দৈনিক বার্তাঃ দামের ঊর্ধগতিতে যেন নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন মানে চলে আসছে নিম্নগতি। সীমিত আয়ের মানুষকে মিলাতে হচ্ছে ব্যয়ের হিসেব। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ তাদের।নিয়মিত বাজার তদারকি ও টিসিবিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি প্রয়োজনে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে ভর্তুকি দেওয়ার পরামর্শও দেন অনেক ক্রেতা। মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় রাজধানীর পাইকারি বাজারে আসতে শুরু করেছে মৌসুমি ইলিশ। পাশাপাশি সরবরাহ বাড়ায় কিছুটা কম দামেই বিক্রি হচ্ছে অন্য সব ধরণের মাছ।
শুক্রবারের সকালে রাজধানীর পলাশী বাজারটিতে ক্রেতার ভীড় হওয়ার কথা থাকলেও বিক্রেতারা বলছেন, তীব্র গরমের কারণে বাজারে ক্রেতার আনাগোনা কম। এই বাজারে চলতি মৌসুমের প্রায় প্রতিটি সবজি কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও বাজারে আসা ক্রেতাদের অভিযোগ দাম তাদের নাগালের বাইরে।বাজারে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, তাদের যে আয়, এই আয় অনুযায়ী তারা কুলিয়ে ওঠতে পারছেন না। ৫০ টাকার নিচে কোনো তরকারি নেই। ৫০ থেকে ৬০ টাকার নিচে কোনো তরকারি নেই, কোনো সবজি নেই, এটা বলা আর না বলা একই কথা বলেও জানান এক ক্রেতা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে এ দুটি পণ্যের সংকট রয়েছে। তাই দাম বাড়তির দিকে। তবে রমজান সামনে রেখে গত কয়েক মাসে পর্যাপ্ত পরিমাণ ছোলা ও ডাল আমদানি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, গত রমজানের তুলনায় ছোলা ও ডালের দাম কম। এজন্য কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্য দুটির দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে রমজানে ছোলার চাহিদা ৬০ হাজার টন। এছাড়া এ সময় বিভিন্ন ধরনের ডালের চাহিদা প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টন। এর মধ্যে মসুর ডালের চাহিদা প্রায় ৪০ হাজার টনের মতো। গত চার মাসে এ চাহিদার সিংহভাগই আমদানি হয়েছে।টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর অনুযায়ী, পেঁয়াজের এই ঊর্ধ্বমুখী বাজারের প্রভাব আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে, এর পর থেকে দাম কমবে
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে গেছে।ভারতে শিলাবৃষ্টিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখানে এক মাস ধরে দাম চড়া। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বাজারেও। কেননা এখন দেশে পেঁয়াজের বাজার পুরোটাই ভারতনির্ভর। আগামী জুনের শেষ দিকে শুরু হওয়া রমজানকে সামনে রেখে দাম বাড়ার শঙ্কা এড়াতে আবারও বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি পরামর্শ ব্যবসায়ীদের। যদিও ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দাম বৃদ্ধির প্রভাব আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
খাতুনগঞ্জের কাঁচাপণ্য ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ১৫ দিন ধরে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। কিন্তু এক সপ্তাহে কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে। ভারতে দাম বেড়ে দেশে আমদানি কমে যাওয়ায় বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ সংকট চলছে। এতে করে দাম বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই আড়তে ভারতীয় নাসিক জাতের সবচেয়ে ভালো পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ২৬ টাকায়। আর মাঝারি মানের পেঁয়াজ ২৪ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এসব পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১৮ থেকে ২০ টাকায়। আরেক ব্যবসায়ী বলছেন, জুন মাসের শেষের দিকে রমজান উপলক্ষে চাহিদা বাড়ায় দাম বাড়তে পারে। তাই আগের মতো চীন, পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে হবে এখনই।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ভারতে এখন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ মৌসুম চলছে, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভালো ফলনও হয়েছে। কিন্তু বিগত মার্চ মাসে একাধিক বৃষ্টিপাত ও শিলাবৃষ্টির কারণে ক্ষেতেই ফলনের ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির পরিমাণ মোট উৎপাদনের ৪০ শতাংশ বলে এক জরিপে জানিয়েছে দেশটির কৃষি বিভাগ। দেশে শুধু রবি মৌসুমে পেঁয়াজের চাষ হলেও ভারতে বিভিন্ন মৌসুমে পেঁয়াজের চাষ হয়। গ্রীষ্মকালীন এই পেঁয়াজ এপ্রিল থেকে গুদামজাত করে অক্টোবরে আরেক মৌসুমের ফলন না আসা পর্যন্ত বিক্রি চলে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মজুদ স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ শতাংশ কমেছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, ভারতে এবার এক কোটি ৯০ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু মার্চ-এপিপ্রলর আগাম বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ায় উৎপাদনে ধস নামে। পিম্পলগাঁওয়ে অ্যাগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কমিটির পরিচালক অতুল শাহ বলেন, ক্ষতির কারণে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে মজুদের প্রবণতা বেড়েছে। এই কারণে বাজারে সরবরাহ সংকটের কারণে দাম উর্ধ্বমুখী রয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর অনুযায়ী, পেঁয়াজের এই উর্ধ্বমুখী বাজারের প্রভাব আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে এর পর থেকে দাম কমবে। এরই মধ্যে বাজারে পেঁয়াজ কুইন্টালপ্রতি এক হাজার ৩০০ রুপি পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।এশিয়ার বৃহত্তম পেঁয়াজের বাজার লাসাগাঁওয়ে ১০ এপ্রিল কুইন্টালপ্রতি পেঁয়াজের দাম ছিল ৭০৫ ভারতীয় রুপি। আর ২০ এপ্রিল বেড়ে কুইন্টাল এক হাজার ১১ রুপিতে বিক্রি হয়েছে। মে মাসে তা আরো বেড়ে এক হাজার ৫০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। আর মহারাষ্ট্রের পিম্পলগাঁওয়ে কুইন্টাল ৮০১ রুপির পেঁয়াজ ৯২১ রুপিতে বিক্রি হয়েছে। ইয়োলাতে ৫৭৫ রুপির পেঁয়াজ ৭৫০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিগত বছরে ভারতীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম কুইন্টালপ্রতি ছয় হাজার রুপিতে পৌঁছে রেকর্ড ছুঁয়েছিল, খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছিল কেজি ১০০ রুপি। বাজারে কিছুটা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগী আর ছোট মাছের দাম।এছাড়াও, কাঁচা সবজির দাম অনেকটা স্থিতিশীল থাকলেও বিক্রেতারা বলছেন তীব্র গরমের কারণে ক্রেতা কম। রাজধানীর পলাশী বাজার ঘুরে দেখা গেছে এসব চিত্র।
এখানে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ২৮ থেকে ৩০, আদা ১শ ৫০, রশুন ৬০ থেকে ৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে ফার্মের মুরগীর ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকা হালি। তবে একদিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগীর দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা।
এ বিষয়ে একজন বিক্রেতা বলেন, গরমে মুরগি মরে যায়, আমদানি কম। তাই দাম বেড়ে গেছে।
মাছ বিক্রেতারা জানালেন, বেড়েছে দেশী ছোট মাছের দাম। এখানে প্রতিকেজি মলা বিক্রি হচ্ছে ৩শ’ ৪০ টাকা, চিংড়ি ৫শ ৫০ টাকা , শিং ৪শ’ থেকে ৫শ টাকায়।এ বিষয়ে এক মাছ বিক্রেতা সময় সংবাদকে বলেন, তেলাপিয়া, কাতল, রুই-এগুলো নিয়ন্ত্রণেই আছে। ছোট মাছটার দাম একটু বেশি।এ বিষয়ে একজন ক্রেতা বলেন, সরবরাহটা একটু কম। তুলনামুলকভাবে দামটা একটু বেশি।
রাজধানীর কাঁচা বাজারগুলোত সবজি বা তরিতরকারির দামে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। তবে কেজি প্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে মাছের দাম। গরু ও খাসীর মাংস কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও টাউন হল বাজার ঘুরে দেখা গেছে করলা কেজি প্রতি ২৫ টাকা, জালি কুমড়া ২৫-৩০ টাকা, বেগুন ২৫-৩০ টাকা, ভেন্ডি ২৫-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পটল কেজিপ্রতি ৩০ টাকা এবং কাকরোল ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কয়েক সপ্তাহ ধরে মাছের বাজারে চলা স্থবিরতা কেটে যাওয়ায় আড়তদার আর পাইকার উভয়পক্ষই বেশ সন্তুষ্ট।শুক্রবার সোয়ারিঘাটের পাইকারি মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র।
গ্রীষ্মের দাবদাহে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় দাম বাড়তে শুরু করেছে অনেক সবজির। বাজারে হঠাৎ করেই সবজির এই দাম বৃদ্ধি ভাবিয়ে তুলছে ক্রেতাদের। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজ, আলু, ও রসুনের দাম বাড়তে শুরু করেছে। কিন্তু নতুন ধান আসায় কমতে শুরু করেছে চালের দাম। এছাড়া গত সপ্তাহের তুলনায় মুরগি, ডিম, আদা ও কিছু সবজির দাম কমেছে।গত সপ্তাহে প্রতি পাল্লা পেঁয়াজ ১০০ টাকা বিক্রি হলেও শুক্রবার তা বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়।
দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় বৈশাখের খররোদে পুড়ে যাচ্ছে মাঠঘাট আর সবজি ক্ষেত। ফলে আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন না সবজি চাষীরা। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজধানীর খুচরা বাজারে। সবজি বিক্রেতারা জানান, অনেক দিন বৃষ্টি হয় না তো একারনে সবজির দাম বাড়তি। যেখানে আগে ১০ মণ উৎপাদন হত এখন সেখানে হচ্ছে ২ মণ।
গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে গ্রীষ্মকালীন সবজির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও বেড়েছে পেঁয়াজ ও আদার দাম। প্রতি কেজি পেঁয়াজ গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।শুক্রবার রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে এবং ক্রেতা বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য।বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজ কেজি প্রতি ১০ টাকা বেড়ে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে। চলতি সপ্তাহে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা দরে।
পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় এই দাম বেড়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ নয় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে।
এদিকে বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, প্রতিকেজি দেশী শসা ৪০ টাকা, আমদানি শসা ৩০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৪০ টাকা, গোল বেগুন ৬০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, ঝিঙ্গা ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, আলু ১৮ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, উস্তা ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা, কচুর লতি ৫০ টাকা, ৪০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা ও পটল ৫০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লেবু গত সপ্তাহের মতোই ৩০ থেকে ৩৫ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, প্রতিটি ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, লাউ ৩০ থেকে ৫০ টাকা, জালি কুমড়া ২৫ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে এবং প্রতিহালি কাঁচকলা ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।এছাড়া, বাজারে লালশাক, ডাটা, পুঁইশাকের আঁটি ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এবং লেটুস পাতা প্রতিটি ১৫ টাকা, পুদিনাপাতা ১০০ গ্রাম ২০ টাকা, ধনেপাতা প্রতি ২৫০ গ্রাম ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।তবে বাজারে মাংসের দাম আগের মতোই রয়েছে।