samim_134032দৈনিকবার্তা, ঢাকা, ১২ আগস্ট: নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভির কথায় মনে হচ্ছে তিনি কাউকে বাঁচাতে চাচ্ছেন। মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দেয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। সাত খুনের প্রধান আসামি নূর হোসেনকে মেয়র আইভী অবৈধ সুবিধা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে শামীম ওসমান সচিবালয়ে হাজির হন। এর পাঁচ মিনিট পরই তিনি তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হন। এর আগে সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করলেও তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে ভিতরে টুকে পড়েন। শামীম ওসমান বলেন, ঘটনার এক ঘন্টার মধ্যেই বিষয়টি জানতে পারি। এসময় আমি বলেছিলাম- এর সাথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জড়িত থাকতে পারেন। পরবর্তীতে তা সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। এ ঘটনার সাথে ১১ র‌্যাব কর্মকর্তা জড়িত বলে গনমাধ্যমে জানতে পারি। তিনি আরো বলেন, আমি এক ঘন্টার মধ্যে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এক ঘণ্টার মধ্যে ঘটনা জানি নাই। আমি আধঘণ্টার মধ্যে ঘটনা জেনেছি। আমাকে সাধারণ মানুষ জানিয়েছে। আমি বলেছি তাকে কারা উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছে সেটা আমি জেনেছি।
সাত খুনের সাথে শামীম ওসমান জড়িত বলে অভিযোগ করে আসছেন নারায়ণগঞ্জের মেয়র আইভী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামীম ওসমান বলেন, আইভী বলেছে গডফাদার জড়িত। আমার নাম বলেনি। তবে পরোক্ষভাবে আমাকে দায়ী করেছে আইভী। ঠিক যেই মুহুর্তে আমি বলেছিলাম র‌্যাব জড়িত। কিন্তু আইভী বলেছেন র‌্যাব করেনি। কিন্তু আমার কথাই ঠিক হয়েছে। আমি আইভীকে ঐ লেভেলের মানুষ মনে করি না। তাকে আমি গুরুত্ব দেইনি। সে একটা দুর্নীতিবাজ মহিলা।
নারায়ণগঞ্জের এ সাংসদ বলেন, আমি বলবো তদন্ত কমিটির উচিত আইভীকে উঠিয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা যে তার কাছে কি কি তথ্য প্রমাণ আছে। পৃথিবীর সকল সভ্য দেশে এমনটাই হয়। সিটি করপোরেশনের শালিস কমিটির সভাপতি নূর হোসেনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন আইভী। এছাড়া অবৈধ স্থাপনা কমিটি উচ্ছ্বেদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তাকে। তাহলে নূর হোসেন কার লোক? নূর হোসেন তো আইভীর লোক। তাকে সকল অবৈধ সুবিধা দিয়েছে মেয়র।
শামীম ওসমান আরো বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের নায়কদের নারায়ণগঞ্জে বেশি আনাগোনা। তাদের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ করছেন মেয়র। তিনি বলেন, আমার যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে কালই নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনতাম। কারণ নূর হোসেন ঘটনার সাথে কোনো না কোনোভাবে জড়িত লোক মরে আমার আর গডফাদার হই আমি।
আগের দিন সোমবার একই সময়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত কমিটি। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার দাবি জানান। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নারায়ণগঞ্জের গডফাদাররাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ওই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। এই ‘গডফাদার’ কারা জানতে চাইলে আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জে কারা ‘গডফাদার’ তা দেশের সবাই জানে। এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে বলার কিছু নেই।
গত ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহূত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজন। এরপর ৩০ এপ্রিল ছয়জনের এবং ১ মে আরেকজনের লাশ ভেসে ওঠে শীতলক্ষ্যায়। এ ঘটনায় আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ র‌্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে হাইকোর্টের নির্দেশে ৭ মে শাহজাহান আলী মোল্লাকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর পর র‌্যাব-১১-এর সাবেক তিন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়। তারা কারাগারে রয়েছেন। আর নূর হোসেন ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছেন।