দৈনিক বার্তাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি বহাল আছে বলেই নানা সমালোচনা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার পরও প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ বহাল রয়েছে। তিনি বলেন, ব্যবসা বানিজ্য করা নয় জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নই তার সরকারের লক্ষ্য।
বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে তিনি এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার তাগিদ দেন।বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকালে মৎস ও প্রানীসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় দেশের মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে আরও গবেষণা চালানোর পাশাপশি দেশের সব জলা ধারে মাছ চাষের আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।
মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন,বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা থাকা অবস্থায় আমরা সরকার গঠন করেছিলাম। অনেকেই ভাবতে পারেননি যে, বাংলাদেশের মতো একটি দেশ জিডিপি ৬ ভাগের ওপরে ধরে রাখতে পারবে।আর এবার তো অনেকেই অনেক রকম প্রেডিকশন দিয়েছিলেন। তার জন্য কিছুটা রাজনৈতিক অবস্থাও দায়ী ছিল। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত পরিবেশ খারাপের দিকে যাচ্ছিল । সেজন্য অনেকেই খুব সন্দিহান ছিলেন যে, বাংলাদেশ পারবে কিনা।
আমি কিন্তু খুব আশাবাদী এবং আমি সবসময় একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলি, বলেন শেখ হাসিনা। দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা মিটিয়ে মাছ মাংস বিদেশে রফতানি করে আয় বাড়ানোর তাগিদ দেন এই খাতের সংশ্লিষ্টদের। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫জানুয়ারি নির্বাচনের দেশ খারাপের দিকে যাচ্ছিলো, তাই অনেকে সন্দিহান ছিলো বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারবে কিনা কিন্তু বাংলাদেশ তা পেরেছে। তিনি আরও বলেন, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে এবং দেশের মানুষের গড় আয় ১১৮০ ডলার। খাদ্যে ভেজাল রোধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা খাদ্য দ্রব্যে বিষাক্ত রাসায়নিক মেশায় তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভাবেই অভিযান চলবে। তিনি বলেন, খাদ্যে ফরমালিন একটা মারাত্বক আকার ধারণ করেছে এবং সমস্যা হচ্ছে। ফরমালিন এবং খাদ্যে ভেজাল বিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে বলেই দেশের মানুষ জানতে পারছে বলেও জানান তিনি।মাছের প্রজনন মৌসুমে জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান করতে মৎস ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রনালয়কে তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা ও দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার পরও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে থাকার ব্যাপারটি অনেকে ভাবতে না পারলেও নিজে এ বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, চলতি অর্থবছরে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে উন্নয়নের সারিতে থাকা কয়েকটি দেশের প্রবৃদ্ধি কমলেও গত পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশ ৬ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
উন্নয়নে নানা ধরনের বাধার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কিন্তু একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ, অন্যদিকে আবার মানবসৃষ্ট দুর্যোগের দেশ। এসব অবস্থা মোকাবেলা করে আমি এগিয়ে যেতে পারবো এবং আমরা কিন্তু তা করতে পেরেছি।বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু আয় ১০৪৪ ডলার থেকে বেড়ে ১১৯০ ডলার হয়েছে এবং ২০২১ সালের মধ্যে তা ২০০০ ডলারে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথাও বুধবারই পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চেয়েছি স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ২০২১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় উন্নত, সম্মৃদ্ধ দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। আমরা ইনশাল্লাহ তা পারবো। এ বিশ্বাস আমার আছে।
অর্থনৈতিক অগ্রগতি যেটা আমরা সুচনা করেছি তা কিন্তু অব্যাহত আছে। এতো বাধা বিপত্তির পরও মাথাপিছু আয় বড়েছে, জিডিপি বেড়েছে, মূল্যস্ফীতিও আমরা অনেক কমিয়ে এনেছি। এসময় শেখ হাসিনা দেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতকে আরো উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিভিন্ন পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা দিয়ে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে এ মন্ত্রণালয় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশ্ব বাজারে বিভিন্ন ধরনের মাছ, মাংসসহ হালাল খাদ্য রপ্তানি বাড়ানোর জন্য তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য পণ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন বাজার খোঁজারও আহ্বান জানান তিনি।
একইসঙ্গে দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা বাড়াতে আরো বেশি আমিষ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনেরর পরামর্শ দেন তিনি।এই লক্ষ্যে চরাঞ্চলে মহিষ চাষ বাড়ানো, কালো ছাগল ও ভেড়া খামার বৃদ্ধি করা এবং গভীর সমুদ্র থেকে মৎস্য সংগ্রহ বাড়ানোর কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।এছাড়া প্রজননের সময় ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় যেসব জেলে বেকার থাকেন, ওইসময় তাদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের ভোক্তা প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশী, উভয়ই রয়েছে। দুই ধরনের বাজারের চাহিদা মাথায় রেখেই মৎস্য উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়াতে হবে।মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অংশীদারি হতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মৎস্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, দেশে আমিষের বিপুল চাহিদা আছে। দেশের বাইরেও বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে মাংসের চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন দেশে ৮০ লাখ বাংলাদেশি রয়েছে। আমাদের জাতীয় আয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের অবদান প্রায় ৮ শতাংশ। প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৯০ শতাংশ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপখাত থেকে আসে।এ প্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের আমিষের জোগান দিতে পারলে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করতে পারব বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে দেশে পনির ও ঘি’সহ দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিপণ্য চিংড়ি। আমরা বাগেরহাটে চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করেছি। হিমায়িত মৎস্যপণ্য রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সরকারের কাজে গতি আনতে প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এতে তিনি মন্ত্রণালয় গুলোর বিভিন্ন কাজের খোঁজ-খবর নেন এবং তদারকি করে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা ও পরামর্শ নে প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং তথ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেছেন।