11দৈনিক বার্তা : ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা আজ। পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য কে ভারত শাসন করবে- আজই এ নিয়ে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হবে। তবে প্রায় সব সমীক্ষাই ইঙ্গিত দিচ্ছে এবার বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটই সরকার গঠন করবে। দলটির নেতাদের বডিল্যাংগুয়েজ দেখেও তাই মনে হচ্ছে। মন্ত্রিত্ব আর পদ-পদবি পাওয়া নিয়ে দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত বিজেপি নেতারা। আর নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ধরেই সরকার গঠনের সব প্রক্রিয়া গুছিয়ে নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। সমীক্ষার ফলে কংগ্রেস কিছুটা চুপ হয়ে গেলেও বসে নেই দলটির নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। চুপিসারে বিকল্প সরকারের অংক কষছেন তিনি। মোদিকে ঠেকাতে তার শেষ অস্ত্র মমতা ব্যানার্জি, মায়াবতী ও মুলায়ম সিং যাদব। এই তিন আঞ্চলিক নেতার সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছেন তিনি। এদিকে বিজয়ী দলের জয়োৎসবকে জমকালো করতে প্রস্তুত বাদ্যকর, ব্যান্ড পার্টি, রঙ ব্যবসায়ী আর মিষ্টি দোকানিরা।
সর্বশেষ এনডিটিভির জরিপে দেখা যায়, ২৭৯ আসন পেতে পারে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট (এনডিএ)। বিজেপি এককভাবে পেতে পারে ২৩৫ আসন। অন্যদিকে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ মাত্র ১০৩ আসন পেতে পারে। এর মধ্যে কংগ্রেস এককভাবে পেতে পারে মাত্র ৭৯ আসন। এভাবে বিভিন্ন বুথ-ফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতায় আসা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। হেভিওয়েট প্রার্থীদের ৩০টির বেশি আসনের বুথ-ফেরত জরিপ বিশ্লেষণ করে বেসরকারি নিউজ চ্যানেল এবিপি আনন্দ জানায়, মোদি দুটি আসনেই জিততে পারেন। অন্যদিকে আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিবাল ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এবং বিজেপি নেতা অরুণ জেটলির মতো নেতারা পরাজয়ের মুখে পড়তে পারেন। জরিপের ফল অনুযায়ী, দিল্লির চাঁদনি চক আসন থেকে এবার খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও কংগ্রেস প্রার্থী কপিল সিবালকে। এ আসনে বিজেপির প্রার্থী হর্ষবর্ধনের সঙ্গে আম আদমি পার্টির প্রার্থী আশুতোষের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত রয়েছে। সিবাল সেখানে তৃতীয় স্থান পেতে পারেন। নয়াদিল্লি আসনেও তৃতীয় স্থান পেতে পারেন কংগ্রেস প্রার্থী অজয় মাকেন। এ আসনে আপ প্রার্থী আশিষ খৈতান বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়ে জিততে পারেন। উত্তর প্রদেশের বারানসী আসনে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রাথী নরেন্দ্র মোদিই জিততে পারেন। আমেথিতে রাহুল গান্ধী জিততে পারেন। এই আসনে দ্বিতীয় স্থানে থাকবেন বিজেপি প্রার্থী স্মৃতি ইরানি।
তবে সমীক্ষার ওপর নির্ভর করে বসে নেই মোদি। তিনি তার বিজয় সুনিশ্চিত করতে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি বিজয়ী হলে সরকার গঠনের কৌশল ঠিক করতে দলের তিন শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন নরেন্দ্র মোদি। গান্ধীনগরে পাঁচ ঘণ্টার সেই ম্যারাথন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজনাথ সিং, অরুণ জেটলি, নীতিন গডকরি। ক্ষমতায় এলে সরকারে কে কোন পদ পাবেন, তা নিয়ে ওই বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
বিজেপি ক্ষমতায় এলে কে কোন পদ পাচ্ছেন : যদি বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় সেক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদিই হবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে জোটবদ্ধ সরকার হলে অনেক শরিক মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নেবেন না বলে মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আদভানি বা রাজনাথ সিং প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। অন্যান্য পদে সম্ভাব্য এনডি চেয়ারম্যান/জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান-লালকৃষ্ণ আদভানি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী-সুষমা স্বরাজ। অর্থমন্ত্রী-অরুণ জেটলি। লোকসভার অধ্যক্ষ-মুরলি মনোহর জোশী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রতিরক্ষামন্ত্রী-রাজনাথ সিং। সংখ্যালঘুমন্ত্রী-মুক্তার আব্বাস নকভি। পরিবহন মন্ত্রী-নীতিন গডকড়ি। আইনমন্ত্রী-রবিশঙ্কর প্রসাদ। কৃষিমন্ত্রী-গোপীনাথ মুন্ডে। নাগরিক উন্নয়ন বা সংখ্যালঘু মন্ত্রী-শাহনওয়াজ হুসেন নগরোন্নয়নমন্ত্রী-রাজীবপ্রতাপ রুডি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী-স্মৃতি ইরানি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী-হর্ষবর্ধন। টেলিকম মন্ত্রক-পীযূষ গোয়েল। পরিবেশমন্ত্রী-মানেকা গান্ধী। নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী-উমা ভারতী।
সোনিয়ার শেষ অস্ত্র : বিভিন্ন সমীক্ষার ফলে পিছিয়ে থাকায় কংগ্রেস নেতারা নীরব হয়ে গেলেও চুপিসারে বিকল্প সরকার নিয়ে অংক কষছেন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। সোনিয়ার শেষ অস্ত্র মমতা ব্যানার্জি, মায়াবতী এবং মুলায়ম সিং যাদব। তার আশা, এই তিনজনের আঞ্চলিক দল মিলে ৭৫ বা তার থেকে বেশি সংখ্যক আসন পেতে পারে কংগ্রেস ও এই তিন দলের আসনসংখ্যা যোগ করলে ২০০ পার হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে কংগ্রেস হাইকমান্ড মনে করা হচ্ছে এই তিনটি দল কখনোই বিজেপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হবে না। তবে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে সোনিয়া গান্ধীর নৈশভোজে রাহুল গান্ধীর না থাকা জল্পনা শুরু হয়েছে। ঘরে-বাইরে বিতর্কের মুখে পড়ে তড়িঘড়ি ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছে কংগ্রেস নেতারা। নৈশভোজে থাকতে না পারার কথা রাহুল আগেই জানিয়েছিলেন বলে কংগ্রেসের তরফে দাবি করা হয়েছে। তবে অন্যরা বলছেন রাহুল হাল ছেড়ে দিয়েছেন।
বিজয় উৎসবকে সামনে রেখে প্রস্তুতি : ফল ঘোষণার পর বিজয়ী দলের জয়োৎসবকে জমকালে করতে বাদ্যকর, ব্যান্ড পার্টি, রঙ ব্যবসায়ী আর মিষ্টি দোকানিরাও প্রস্তুত। বাদ্যকর আর ব্যান্ড পার্টির সদস্যরা গান বাঁধছেন, তাদের যন্ত্র শানিয়ে নিচ্ছেন। একটি ব্যান্ড পার্টির সর্দার নারায়ণ বাদ্যকর বলেন, দিন কয়েক আগে বিজেপি দলের লোকজন তৈরি থাকার জন্য বলে গেছেন। ভোটের পরে তাদের প্রতিবারই ডাক পড়ে বলে জানিয়েছেন আসানসোলের বাদ্যকর পাড়ার প্রদীপ। তিনি বলেন, আমাদের তাসা পার্টিও ভাড়ায় যায়। অন্তত সাত দিনের বায়না পাই। প্রদীপ জানান, এবারও অনেকেই ভাড়ায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে।
বিজয়োল্লাসে ছিটানো হবে রঙ। তাই বাজারে আড়তদাররা নানা রকম রঙের পসরা সাজিয়েছে বসেছেন। বিজয় কুমার মজুদ করেছেন প্রচুর রঙ। তিনি জানান, সবুজ, লাল, গেরুয়া তিন রঙের আবীর মজুদ করেছেন তিনি। কুমার আরও বলেন, সবুজ রেখেছি প্রায় ৩ কুইন্টাল। গেরুয়া ও লাল রেখেছি ২ কুইন্টাল করে।
মিষ্টিমুখ ছাড়া তো আর বিজয়োৎসব হবে না। তাই হাত গুটিয়ে বসে নেই মিষ্টি ব্যবসায়ীরাও। আসানসোলের মিষ্টি বিক্রেতা মহেশচন্দ্র শর্মা বলেন, এখন ভোটও একটা উৎসব। তাই এই উৎসবেও মিষ্টি থাকবে, এটা অবধারিত। তিনি জানান, ভোটের দিন প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ মিষ্টি বিক্রি হয়েছে। ফল ঘোষণার দিনেও বেশি বিক্রি হয়। এবারও তাই বেশি করেই মিষ্টি বানিয়েছেন তিনি।