1দৈনিক বার্তাঃ শেষ পর্যন্ত পুলিশের বাধায় পণ্ড হলো ইন্সটিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সে (আইইবি)বৃহস্পতিবার বিকেলে পূর্বঘোষিত বিএনপির সমাবেশ কর্মসূচি।তবে সমাবেশের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি  নেয়া হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে পুলিশের পক্ষে।

সমাবেশ করতে না পারায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় দলীয়  বৈঠকে আলোচনা করে করণীয় নির্ধারণ এবং কর্মসূচি  ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে নিচ্ছে অনৈতিক ও অবৈধ সরকার।সরকার জনগণের  বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বলেই আজ ভিন্নমত  পোষণকারী বিরোধী দলকে কোন কর্মসূচি করতে দিচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট-এর সামনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। মির্জা ফখরুলের সাথে এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ড. পিয়াস করিম ও জার্মান রাষ্ট্রদূতসহ বিএনপির  কেন্দ্রীয়  নেতৃবৃন্দ।

মির্জা ফখরুল বলেন,  দেশব্যাপী  যেসব বিচার বর্হিভূত গুম খুন হত্যা হয়েছে, সে সব ভিক্টিমদের নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আজ একটি মত বিনিময় করতে চেয়েছিলেন। যেখানে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক এবং বিদেশী কূটনীতিকদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। এ ব্যাপারে দলের পক্ষ  থেকে অনুমতি সাপেক্ষে আবেদন করলেও অনুমতি না দিয়ে বরং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে বাধা দেয়া হয়েছে।দুপুরে আইইবি প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়ে  নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান গ্রহণ করেন ফখরুল।  শেষ পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি না  মেলায় বিকেল  পৌনে চারটার দিকে আইইবি প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন ফখরুল।

এ সময় সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন,এই অবৈধ ও অনৈতিক সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা জনগণকে কথা বলতে দিতে চায় না। তারা জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করছে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে ফখরুলের কথা বলার সময়ই  সেখানে উপস্থিত হন বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক। এ সময় রফিক উল হককে কিছু বলতে অনুরোধ জানান মির্জা ফখরুল।রফিক উল হক বলেন, এখানে  যে সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে তা তো কোনো পার্টি  বেসিসে নয়।  দেশের বর্তমানে  যে অবস্থা তাতে এ নিয়ে কথা বলা সবারই কর্তব্য।পরে মির্জা ফখরুল  নেতাকর্মীদের নিয়ে আইইবি প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।

সারাদেশে খুন, গুম ও অপহরণের প্রতিবাদে নিহত ও অপহৃতদের  পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে আইইবি মিলনায়তনে সমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার  সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিলো।সমাবেশে  দেশের বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো।

সকালে সমাবেশের প্রস্তুতি তদারকি করছিলেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুস সালাম।  বেলা এগারোটার সময় পুলিশ সদস্যরা গিয়ে বিএনপি  নেতাকর্মীদের মিলনায়তন  থেকে  বের করে দেয়। এ সময় পুলিশ মিলনায়তন কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন বলে অভিযোগ করেন সালাম।শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, সম্মেলন করতে প্রশাসনের  ওেকানো অনুমতি বিএনপি নেয়নি। তাই সম্মেলন করতে  দেওয়া হবে না।

এ সময় আইইবির চারপাশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য  মোতায়েন করা হয়।মহানগর পুলিশের শাহবাগ জোনের সিনিয়র এএসপি শিবলী নোমান বলেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন কর্তৃপক্ষ হলরুম বিএনপিকে ভাড়া দিয়েছিলো। কিন্তু পরে তারা ভাড়া বাতিল করে। আমার এখানে উপস্থিত হয়েছি আইন-শৃঙ্খলার  যেন কোনো অবনতি না ঘটে তা নিশ্চিত করতে।

তিনি আরো বলেন, সম্মেলনে মাইক ব্যবহার করতে হলে পুলিশের কাছ  থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু বিএনপি আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি  নেয়নি।দুপুরের দিকে আইইবি প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সমাবেশে বাধা দেয়ায় সরকারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফখরুল বলেন, ইনডোর অনুষ্ঠানে পুলিশের অনুমতি  নেয়ার বিধান  নেই। নিয়ম মেনে কর্তৃপক্ষকে ভাড়ার টাকা  দেয়া হয়েছে। সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু ১১টার সময় এসে তারা জানায় এখানে সমাবেশ করা যাবে না।  জোর করে সবাইকে বের করে দিয়ে মিলনায়তনে তালা লাগিয়ে দিয়েছে।

তিনি এ সময় মিলনায়তন খুলে  দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সমাবেশস্থল খুলে দিন আমরা যেন সময়মতো অনুষ্ঠান শুরু করতে পারি।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন  চৌধুরী অ্যানির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে সমাবেশের অনুমতি নিতে গেছেন বলে এ সময় জানান ফখরুল।তবে  শেষ পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি আর পায়নি বিএনপি। পরে বিকেল  পৌনে চারটার সমাবেশ স্থল ত্যাগ করেন ফখরুল সহ বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি  নেতাকর্মীদের কিছুটা ধাক্কাধাক্কি বাধে।

ফখরুল সহ বিএনপির শীর্ষ নেতারা এ সময় গুলশানে বিএনপির  চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ের উদ্দেশে রওয়ানা হন। এর আগে সকালে পুলিশ এসে কাজ বন্ধ করে  দেয় বলে জানান ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম।

তিনি বলেন, মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে আমাদের সমাবেশ করতে  দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তারা বলছেন, সমাবেশের অনুমতি  নেই।

সালাম জানান, তারা এই সমাবেশের জন্য ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছিলেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকেও কয়েকদিন আগেই চিঠি দেয়া হয়েছিল।এই সমাবেশে বিশিষ্ট নাগরিক, গণমাধ্যমের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, ঢাকায় বিভিন্ন  দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের আমন্ত্রণ জানানো হয় বলে জানান তিনি।

সকাল ১১টায়  থেকে বিএনপির  নেতারা মিলনায়তনে মঞ্চ নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ শুরু করেছিলেন। বেলা ১২টার দিকে মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান এসে বাধা  দেন।

তিনি আয়োজকদের বলেন, এখানে সমাবেশ করার কোনো অনুমতি নেই। আপনারা তাড়াতাড়ি চলে যান। নইলে আমরা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেয়েছেন বলে বিএনপির  নেতাদের বক্তব্য জানানো হলে শিবলী নোমান সাংবাদিকদের বলেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন তাদের ওই অনুমতি বাতিল করেছে।

আর একদিন আগে পুলিশকে বিএনপির পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, এক দিনের নোটিসে এরকম সমাবেশ হতে পারে না।এরপর পুলিশ মিলনায়তনের ফটক বন্ধ করে  দেয়।  সেখানে ব্যাপক পুলিশও মোতায়েন করা হয়।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল,মীর সরফত আলী সপু, আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশীদ হাবিব, মিজানুর রহমান মিলনায়তনের  ভেতরে ছিলেন। তাদের  বের করে  দেয় পুলিশ।খবর পেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে যান।

তবে মিলনায়তনে তালা  দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে শিবলী  নোমান বলেন, পুলিশের কোনো সদস্য ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে তালা দেয়নি। তালা দিয়েছে ইনস্টিটিউশন কর্তৃপক্ষ। ওইখানে পুলিশ তালা   দেওয়ার  কে ?গত ১৯  মে ৫১ হাজার ৭৫০ টাকা দিয়ে সমাবেশের জন্য এই হল ভাড়া  নেয় বিএনপি।