27-05-14 (1)দৈনিক বার্তাঃ ফেনীতে চেয়ারম্যান একরাম হত্যা মামলার প্রধান আসামী বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী মিনারকে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। বুধবার বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে ফেনী মডেল থানা থেকে তাকে আদালতে আনা হয়। বিকেল ৫টার দিকে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খায়রুল আমীনের আদালতে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হলে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। রিমান্ডকালীন সময়ে কোনো প্রকার নির্যাতন না করে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন আদালত। সেই সঙ্গে তার ওষুধপত্র নিয়মিত সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এদিকে রিমান্ড অবেদন বাতিল করে মিনার চৌধুরীর পক্ষে একাধিক আইনজীবী তার জামিন আবেদন করেন। আইনজীবীরা জানায়,হত্যাকাণ্ডে জড়িত ও পরিকল্পনাকারীদের নাম ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। মিনার চৌধুরীর সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে আইনজীবীরা বলেন, তাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশত মামলায় আসামি করা হয়েছে।

মাহতাব উদ্দিন আহমদ চৌধুরী মিনার বিগত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন। গত মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে মিনারকে ঢাকার কচুক্ষেত এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

ফেনীর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি সার্কেল) মো. সামছুল আলম সরকার জানায়, মিনার চৌধুরীতে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতসাড়ে তিনটায় ফেনী আনা হয়।

অপরদিকে মঙ্গলবার দুপুরে শহরতলীর সোনাপুর গ্রাম থেকে গ্রেফতারকৃত ফেনী সদরের কাজীরবাগ ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রবকে আদালতে উপস্থিত করে রিমান্ড চাওয়া হলে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

এছাড়া জাহিদ চৌধুরীর অস্ত্রসহ বিরিঞ্চি থেকে গ্রেফতার সজিবকে দুই দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।

এদি,ে একরাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জিয়াউর রহমান বাপ্পি (৩০) নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

গ বুধবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে ফেনী-মাইজদী সড়কের সিলোনীয়া বাজার সংলগ্ন এএইচএম রহমান ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত জিয়াউর রহমান বিরিঞ্চি এলাকার মো. হানিফের ছেলে।

গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশেদ খান জানান, পালিয়ে যাওয়ার সময় ওই এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ওসি জানান, একরাম হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দু’টি মোটরসাইকেল ও একটি মাইক্রোবাস হত্যাকাণ্ডের দিন রাতেই বাপ্পির বাড়ির সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে বাপ্পি পলাতক ছিল।

অন্যদিকে, ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার চেয়্যারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি একরামুল হক একরাম হত্যার প্রতিবাদে ফুলগাজীর বন্দুয়ায় সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। বুধবার সকাল ৮টা থেকে সোয়া ১১টা পর্যন্ত বন্দুয়ায় সড়ক অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী। পরে তারা ওই সড়কে মানববন্ধন করে।

এসময় এলাকাবাসী একরাম হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিজাম হাজারীর ফাঁসি এবং ফেনীর পুলিশ সুপার পরিতোষ ঘোষ ও ফেনী সদও থানার ওসি মাহাবুব মোর্শেদের বদলির দাবীতে শ্লোগান দেয়। তারা আসামিদের গ্রেফতার ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের ফাঁসির দাবি জানান।

পরে দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাকি আসামিদের গ্রেফতার ও দোষী ব্যক্তিদের সঠিক বিচারের আশ্বাস দিলে এলাকাবাসী অবরোধ ও মানববন্ধন শেষ করে সড়ক থেকে সরে যায়।অবরোধের সময় সকাল ৮টা থেকে সোয়া ১১টা পর্যন্ত জেলা শহরের সঙ্গে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার যোগাযোগ বন্ধ ছিল।

উল্লেখ্য, গত ২০ মে ফেনী শহরের একাডেমি এলাকার বিলাসী সিনেমা হলের সামনে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হককে তার গাড়িতে প্রথমে গুলি করে এবং পরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

ওই রাতেই নিহতের বড় ভাই জিয়াউল হক সেলিম ফেনী মডেল থানায় মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী মিনারকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এ হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে এবং বিভিন্ন মেয়াদে গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।