27bbf0a1e4bcd963cea2d087719ee34d-Japan-PM

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৭ সেপ্টেম্বর: বাংলাদেশের সঙ্গে পুরনো বন্ধুতা আরও জোরদার করে ফিরে গেলেন বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে৷ মাত্র সাড়ে ২২ ঘন্টার সফর শেষ করে রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় এক বিশেষ বিমানে করে কলম্বোর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন শিনজো ও তার সফরসঙ্গীরা৷ এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আবেকে বিদায় জানান৷ উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রসচিব শহিদুল হকও৷জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিনজো অ্যাবে বাংলাদেশে তাঁর দু’দিনের সফর শেষে রোববার শ্রীলংকার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন৷

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরে জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান৷এসময় জাপানের রাষ্ট্রদূত সিরো সাদোশিমা বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন৷ একটি বিশেষ বিমানে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফর সঙ্গীরা বিমানবন্দর ছেড়ে যান৷অ্যাবে তাঁর এই সফরকে ঢাকা-টোকিও সম্পর্কে একটি ‘বিশেষ বছর’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এর মধ্য দিয়ে উভয় দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের এক নতুন অধ্যায়ের শুরু হলো৷

১৪ বছরের মধ্যে এটাই জাপানের কোন প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টোকিও সফরের মাত্র ৪ মাস পর এ সফর অনুষ্ঠিত হয়৷ ১৫০ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে অ্যাবে ও তাঁর স্ত্রী আকি অ্যাবে বন্ধুপ্রতীম দু’দেশের মধ্য অংশিদারিত্বের সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগের বিশেষ গুরম্নত্বারোপের লৰ্যে শনিবার বিকেলে দু’দিনের সফরে ঢাকা আসেন৷জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে বৈঠক করেন৷তিনি বঙ্গভবনে রাস্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাঙ্াত করেন৷

এছাড়া সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া হোটেল সোনারগাঁওয়ের অ্যাবের সঙ্গে সাক্ষাত করেন৷সিনজো অ্যাবে বাংলাদেশ জাপান অর্থনৈতিক ফোরামে ভাষণ দেন৷ হোটেল সোনার গাঁওয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে৷ বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড ফেডারেমন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কর্মার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) ও জাপান এঙ্টার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেমন (জেএব) তিনি ঢাকা পৌঁছার পরপরই ১৯৭১ সাল মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতি সৌধ যান৷

এরপর অ্যাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধ স্মৃতি যাদুঘর এবং ঢাকা ত্যাগের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন৷মাত্র ২২ ঘন্টার সফর, এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতার সাক্ষাত্‍৷ তারপরও ঢাকা ছাড়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ঢু দিয়ে গেলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে৷ রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় শিনজো আবে সস্ত্রীক বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছানোর পর লাল গালিচায় হেঁটে চারুকলা অনুষদে প্রবেশ করেন৷ তাকে স্বাগত জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক৷

জাপানি প্রধানমন্ত্রী চারুকলার দুটি গ্যালারিতে প্রদর্শিত বিভিন্ন শিল্পকর্ম ঘুরে দেখেন৷ এরমধ্যে একটিতে ছিল জাপানের বৃত্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশি শিল্পীদের চিত্রকর্ম; অন্যটিতে চারুকলার জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের শিল্পকর্ম৷

এসব শিল্পকর্মে বাংলাদেশের বিভিন্ন লোকজ ঐতিহ্য তুলে ধরা হয় বলে জানান উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক৷তিনি বলেন, বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, শিল্প-সংস্কৃতিতে আগ্রহ থেকেই চারুকলা অনুষদে জাপানি প্রধানমন্ত্রীর এই আগমন৷ জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিল্পকলা অনেক পছন্দ করেন৷ তার বিশেষ আগ্রহের কারণেই এই পরিদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে৷মাত্র ২০ মিনিটের এই পরিদর্শনের এক ফাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানসূচক ক্রেস্ট এবং চারুকলা অনুষদের পক্ষ থেকে একটি চিত্রকর্ম উপহার দেয়া হয়৷

অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য সহিদ আখতার হুসাইন (প্রশাসন) ও নাসরিন আহমেদ (শিক্ষা), কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবুল বারক আলভী এ সময় উপস্থিত ছিলেন৷সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে চারুকলা অনুষদ ত্যাগ করে সাড়ে ১০টায় কলম্বোর উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন আবে৷এ সফরে বাংলাদেশ ও জাপানের বন্ধুতা আরো জোরদার হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা৷

একাত্তরে বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই অর্থনৈতিক উন্নয়নে অব্যাহত জোরালো সহযোগিতা দিয়ে আসছে জাপান৷ এবারের সফরে বাংলাদেশকে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনবর্্যক্ত করেন শিনজো আবে৷

বাংলাদেশও জাপানের অকুন্ঠ সহযোগিতার কথা বিবেচনা করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদ থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে জাপানকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে৷ ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার আওতায় ইতোমধ্যে ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ইয়েন দেওয়া হয়েছে৷ বাকিটা আগামী চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে দেওয়া হবে বলে জানান শিনজো আবে৷

ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে এদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে চায় জাপান৷ এজন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে বাংলাদেশকে তাগিদ দেওয়া হয়৷এ সহযোগিতার মূল লক্ষ্য বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি) উদ্যোগ৷ এ প্রতিশ্রুতি এখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বলেই জোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন আবে৷ এছাড়া জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) গঠনের উদ্যোগ নেওয়ায় বাংলাদেশকে স্বাগত জানান আবে৷ বিগ-বি ( বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট) হিসেবে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তিনি৷

শনিবার যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের হাতে উপহার হিসেবে দেওয়া রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ছবিযুক্ত দু’টি অ্যালবাম তুলে দেন৷

পাশাপাশি জাপানের প্রধানমন্ত্রীও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে এ সময় সে দেশের বিশেষ মুদ্রা উপহার-স্মারক হিসেবে তুলে দেন, যে মুদ্রায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি খচিত রয়েছে৷
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে সমন্বিত অংশিদারিত্ব কর্মসূচি ও বিগ-বি উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন৷

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদের নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রার্থিতা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, কয়েক বছর আগে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে ২০১৬-১৭ মেয্#২৪৯২;াদের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদের জন্য আমরা নতুন করে প্রার্থিতা ঘোষণা করি৷ ২০১১ সালে আমাদের দীর্ঘদিনের অকৃত্রিম বন্ধু জাপানও একই গ্রুপ থেকে তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করে৷ দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা এবং গোষ্ঠীসংহতি বজায় রাখার জন্য বহুপক্ষীয় ফোরামগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি৷

মুক্তিযুদ্ধে জাপান সরকার এবং সে দেশের জনগণের অকুন্ঠ সমর্থন ও সহমর্মিতা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জাপানের অব্যাহত ও বলিষ্ঠ সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় গোষ্ঠীসংহতি ও ঐক্যের স্বার্থে আমি এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় গ্রুপ থেকে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী পদে জাপানের প্রার্থিতার পক্ষে বাংলাদেশের সমর্থন ঘোষণা করছি৷ একই সঙ্গে জাপানের পক্ষে বাংলাদেশের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিচ্ছি৷এর আগে দুপুরে সোনারগাঁ হোটেলে দেওয়া বক্তৃতায় শিনজো আবে জাপানের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উত্‍সাহিত করবেন বলে জানান৷ বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ককে ভাই- বোনের সম্পর্ক উল্লেখ করে শিনজো আরও বলেন, বাণিজ্য বাড়াতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদেরই ভূমিকা রাখতে হবে৷

জাপানের অর্থনীতিকে চাঙা করতে তার আবেনোমিকস প্রয়োগে বাংলাদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ বঙ্গোপসাগরের তীরে বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা ( বে অফ বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট-বিগ বি)প্রতিষ্ঠাই বাংলাদেশকে সহযোগিতার অগ্রাধিকারে থাকবে বলে জানান জাপানের প্রধানমন্ত্রী৷দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে একযোগে কাজ করার গুরুত্ব দিয়ে এক্ষেত্রে নিজের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী৷এছাড়া সামুদ্রিক সম্পদ টেকসই উপায়ে ব্যবহারেও সম্মত হয়েছেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী৷ এ প্রেক্ষাপটে ব্লু -ইকোনমি বা সাগর অর্থনীতির বিকাশে একসঙ্গে কাজ করার কথা বলা হয়৷