মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

দৈনিকবার্তা-ঢাকা,১সেপ্টেম্বর : দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে জনগণের সমর্থন দরকার ,পাশাপাশি বিএনপির আন্দোলনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও দর্শন জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে৷ নিজেদের মধ্যে যত বিভেদ আছে সেগুলো ভুলে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে ক্ষমতা থেকে এই দানব সরকারকে হটাতে হবে৷ সোমবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ৩৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে সোমবার বিকেলে রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন৷

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে আজ আইনের শাসন, গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার বলতে কিছুই নেই৷ জনগণের সঙ্গে এ সরকার ফ্যাসিবাদী আচরণ করছে৷ সরকার সংবাদপত্রের কন্ঠরোধ করতে জাতীয় সমপ্রচার নীতিমালা ও বিচারপতিদের কন্ঠরোধ করতে অভিসংশনের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছে৷ ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব যে বাকশাল কায়েম করেছিল সেই কায়দায় সরকার দেশ চালাচ্ছে৷ একই কায়দায় বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করতে চায়৷ সরকার সবকিছুই নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়৷তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে বিভেদ দ্বন্দ্ব ভুলে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে৷ চেপে বসা দানব সরকারে হটাতে হবে৷

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপিকে বিনাশ করা যাবে না৷ কারণ প্রতিষ্ঠার পর থকে বিএনপি’র বিরুদ্ধে বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে৷ বিএনপি কেবল জিয়াউর রহমানের দল নয়, এটা সারা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের দল৷ তিনি বলেন, মামলা দিয়ে বিএনপিকে আন্দোলন থেকে পিছু হটানোর কথা যারা চিন্তা করছেন তারা আহাম্মকের সঙ্গে বাস করছেন৷ আজ যারা বলে বেড়াচ্ছেন বিএনপি’র দুঃসময় যাচ্ছে; তাদের একটা কথা স্পষ্ট করে বলে রাখতে চাই, বিএনপি নয় দুঃসময় যাচ্ছে বাংলাদেশের৷

মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়ে সকলের অংশগ্রহণে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে৷ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ তার বক্তব্যে বলেন, এই সরকার জবাবদিহিতা রক্ষা করতে চায় না৷ যেকোনো উপায়ে তারা ক্ষমতায় বসতে চায়৷ এজন্য তারা সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে যাচ্ছে৷ সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, অপহরণ, গুম, খুন ও গুলি করে সরকার বিরোধী আন্দোলন ঠেকানো যাবে না৷ যে কোনো অবস্থায় বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে যাবে৷তিনি বলেন, আমরা অহিংস আন্দোলন করবো৷ আমাদের আন্দোলনে কোনো বাধা দেবেন না৷ আমরা হরতাল দেবো৷ আর সেই হরতালও হবে শান্তিপূর্ণ ও অহিংস৷তিনি বলেন, ১/১১ এর ভূত এখনো জনগণের মাথা থেকে নামেনি৷ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমরা সংগঠন নিয়ে কাজ করছি৷ যারা ১৮ বছর ধরে কমিটিতে প্রভুত্ব কায়েম করছেন, তাদের বলছি প্রভুত্ব ছাড়তে হবে৷ দলের জন্য কাজ করুন৷ দল আপনাকে অবশ্যই জায়গা দেবে৷

আলোচনা ও আন্দোলন একসঙ্গে চলতে পারে না মন্তব্য করে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, দেশের জনগণ এই সরকারের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে৷ কিন্তু বিএনপি সঠিক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না৷গয়েশ্বর বলেন, বিএনপি একদিকে মনে করে দলকে সংগঠিত করবে অন্যদিকে মনে করে আন্দোলন করতে হবে৷ সিদ্ধান্তহীনতার কারণেই বিগত দিনে দেশের জনগণ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল তখন আমরা যারা ঢাকায় অবস্থান করেছিলাম তারা সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারিনি৷ আর তাই আজো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে৷ তিনি বলেন, জনগণ এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত৷ এখন আমাদের কাজ হচ্ছে নেতৃত্ব রাজপথ থেকে নিয়ে আসা৷ কেননা সঠিক নেতৃত্ব বেছে নিতে ব্যর্থ হলে আমাদের আরো বড় খেসারত দিতে হবে৷গয়েশ্বর বলেন, বিএনপি’র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অতীতেও হয়েছে বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে৷ সেই সকল ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে হবে৷ তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে৷

এ সময় তিনি দলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেন, বিগত দিনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি’র আলোচনার বিষয়বস্তু যদি এমন ছিল যে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় নির্বাচন হবে এবং পরবর্তীতে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচন হবে৷ তবে তা কেন গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ না করে আন্দোলন বন্ধ করে দেওয়া হলো৷আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর ভর করে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদের শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. পিয়াস করিম৷ তিনি বলেন,স্বৈরাচার জেগে উঠেছে৷ এই সরকারকে শান্তিতে থাকতে দেওয়া যাবে না৷ তাই হল রুমের স্লোগান না দিয়ে শেখ হাসিনার সরকারকে উত্‍খাত করতে রাজপথে স্লোগান ছড়িয়ে দিতে হবে৷

এ সময় বিএনপি’র ভারপাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজ উদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক ড. মাহফুজ উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন৷এছাড়া বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান,চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, নগর বিএনপি’র সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, যুব বিষয়ক সম্পাদক মোয়াজ্জোম হোসেন আলাল, মহিলা দলের সভাপতি নূরে আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী উপস্থিত ছিলেন৷