has

দৈনিক বার্তা- স্টাফ রিপোর্টার : দেশের প্রধান তিন দলের প্রধানরা প্রায় একই সঙ্গে বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। এই সফরকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা-পর্যালোচনা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, শীর্ষ এই তিন নেতার সফরে রাজনীতিতে ঘটতে পারে নতুন মেরুকরণ। আগামীকাল সোমবার আন্তর্জাতিক গার্ল সামিট সম্মেলনে যোগ দিতে তিন দিনের সফরে লন্ডন যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘ শিশু সংস্থা ইউনিসেফের উদ্যোগে বিশ্বেও প্রথমবারের মত লন্ডনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এদিকে গতকাল শনিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য সউদী আরবে গেছেন। আর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আজ রোববার যাচ্ছেন ভারতে।

লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আগামীকাল ২১ জুলাই সোমবার সকাল ১০টায় বিমানের বিজি-০০৬ ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী ও তার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল। স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৩টায় লন্ডন হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার। প্রতিনিধি দলে থাকছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম মাহমুদ আলী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকিসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা। এছাড়াও সাংবাদিকদের একটি দলও প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন। মেয়েদের বিরুদ্ধে সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধে তার নিজের ভাবনা, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে তার সরকারের চলমান প্রচেষ্টার কথা ওই সম্মেলনে তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে গতিশীল পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ‘নারীর খৎনা প্রতিরোধ এবং নারীর জোরপূর্বক ও বাল্যবিবাহ নির্মূল’-কে মূল প্রতিপাদ্য ধরে বিশ্বে প্রথমবারের মতো গার্ল সামিট আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলনের হোস্ট ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং কো-হোস্ট হিসেবে রয়েছে জাতিসংঘ শিশু সংস্থা ইউনিসেফ এবং যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়। গার্ল সামিট আয়োজনের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, খৎনা এবং জোর করে ও বাল্যবিয়ে নারীর অধিকার খর্ব করে ও তাদের বিকাশে ‘প্রতিবন্ধকতা’সৃষ্টি করে। নারীর খৎনা মূলত আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে থাকলেও বাল্য ও জোর করে বিয়ে বিভিন্ন দেশেই রয়েছে। বিশ্বে এখন ২০ থেকে ২৪ বছরের যে নারীরা রয়েছে তাদের এক তৃতীয়াংশেরই বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর বয়সের আগে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কারণে নারীর খৎনা, জোর করে বিয়ে ও বাল্যবিয়ে কমতে শুরু করেছে এবং এই সচেতনতা আরো বাড়ানোর লক্ষ্যে এই সম্মেলন আয়োজন করা হচ্ছে। এছাড়া তিন দিনের সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার যেকোনো সময় বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মিলিত হওয়ারও কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় ব্রিটেন-বাংলাদেশ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় প্রাধান্য পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট পক্ষ। সম্মেলন শেষে মঙ্গলবার বিকেলেই যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে যোগ দিবেন প্রধানমন্ত্রী। গত জানুয়ারিতে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর এটাই শেখ হাসিনার প্রথম যুক্তরাজ্য সফর। আগামী বৃহস্পতিবার দেশে ফেরবেন। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য সফর সামনে রেখে অপতৎপরতা শুরু করেছে সেখানকার বিএনপি-জামায়াত পন্থিরা। সেখানে বিক্ষোভ দেখানোরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। শেখ হাসিনাকে যাতে ব্রিটেনে স্বাগত জানানো না হয় সে লক্ষ্যে গত শুক্রবার বিএনপি’র পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলন করে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। এছাড়াও পুলিশের অনুমতি পেলে প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিরুদ্ধে প্রবাসীদের সাথে নিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হতে পারে।

সউদীতে বেগম খালেদা জিয়া

পবিত্র ওমরাহ হজ পালনে সউদী আরব গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এদিকে আজ রোববার লন্ডন থেকে সউদী আরবে আসবেন তারেক রহমান। সেখানে মা ও ছেলের মধ্যে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়। সূত্রগুলো জানায়, পবিত্র ওমরাহ পালনে শনিবার রাত ৯টা ৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ইকে-৫৮৫ বিমানযোগে সউদী আরবের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন তিনি। বেগম খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে তার পরিবারের সদস্য ছাড়াও চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল রয়েছেন। তিনি সেখানে ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে রমজানের দিনগুলো কাটাবেন। পবিত্র কা’বা শরিফে ওমরাহ করার পাশাপাশি ইতেকাফ করবেন বেগম খালেদা জিয়া। আগামী ২৬ রমজান রাতে তার ঢাকা ফেরার কথা রয়েছে। এদিকে, প্রায় সাত বছর পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পুরো পরিবার মিলিত হতে যাচ্ছে সেখানে। খালেদা জিয়া সউদী আরব পৌঁছার পরের দিন অথবা লন্ডনে চিকিৎসাধীন বড় ছেলে তারেক রহমান তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সউদী আরব আসবেন। তার সঙ্গে থাকবেন স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও একমাত্র কন্যা জাইমা রহমান। এছাড়াও মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বিএনপি প্রধানের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও তাদের দুই কন্যা নিয়ে সউদী আরবে মায়ের সঙ্গে মিলিত হবেন। প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ৭ মার্চ গ্রেফতার হন তারেক রহমান। একই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে গ্রেফতার হন আরাফাত রহমান কোকো। ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরদিন চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান কোকো। সেই বছরেরই ১১ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান। সেই থেকে তারেক লন্ডনে স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে বসবাস করছেন। অন্যদিকে, একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থাইল্যান্ড থেকে মালয়েশিয়ায় চলে আসেন আরাফাত রহমান কোকো। সেই থেকে এখানেই তার অবস্থান। তবে ২০১২ সালে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুরে গেলে সেখানে কোকোর সঙ্গে তার দেখা হয়। পরে একই বছরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডনে তারেক রহমানেরও সাক্ষাত হয়। তবে ১/১১’র পর একত্রে পুরো পরিবারের আর দেখা হয়নি। সবশেষ গত মাসে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুরে যাচ্ছেন এবং সেখানে পুরো পরিবারের সাক্ষাৎ হবে গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশ হলেও তা বাস্তবে হয়নি। কারণ, তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) সিঙ্গাপুরেই যাননি।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ভারত সফরে

ছয় দিনের সফরে হঠাৎ করেই ভারতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আজ রোববার তিনি ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। ফিরবেন আগামী ২৫ জুলাই। এরশাদের ব্যক্তিগত সহকারী ও দলের কোষাধ্যক্ষ মেজর (অব.) খালেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। হুসেইন মুহম্ম্দ এরশাদের সফরে সঙ্গে হিসেবে যাচ্ছেন তার শিশু পুত্র এরিখ এরশাদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি ও তার ব্যক্তিগত সহকারী আবদুল ওহাব। উঠবেন ভারতের কুচবিহারে অবস্থিত পৈতৃক আদি নিবাসে। দলের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, ভারতে ব্যক্তিগত সফরের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। এ সময় জাতীয় পার্টির পক্ষে জনমত গঠন এবং ভারতের বর্তমান সরকারের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করতে পারেন এরশাদ। এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গেও তার দেখা সাক্ষাতের কথা রয়েছে। প্রসঙ্গত, ভারতের নরেন্দ্র মোদির নতুন সরকার আমলে সাবেক রাষ্ট্রপতির হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এটিই প্রথম সফর।