থ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু

দৈনিক বার্তা-ঢাকা : তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, প্রকৃত গণমাধ্যম কর্মীরা কখনো জঙ্গিবাদ ও স্বৈরাচারের সমর্থক হতে পারেন না। তিনি বলেন, অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে গণমাধ্যম সঠিকভাবে দায়িত্বশীল হলে গণতান্ত্রিক সমাজ অনেক উপকৃত হয়। কিন্তু আমাদের দেশের কিছু গণমাধ্যম কর্মী নীতি-নৈতিকতার কাছে আপোসহীন থাকতে পারেন না। তারা দলবাজির কারণে সত্য প্রকাশে বাধাগ্রস্ত হন। যতদিন আমাদের সংবাদ কর্মীরা দলবাজির বলয় থেকে বের হয়ে আসতে না পারবেন ততদিন সমাজের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পাবে না।

আজ দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুসন্ধানী সাংবাকিতা বিষয়ে এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।  ইউনেস্কো বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট জার্নালিজম এন্ড কমিউনিকেশন (বিসিডিজেসি) যৌথভাবে সাংবাদিকদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ে ‘ইউনেস্কো বাংলাদেশ জার্নালিজম এ্যাওয়ার্ডস-২০১৪’ পুরস্কার প্রদান করে। এর আগে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় ছয়বার এ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ইউনেস্কো বাংলাদেশের কর্মকর্তা কিচি ওয়াইসু, প্রোগ্রাম অফিসার নাঈমা নার্গিস ও জাহিদ হোসেন বক্তৃতা করেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, সমাজের উঁচু পর্যায়ের নেতা-নেত্রীর ঘুষ-দুর্নীতির প্রকৃত সত্য প্রকাশে সংবাদকর্মীদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে হবে। সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতার প্রতি গণমাধ্যম কর্মীদের আরো অধিকতর চর্চাশীল হওয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দেন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু গণমাধ্যম কর্মীদের বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দেশবাসী ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সামনে তুলে ধরার আহবান জানান। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের তথ্য পরিবেশনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সমাজের কল্যাণের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে সংবাদকর্মীরা নীতি-নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে মুখ দেখে সাংবাদিকতা করেন বলে সমাজের সঠিক চিত্র ফুঠে ওঠে না।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া জঙ্গিবাদের সমর্থক আর আমি জঙ্গিবাদবিরোধী এই সত্য কথাটি বলার সাহস থাকতে হবে। একজন বড় নেত্রী কীভাবে ঘোষণা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেন? অথচ সেই প্রশ্ন কোন সাংবাদিক করতে পারেন না। যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থনকারী কোন ব্যক্তি দেশপ্রেমিক নাগরিক হতে পারেন না। তারা পাকিস্তানের সমর্থক।  তথ্যমন্ত্রী বলেন,মিথ্যাচার আর গুজব ছড়ানো গণমাধ্যম কর্মীর কাজ নয়। গুম-খুনের সঠিক চিত্র তুলে ধরাই হচ্ছে প্রকৃত সংবাদকর্মীর দায়িত্ব। মন্ত্রী এমপি আর বড় বড় নেতাদের ধমকের কাছে সংবাদকর্মীরা হার মানেন না।  তিনি বলেন, সংবাদকর্মীরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। তবে এই ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেয়া রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব। বর্তমান সরকার সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বিধানে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।  তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য প্রকাশে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। অবাধ তথ্য প্রকাশের নামে কিছু সংখ্যক গণমাধ্যম নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে মানুষের শোক ও দু:খ আরো বাড়িয়ে দেয়। যা সমাজ মোটেও কামনা করে না।

গত বছর (২০১৩ সাল) সংবাদপত্রে প্রকাশিত ও টেলিভিশনে প্রচারিত শ্রেষ্ঠ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও ছবির জন্য টেলিভিশনে প্রচারিত সেরা প্রতিবেদন হিসেবে ‘কীটনাশকের প্রভাব’ সিরিজ রিপোর্টের জন্য এনটিভি’র সিনিয়র করেসপনডেন্ট আশিকুর রহমান চৌধুরী ও ক্যামেরাপারসন শেখ নজরুর ইসলাম, বিশেষ পুরস্কার হিসেবে ‘ঢাকার লন্ড্রি সার্ভিস’ সিরিজ রিপোর্টের জন্য এটিএন নিউজের চিফ রিপোর্টার মাশহুদুল হক এবং ক্যামেরা পারসন গিয়াসউদ্দিন মামুন, দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘শাপলা চত্বর অভিযান’ ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জন্য যৌথভাবে হায়দার আলী ও মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘দেশসেরা পাঁচ স্কুলে শিবিরের থাবা’ এর জন্য অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য, ‘কারও সন্তান নিখোঁজ, কারও বাবা-মা, ভাই-বোন কিংবা স্বামী বা স্ত্রী-সাভারের বিধ্বস্ত রানা প্লাজা ঘিরে বৃহস্পতিবার ছবি হাতে স্বজনের অপেক্ষায় হাজারো মানুষ’- শিরোনামের ছবির জন্য সমকালের সিনিয়র ফটোসাংবাদিক কাজল হাজরা, বিশেষ পুরস্কার হিসেবে ‘ডেথ অব এ ড্রিম’ শিরোনামের ছবির জন্য ডেইলি স্টার পত্রিকার স্টাফ ফটোগ্রাফার রাশেদ সুমন নগদ ৩০ অথবা ২০ হাজার টাকা, একটি ক্রেস্ট ও একটি সম্মাননাপত্র পান। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ড. গোলাম রগমান বলেন, বাস্তবতার আলোকে বলতে হয় বাংলাদেশের গণমাধ্যম যা খুশি তাই লিখতে ও বলতে পারছে। যা পৃথিবীর অনেক দেশে নেই। আমাদের দেশের গণমাধ্যম কর্মীদের আরো ‘আপডেটেড’ হতে হবে। নীতি-নৈতিকতার মধ্যে থেকে আমাদের দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা করতে হবে।