image_131576.gournadi photo..

দৈনিকবার্তা-গৌরনদী,২১ সেপ্টেম্বর: পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা না ভেবে বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপু উপজেলার বিভিন্ন জলা ভূমি ও কৃষি জমি থেকে অব্যাহতভাবে চলছে পরিবেশ বান্ধব শামুক নিধন৷ সংগৃহীত শামুকের খোলসের মধ্যের নরম অংশ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন চিংড়ি ঘেরে মাছের প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছে মালিকরা৷ নির্বিচারে শামুক নিধনের ফলে পরিবেশ হারাচ্ছে স্বাভাবিক ভারসাম্য আর জমিতে পড়ছে এর বিরূপ প্রভাব৷

জানা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি কৃষি নির্ভর এলাকা বরিশাল৷ এ এলাকায় রয়েছে বিস্তীর্ণ প্ল্ল-াবিত কৃষি জমি৷ এলাকার জমির অধিকাংশই বৈশাখ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত পানিতে নিমজ্জিত থাকে৷ এসব জলাভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় শামুক৷ শামুক একটি নিরীহ জলজ প্রাণী হওয়ায় সহজেই তা ধরা যায় বলে এলাকার শিশু কিশোর ও নারী-পুরুষরা অহরহ ধরে বিক্রি করছে৷ শামুক সংগ্রহকারী জরিনা বেগম, সাইফুল ইসলাম, হরিপদ গাইন জানান, গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর, বাগিশের পাড়, ডুমুরিয়া, দক্ষিণ মাদ্রা, আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার, বাকাল, আস্কর, বাগধা, কোদালধোয়া, বাশাইল, বাটরা, বাহাদুরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষি জলাভূমি ও বিল থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫ টন শামুক সংগ্রহ করা হচ্ছে৷ বর্ষা মৌসুমে শামুক বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহর পাশাপাশি অতিরিক্ত আয়ের পথ বেছে নিয়েছেন ওই সব এলাকার অনেকেই৷

ঘের মলিকের লোকজন স্থানীয়দে সহায়তায় সকাল ও বিকেলে নৌকায় করে গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে শামুক ক্রয় করে তা বিভিন্ন মোকাম ও ঘের মালিকদের কাছে বিক্রি করে৷ বর্তমানে বাটরা ও রামশীল শামুকের হাট বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে৷ এখানে প্রতি প্রতি কেজি শামুক বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ২০ টাকায়৷ ব্যবসায়ীরা এসব শামুক কিনে বাগেরহাট-খুলনাসহ বিভিন্ন মোকাম ও মাছের ঘের মালিকদের কাছে বিক্রি করে৷ এভাবে বর্ষা মৌসুমের আষাঢ় মাস থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত চলে শামুক কেনা বেচা৷ শামুক আহরণ ও কেনাবেচার মধ্যে ফড়িয়া থেকে শুরু করে আহরণকারীদের দাদন দিয়ে থাকে চিংড়িঘের ও মোকামের মালিকরা৷ প্রতিদিন ছোট ছোট নৌকায় করে শামুক বিক্রি করতে আসে স্কুল পড়ুয়া অভাবী কিশোর কিশোরিরা৷

তারা সকাল বিকেলে শামুক আহরণ করে৷ কারণ রোদের সময় শামুক পানির নিচের অংশে চলে যায়৷ শামুক ব্যবসার সাথে জড়িত ফরিয়ারা সরাসরি চিংড়ি ঘের মালিকদের কাছে শামুক বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা লাভ করে৷ অপর শামুক আহরণকারী জুনায়েত হাওলাদার, শফিকুর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা শামুক বিক্রি করে ৫০ থেকে ১০০ টাকা আয় করি৷ পূঁজি না খাটিয়ে শামুক আহরণ করা যায় বলে অনেকেই এখন শামুক আহরণ করছে৷ আগে যেখানে এক নৌকা শামুক আহরণ করা যেত এখন সেখানে ১০ থেকে ১৫ কেজি শামুক আহরণ করাই কষ্ট হচ্ছে৷ কারণ, আগের তুলনায় আহরহ শামুক দেখতে পাওয়া যায়না৷’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিংড়িঘের মালিক এ প্রতিনিধিকে জানান, তৈরি ফিস ফিড অপেক্ষা শামুক সুলভ ও মাছের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে তারা এলাকায় শামুক ব্যবসায়িদের দাদন দিয়ে শামুক কিনে থাকেন৷ বরিশাল জেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রমেন্দ্র নাথ বাড়ৈ বলেন, ‘শামুক পরিবেশ তথা কৃষির ক্ষেত্রে বেশ উপকারী৷ এলাকার দরিদ্ররা বর্ষা মৌসুমে শামুক আহরণ করে থাকে, তারা জানেনা যে এটা পরিবেশের জন্য কত ক্ষতিকর৷ শামুক কৃষি জমিতে ফসল বিনষ্টকারী বিভিন্ন পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফসল সুরক্ষা করে৷ এ জন্য শামুক নিধন না করে বরং শামুক চাষের প্রয়োজন৷ এতে পরিবেশের ভারসাম্য সুরক্ষিত থাকবে৷