারায়ণগঞ্জ আদালতের আওয়ামী লীগ, বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা একত্রিত হয়ে আদালত বর্জন করেন এবং আদালত চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।

সমাবেশে বক্তব্য  দেন, নারায়ণগঞ্জ  জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান, অ্যাডভোকেট আবদুল বারী ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাভোকেট খোকন সাহাসহ অন্য আইনজীবীরা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, নারায়ণগঞ্জে একের পর এক অপহরণ ও গুমের ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন তা রোধ করতে পারছে না। যেখানে আইনজীবীদেরও কোনো নিরপত্তা নেই। আইনজীবীরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত অ্যাডভোকেট মানিক সরকারের সন্ধান না পাওয়া যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আইনজীবীদের এ আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দেন তারা। পরে আইনজীবীরা একটি মিছিল নিয়ে বেলা পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আইনজীবীদের লিংক রোডে বাঁশ ফেলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে দেখা গেছে।

রোববার দুপুরে আইনজীবী মানিক সরকার নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে তার প্রাইভেটকারে করে বের হয়ে বাড়ি ফেরেনি। এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে তার পরিবার।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে দিনদুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জ  থেকে প্যানেল  মেয়র নজরুল ইসলামসহ পাঁচজনকে অপহরণের প্রতিবাদে এবং তাদের উদ্ধারের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছে নজরুলের কর্মী-সমর্থকসহ সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাবাসী। সোমবার সকাল ৯টা  থেকে নজরুলের কর্মী-সমর্থকরা ও আশপাশের এলাকার মানুষ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মৌচাক মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা বিভিন্ন স্লোগান ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান করছেন অবরোধকারীরা।এছাড়া, সাতক্ষীরায় পুলিশের গুলিতে শিবিরকর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বের হওয়া নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রশিবিরের একটি মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় শহরে ডিআইটি এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশের টিএস আই আকরামের মাথা ফাটিয়ে দেয় শিবিরকর্মীরা।সোমবার সকাল ৮টায় এ ঘটনা ঘটে। আহত টিএসআই আকরামকে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ  জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সোয়া ৮টায় শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত গুলশান সিনেমা হলের সামনে সাতক্ষীরায় পুলিশের গুলিতে শিবিরকর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে মহানগর ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাদের সবার হাতে ছিল লাঠিসেটা। মিছিলটি ডিআইটি এলাকায় গণবিদ্যা নিকেতন স্কুলের সামনে গেলে থেকে সেখানে দায়িত্বে থাকা পুলিশের টিএসআই আকরামের উপর হামলা চালিয়ে তার মাথা ফাটিয়ে দেয় শিবিরকর্মীরা। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি এস এম মঞ্জুর কাদের জানান, ডিআইটি এলাকায় একটি স্কুলের ছাত্রীদের আন্দোলন চলছিল। কিন্তু পুলিশ গিয়ে শিবিরের কোন মিছিল পায়নি। কারা পুলিশের টিএসআই এর উপর হামলা চালিয়েছে তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।