1 দৈনিক বার্তা –স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন,অবসরে পাঠানো র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাকে ধরতে আইনি প্রক্রিয়া চলছে। তাঁরা নজরদারিতে আছেন,শিগগিরই  গ্রেপ্তার হবেন। আদালতের আদেশ মেনে নারায়ণগঞ্জ হত্যাকাণ্ডে অভিযোগের মুখে থাকা তিন র‌্যাব কর্মকর্তাকে  প্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী । সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

বিকেলে সচিবালয়ে জঙ্গিবাদ বিষয়ে এক  বৈঠক হয়।  বৈঠক  শেষে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।উল্লেখ্য,নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনার পর অবসরে পাঠানো র‌্যাবের  সেই তিন কর্মকর্তাকে  গ্রেপ্তারে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে রোববার স্বরাষ্ট্রসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। দণ্ডবিধি বা বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া না  গেলে তাঁদের ৫৪ ধারায়  গ্রেপ্তার করার নির্দেশ  দেন হাইকোর্ট। ওই তিনি কর্মকর্তা হলেন র‌্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক  লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এম এম রানা।

এই তিনজনকে ধরতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে  কোনো নির্দেশ দিয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন,আইনি প্রক্রিয়া চলছে, মানে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমাদের কাছে হাইকোর্টের নির্দেশ আছে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় প্রধান আসামি নূর হোসেন ভারতে চলে গেছেন,এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এ বিষয়ে যাঁরা বক্তব্য দিয়েছে তাঁরা জানেন। আমরা তাঁকে  গ্রেপ্তার করবই।

হাই কোর্টের আদেশ পুলিশ সদর দপ্তরে  পৌঁছার পর তিনি  সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, তাদের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে।তবে সামরিক বাহিনী  থেকে অবসরে পাঠানো এই তিন কর্মকর্তাকে  গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি প্রতিমন্ত্রী।

ওই তিন কর্মকর্তা হলেন- র‌্যাব-১১ এর সাবেক কমান্ডার  লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ,  মেজর আরিফ  হোসেন এবং নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানা। এদের মধ্যে তারেক সাঈদ ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী  মোফাজ্জল  হোসেন  চৌধুরী মায়ার মেয়েজামাই।এর আগে  বেলা  সোয়া ১১টার দিকে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) জালাল উদ্দিন আহমেদ  চৌধুরী আদালতের আদেশের কপি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, আমরা আদেশের কপি  পেয়েছি। এখন আদালতের আদেশ পালনে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া চলছে।হাই কোর্টের ওই আদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই তিন কর্মকর্তাকে  গ্রেপ্তার করতে আইজিপিকে নির্দেশ  দেয়া হয়।

হাই কোর্টের আদেশে বলা হয়, চাকরিচ্যুত ওই তিনজনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি বা অন্য কোনো বিশেষ আইনে কোনো অভিযোগ পাওয়া না  গেলে তাদের ৫৪ ধারায়  গ্রেপ্তার করতে হবে। গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও হাই কোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়। চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের এই মামলাটি তদন্ত করছে  গোয়েন্দা পুলিশ।

একটি রিট আবেদনে আদালত  গ্রেপ্তারের এই আদেশ দেয়। র‌্যাবের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠার পর হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত এক আদেশে এই ঘটনাটি খতিয়ে  দেখতে প্রশাসনিক তদন্ত করতে সরকারকে বলেছিল।ওই আদেশের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলী মোল্লার নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।

এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে এই পর্যন্ত ২১ জনকে আটক করেছেন।এর মধ্যে ৭ জনকে হত্যামামলায়  গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অন্যদের ৫৪ ধারায়  গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
তবে এজাহারভুক্ত আসামি এবং অভিযোগের মুখে থাকা র‌্যাব কর্মকর্তাদের  গ্রেপ্তার না হওয়ায় অসন্তোষ জানিয়ে আসছে নিহতদের স্বজনরা।

গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ ভেসে ওঠে।লাশ উদ্ধারের আগের দিন তারেক সাঈদকে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়কের দায়িত্ব  থেকে সরিয়ে সেনাবাহিনীতে পাঠানো হয়েছিল।

এরপর নিহত নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, নারায়ণগঞ্জের আরেক কাউন্সিলর নূর  হোসেন ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়ে র‌্যাব সদস্যরা তার জামাতাসহ সাতজনকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে।ওই অভিযোগ ওঠার পর গত ৭  মে সাঈদসহ র‌্যাব-১১ এর ওই তিন কর্মকর্তাকে চাকরি  থেকে অকালীন অবসরে পাঠানো হয়।