দৈনিক বার্তা – জ্জ সেনা অভিযানে পালিয়েছে রাশিয়াপন্থী বিদ্রোহীরা : দাবি কিয়েভের জ্জ বিদ্রোহীদের ক্রামাতোরস্কে সরিয়ে নেয়া হয়েছে : দাবি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার

বিদ্রোহীদের ঘাঁটিতে ইউক্রেনের পতাকা

ইউক্রেনের রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ‘শক্তিশালী ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত সস্নোভিয়ানস্কে দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানের পর শহরটি ছেড়ে পালিয়ে গেছে বিদ্রোহীরা। শনিবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরসেন আভাকভ এমন দাবি করেছেন। সেইসঙ্গে দখলকৃত সস্নোভিয়ানস্কের সরকারি ভবনের ওপর দেশটির জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য সামরিক বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পিওতর পোরোশেঙ্কো। তবে শহরটির ওপর ইউক্রেন বাহিনীর ঠিক কী পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তা পরিষ্কার নয়। ১০ দিনের অস্ত্রবিরতি শেষ হওয়ার পরই বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক অবস্থানে যায় সেনাবাহিনী। সংবাদসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, ভয়েস অব রাশিয়া

দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরসেন আভাকভ শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দাবি করেন, বিপুলসংখ্যক বিদ্রোহী সস্নোভিয়ানস্ক ছেড়েছে। তিনি আরো লেখেন, ‘সংঘর্ষে ইউক্রেনবাহিনী তাদের ঘিরে ফেলে এবং তারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। এছাড়া স্বঘোষিত দোনেৎস্ক সরকারের সামরিক কমান্ডার ইগোর স্ট্রেলকভও পালিয়েছেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।’ উল্লেখ্য, ইগোর স্ট্রেলকভের আসল নাম ইগোর গিরকিন। ইউক্রেন সরকার ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাকে রাশিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলে দাবি করে। প্রেসিডেন্ট পেরোশেঙ্কোর ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, তিনি সস্নোভিয়ানস্ক শহরের কাউন্সিল অফিসের ওপর জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছেন। এতে আরো উল্লেখ করা হয়, সেনা অভিযানে বিদ্রোহীদের একটি ট্যাঙ্ক ও চারটি সাঁজোয়া যান ধ্বংস হয়েছে।

রাশিয়ার সংবাদসংস্থা আরআইএ নভোস্তির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, শনিবার দোনেৎস্ক বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। উল্লেখ্য, বিমানবন্দরটির নিয়ন্ত্রণ ছিল ইউক্রেন সেনাবাহিনীর হাতে। ধারণা করা হচ্ছে, সস্নোভিয়ানস্ক থেকে সরে যাওয়ার সময় বিদ্রোহীরা বিমানবন্দরটির কাছে এসে শক্তি বৃদ্ধি করে ইউক্রেন বাহিনীর কাছ থেকে এর দখল নেয়ার চেষ্টা চালায়।  তবে বিচ্ছিন্নতাবাদী ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’র (ডিপিআর) মুখপাত্র অ্যান্দ্রেই পারগিন সাংবাদিকদের জানান, বিদ্রোহীদের সস্নোভিয়ানস্ক থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এক বিদ্রোহী কমান্ডারকে উদ্ধিৃতি দিয়ে তিনি জানান, দোনেৎস্কের উত্তরে ক্রামাতোরস্ক শহরে তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এদিন সস্নোভিয়ানস্কের পুলিশ স্টেশনে আটক অপহৃতরা মুক্ত হওয়ার পর বিদ্রোহীদের ক্রামাতোরস্কের দিকে যাওয়ার ঘটনা নিশ্চিত করেছেন। রাশিয়ার সংবাদসংস্থা ‘ইন্টারফ্যাক্স’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, দোনেৎস্কর আর্টেমিভস্ক শহরে অবস্থিত ডিপিআর হেডকোয়ার্টার গুড়িয়ে দিয়েছে ইউক্রেন বাহিনী। এর আগে ইউক্রেনের সরকার-বিদ্রোহীদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি পুনর্বহালে সপ্তাহজুড়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালায় জার্মানি, ফ্রান্স, আমেরিকা, রাশিয়া ও ইউক্রেন। পেরোশেঙ্কো জানান, আটককৃতদের মুক্তি ও সীমান্ত সরকারি বাহিনীর হাতে ছেড়ে দিলে তিনি যুদ্ধবিরতিতে ফিরে যেতে চান। রুশপন্থীদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে শনিবার একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এছাড়া বিদ্রোহীদের শান্তি আলোচনায় বসাতে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনের কাছে অনুরোধ করা হয়। উত্তরে তিনি বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর হার বৃদ্ধি ও ইউক্রেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে তার দেশে উদ্বাস্তু প্রবেশের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

গত ১ জুলাই যুদ্ধবিরতির সমাপ্তি ঘোষণা করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেরোশেঙ্কো। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই সেনাবাহিনী রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তবর্তী লুহানস্ক অঞ্চলে অভিযান শুরু করে। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনবাহিনী সস্নোভিয়ানস্কের কাছে নিকোলায়েভকা গ্রাম ঘিরে ফেলার পর শনিবার শহরটি থেকে বিদ্রোহীদের অপসারণের খবর প্রকাশিত হলো। দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের বিদ্রোহীরা ফেব্রুয়ারিতে নিযুক্ত কিয়েভের নতুন সরকারের বৈধতায় অস্বীকৃত জানিয়ে আসছে। এরপর তারা স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা ও পৃথক সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গঠন করে। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে সরকার-বিদ্রোহী সহিংসতায় ২০০ সেনা, ৮০০ বিদ্রোহী ও ২৫০ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, ইউক্রেনের ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি চুক্তি সই বাতিল করাকে কেন্দ্র করে রাজধানী কিয়েভজুড়ে শুরু হয় সরকারবিরোধী আন্দোলন। এরপর মার্চে ক্রিমিয়া গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়। এপ্রিলে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা স্বাধীনতা ঘোষণা করে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট পেরোশেঙ্কো ২৭ জুন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর আগে পশ্চিমাদের সঙ্গে তিনি রাজনৈতিক সহযোগিতার বেশ কয়েকটি চুক্তিতেও আবদ্ধ হন।