1দৈনিক বার্তা –বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব গৌতম বুদ্ধের জন্মৎসব শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা মঙ্গলবার।গৌতম বুদ্ধের শুভজন্ম, বোধিঞ্জান লাভ ও মহাপরিনির্বান এই ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শ্রেষ্টতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বিশ্বের সকল বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে এটি বুদ্ধপূর্ণিমা নামে পরিচিত।বৌদ্ধ ধর্ম মতে, আজ থেকে ২ হাজার ৫৫৭ বছর আগে এই দিনে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন।তাঁর জন্ম,বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর (বৈশাখী পূর্ণিমা) অপর নাম দেয়া হয় বুদ্ধ পূর্ণিমা।

যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষেরা তাদের এ প্রধান ধর্মীয় উৎসব পালনের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সন তার বাণীতে  বলেছেন,বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ভাই বোনদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচছা। যুগে যুগে মহামানবেরা পথভ্রষ্ট মানুষকে সত্যের আলো দেখিয়েছেন, চিনিয়েছেন কল্যাণের পথ।সকল প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকুলতার মধ্যেও সত্য ও ন্যায়ের পথে মানুষকে আহবান করেছেন।

তিনি আরো বলেন, “হিংসা দিয়ে হিংসার ধ্বংস নয়” সে কারনেই শরণ নিতে হয় অ-হিংসার মহামতি বুদ্ধের এ বাণী চিরকালীন, আজও মানব জাতির জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। জাতিতে জাতিতে ধ্বংসাত্মক প্রতিযোগিতায় মানব জাতি আজ যখন ছিন্নভিন্ন তখন মহমতি গৌতম বুদ্ধের অহিংসা, মানব প্রেম ও শান্তির বাণী বিশ্ববাসীকে দেখাতে পারে মহামিলনের পথ।

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ ।বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দর্শনেই এদেশের সকল বর্ণ, ধর্মীয় সম্প্রদায় ও নৃগোষ্ঠী-সমূহের সম্মিলিত আকাঙ্খার স্ফুরণ ঘটে। বাংলাদেশে সকল ধর্মের অনুসারীরা পার¯পরিক সৌহার্দ্যরে বন্ধনে আবদ্ধ।আমরা ধর্মীয় সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু বিভাজনে বিশ্বাস করিনা। আমরা সবাই বাংলাদেশী। ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং সকল ধর্মের মর্যাদা রক্ষায় আমরা সবসময়ই সচেষ্ট থেকেছি এবং আগামীতেও সে প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।

বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে মঙ্গলবার সরকারি ছুটির দিন।বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

বৌদ্ধবিহার সূত্র জানায়, সকালে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হবে। পরে বুুদ্ধ পূজা, মহাসংঘদান, মহা অষ্টপরিস্কারদানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যাদি পালিত হবে। এরমধ্যে জগতের সব প্রাণীর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ প্রার্থনা।

বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস, গৌতম বুদ্ধ বিশ্বের মানুষের দুঃখ-বেদনাকে নিজের দুঃখ বলে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেন।মানব জীবনের দুঃখ তাঁর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি সম্পদ, ঐশ্বর্য তথা সংসার জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন এবং জন্ম, জরা, ব্যাধি ও মৃত্যুÑ এ চারটির কারণ উদঘাটন এবং মানুষের শান্তি ও মুক্তির লক্ষ্যে নিমগ্ন হন।

এক সময় রাজপ্রাসাদের বিত্ত-বৈভব ও সুখ এবং স্বজনের মায়া ত্যাগ করে সিদ্ধি লাভের পন্থা অন্বেষণে তিনি বেরিয়ে পড়েন অজানার পথে। দীর্ঘ ৬ বছর সাধনার পর গৌতম বুদ্ধ বোধিপ্রাপ্ত হন।বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টায় কমলাপুর ধর্মরাজী বৌদ্ধ বিহার থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হবে।

বাংলাদেশ বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিষদ সকাল ৮টায় জাতীয় জাদুঘর এর সামনে থেকে সন্মিলিত শান্তি শোভাযাত্রা ও সম্প্রীতি শোভাযাত্রা বের করবে।সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শান্তি শোভাযাত্রার উদ্বোধন করবেন।