09-09-14-PM_WHO South-East Asia Region Health Ministers meeting-7

দৈনিকবার্তা-ঢাকা : বিশ্বের স্বাস্থ্য সমস্যার উন্নতি করতে হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি করতে হবে জানিয়ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এশিয়া অঞ্চলের ১১টি দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবি্লউএইচও) ৩২তম সভা এবং আঞ্চলিক পরিষদের ৬৭তম সম্মেলনের উদ্বোধন শেষে তিনি এ কথা বলেন৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলেই রোগ ও মৃতু্যর হার সবচেয়ে বেশি, জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করতে ও উন্নয়নকে টেকসই করতে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষাই উত্তম ব্যবস্থা৷ শেখ হাসিনা বলেন, এ অঞ্চলের রোগ ও মৃতু্যর হার সবচেয়ে বেশি৷ সবাই মিলে এ অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে পারলে বিশ্বে এ খাতে ব্যাপক উন্নতি হবে৷ এ অঞ্চলের স্বাস্থ্যমন্ত্রীগণ এসব চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন আছেন৷ ডাবি্লউএইচও এ গুরুত্বপূর্ণসভায় আপনারা এর ফলপ্রসূ খুঁজে বের করতে পারবেন বলে বিশ্বাস করি৷

এমডিজি-৫ অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে এ দাবি করে তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্যখাতে সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে সরকার জনগণের প্রতি অঙ্গীকার পূরণ করে চলেছে৷এ সময় স্বাস্থ্যখাতে বিএনপি-জামাত সরকারের নীতির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গঠন করে স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছি৷ দেশের হাসপাতালগুলোতে বেডের সংখ্যা, চিকিত্‍সকের সংখ্যা, নার্সের সংখ্যা এবং চিকিত্‍সা যন্ত্রপাতি শুল্কমুক্ত করা হয়েছে৷ ফলে বেসরকারি খাত স্বাস্থ্যসেবায় এগিয়ে এসেছে৷

তিনি আরো বলেন, গ্রামাঞ্চলে প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ ২০০১ সালে নেয়া পরবর্তী সরকার এ ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়ায় মানুষ চিকিত্‍সা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল সেটা আবার চালু করা হয়েছে৷তিনি বলেন, ৩ দিনব্যাপী এ সম্মেলনে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রাধান্য পাবে যার সুপারিশমালায় বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থন থাকবে৷

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জনস্বাস্থ্যের ওপরে বিরূপ প্রভাবগুলো বিষয়ে আলোচনা হবেও বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব ধরনের উদ্যোগ ও কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা পালনে তাঁর সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা প্রকাশ করেছেন৷

প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, চলমান সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি কার্যকর ও শক্তিশালী সংস্থায় পরিণত হবে এবং যা সংস্থাটিকে স্বাস্থ্যসেবায় আরো বেশি সহায়তা দিতে সৰম করে তুলবে৷

দেশের জনশক্তিকে মানবসম্পদে পরিণত করা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা হচ্ছে সর্বোত্তম পন্থা একথা উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সব দেশ এক সঙ্গে কাজ করলে এ লৰ্য অর্জন সম্ভব৷স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. হর্ষবর্ধন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. মার্গারেট চান, দৰিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পুনাম ক্ষেত্রাপাল বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন৷

এতে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ সচিব এম এম নিয়াজউদ্দিন স্বাগত বক্তৃতা করেন৷আয়োজক বাংলাদেশের প্রতিনিধি ছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের ১০ দেশের প্রায় ২শ’ প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দেন৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য জনগণের সার্বিক শানত্মি ও আনন্দের প্রধানতম পূর্বশর্ত হওয়ায় তাঁর সরকার স্বাস্থ্যখাত এবং দেশব্যাপী ব্যাপকভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা ও এমডিজি অর্জনে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে৷ এসঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ হওয়ায় দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালের ৪০ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২৫ শতাংশে হয়েছে৷

তিনি বলেন, একজন সুস্থ মা একটি সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে পারে এবং যা একটি সুস্থ ও সবল জাতি গঠনের পথ নির্মাতা- এই প্রত্যয় থেকে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে৷ শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের সূচনালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্যের ওপর অগ্রাধিকার দিয়েছে ৷ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বসত্ম দেশ পুনর্গঠনের পাশাপাশি প্রত্যেক থানায় ১০ শয্যার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়৷

কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর দেশের স্বাস্থ্যখাত দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে তাঁর সরকার ক্ষমতায় এলে এ খাত আবারো পুনরুজ্জীবিত হয়৷তিনি বলেন, পল্লী অঞ্চলে প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে৷ এ পরিকল্পনার আওতায় ১৩ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপিত হয়েছে৷ এতে চিকিত্‍সক ও স্বাস্থ্যকমর্ী নিয়োগসহ ইন্টারনেট সার্ভিস, বিনামূল্যে ওষুধ, ই-হেলথ এবং টেলিমেডিসিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার পর্যাপ্ত মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, ডেন্টাল কলেজ, হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, নার্সিং কলেজ ও নার্সিং ট্রেনিং কলেজ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা বাসত্মবায়ন করছে৷ প্রত্যেক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও বিভাগে ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে৷দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সম্মেলন ঢাকায় আহ্বান করায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলের প্রত্যেক দেশের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা প্রায়ই অভিন্ন৷এ অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন ধরনের ব্যাধিতে আক্রানত্মের ঝুঁকিতে ভোগে এবং এখানে প্রজনন হার বেশি৷

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন যে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীবর্গ ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ চলমান বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় সমস্যাগুলো সমাধানের এ সুযোগ কাজে লাগাবেন৷

বৈঠকে অটিজম ও মেটাবলিক ডিজঅর্ডার বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে এ বিষয়ে সনত্মোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈঠক থেকে যে সুপারিশ আসবে তিনি এতে দ্ব্যর্থহীন সমর্থন জানাবেন৷ শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যখাতে তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরে জনগণকে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে তাঁর সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন৷তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ডবিলউএইচও’র বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন অংশীদার ও বন্ধুপ্রতীম দেশগুলো আমাদের ব্যাপক সহযোগিতা দিয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি স্বাস্থ্যবান জাতি গঠনে তাঁর সরকার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়েছে৷তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষা, জেন্ডার সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন ও পরিবার পরিকল্পনার জন্য সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনস্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টির প্রতি গুরম্নত্ব দিয়ে তাঁর সরকার খাদ্যপণ্যে রাসায়নিক, অর্গানিক ম্যাটার, অ্যানজাইম ও হরমোন মেলানো প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে৷ এদিকে, সফররত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মহাপরিচালক ড. মার্গারেট চান স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশ এ খাতে বাংলাদেশকে অনুসরণ করতে পারে৷

মলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দৰিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সভা উদ্বোধনের পর হোটেল সোনারগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্‍কালে ড. চান একথা বলেন৷প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সভা ঢাকায় আয়োজন করায় ড. চানকে ধন্যবাদ জানান৷ এ সময় তিনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য কর্মসূচি বাসত্মবায়নে হু’র সমর্থনের কথা স্মরণ করেন৷

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন৷ঢাকায় হু’র সভা আয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ায় ড. চান প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান৷ড. চান নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবায় বাংলাদেশের সফলতার প্রশংসা করে বলেন, এ অঞ্চলের জনগণ স্বাস্থ্যখাতে শেখ হাসিনা গুরম্নত্বপূর্ণ অবদানকে স্মরণে রাখবে৷

তিনি বলেন, এ অঞ্চলের সকল দেশ স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশকে অনুসরণ করতে পারে৷ড. চান ইবোলা ভাইরাসের বিষয়ে সতর্ক থাকতে এবং এ ভাইরাস মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানান৷এ সময় অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মো. নাসিম এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক উপস্থিত ছিলেন৷