ঢাকঢোল ও শঙ্খধ্বনি দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিসর্জন

দৈনিকবার্তা-ঢাকা,৪ অক্টোবর : মহালয়ার মধ্য দিয়ে দশ দিন আগে যে উত্‍সবের শুরু হয়েছিল, ঢাকের বাদ্যে, সিঁদুর খেলায় তা শেষ হচ্ছে শনিবার৷ দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় শারদীয় উত্‍সব দুর্গা পূজা৷শনিবার বিকেল থেকে রাজধানীর সদরঘাট এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিসর্জন শুরু হয় এবং সন্ধ্যায় তা অব্যাহত রয়েছে৷

সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ ট্রাকে করে প্রতিমা আনা হয়েছে৷ কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুরা এ বিসর্জনে অংশ নিচ্ছেন৷ এর সঙ্গে ঢাকঢোল ও কাঁসার ঘন্টা এবং শঙ্খধ্বনি দেওয়া হয়৷বিসর্জনের সময় ‘দুর্গা মা কী, জয়’, ‘আসছে বছর আবার হবে’ বলে ধ্বনি দেওয়া হয়৷এখনো প্রতিমাবাহী ট্রাক সদরঘাট এলাকায় আসছে৷ সেই সঙ্গে এলাকায় ভক্তদের আগমন বেড়েই চলেছে৷

এর আগে বিকেল চারটার দিকে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির এলাকা থেকে প্রতিমাবাহী ট্রাকের শোভাযাত্রা শুরু হয়৷অনেকেই ট্রাকে, ছোট ছোট যানবাহনে করে মায়ের প্রতিমা নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদিক্ষণ করেন৷ ঢাক-ঢোল,কাঁসার বাজনার সঙ্গে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গানের মিউজিকের শব্দ আর ভক্তদের উল্লাসধ্বনিতে রাজধানীর সড়ক মুখরিত হয়ে ওঠে৷শনিবার দুপুরে রাজধানীর বনানী, পলাশীর মোড়, শাহবাগ, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে শোভাযাত্রা করেন দেবীর ভক্তরা৷ বিভিন্ন সড়কের বিভিন্ন মোড়ে প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রার অপেক্ষায় অনেককে দাঁড়িয়েও থাকতে দেখা গেছে৷ দেবী দুর্গাকে বিদায় দেওয়ার জন্য শেষ প্রস্তুতি হিসেবে রাজধানীর প্রায় সব মন্দির প্রাঙ্গণেই দেখা মিলেছে নানা কর্মসূচি উদযাপনের দৃশ্য৷ শেষবারের মতো মাকে দর্শন, পূজা করার পাশাপাশি বিদায় দেওয়ার জন্য পূজামণ্ডপগুলিতে ভিড় জমান ভক্তরা৷

নারীরা দেবীর ললাটের সিঁদুর আপন ললাটে এঁকে নেন৷ আগামী শরতে আবার বাঙালি হিন্দুর ঘরে ঘরে মা দুর্গা ফিরে আসবেন, সে কামনায় থাকবেন ভক্তরা৷এর আগে মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি সূত্র জানায়, রাজধানী ও আশেপাশে প্রতিগুলো বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও আশুলিয়ার কাছের নদীগুলিতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে৷ এছাড়া পূজামণ্ডপের কাছে পুকুর ও জলাশয়েও প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে৷ বাংলাদেশ পূজামণ্ডপ উদযাপন কমিটির সভাপতি কাজল দেবনাথ জানিয়েছিলেন, রাজধানীতে এবার মোট ২২১টি পূজামণ্ডপ হয়েছে৷এছাড়া সারাদেশে ২৮ হাজার ৪৮৭টি পূজামণ্ডপে এবার পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও জানান তিনি৷

হাজার হাজার ভক্তের উপস্থিতিতে ঢাকের শব্দের সঙ্গে কাঁসার ঘন্টা বাজিয়ে নৌকাযোগে প্রতিমাগুলো নদীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এবারের শারদীয় দুর্গোত্‍সব৷এদিকে, বিচ্ছিন্নভাবে ৩টা ৪৫ মিনিটে নিউস্কাটন পূজা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বীণ স্মৃতি ঘাটে প্রথম প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়৷ প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাঙালির সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উত্‍সবের সমাপ্তি ঘটছে এদিন৷সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, শনিবার বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী ফিরে যাচ্ছেন কৈলাসে স্বামীর ঘরে৷ তিনি এক বছর পর আবার আসবেন পিতৃগৃহ এই ধরণীতে৷হিন্দু পঞ্জিকা মতে, এবার দেবী এসেছেন নৌকায় চড়ে, ফিরছেন দোলায় (পালকিতে)৷

শনিবার দুপুর সোয়া ২টায় বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটের বিনাস্মৃতি স্নানঘাটে সূত্রাপুরের আরএম দাস রোডের একটি মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়৷বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ বলেন, সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়েছে৷রাজধানীর প্রধান পূজা উদযাপন কেন্দ্র ঢাকেশ্বরীর পূজামণ্ডপ থেকে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে প্রতিমা বিসর্জনের যাত্রা শুরু হয় ৷এবছর সারা দেশে প্রায় ২৯ হাজার প্রতিমা এবং ঢাকায় ২১১টি প্রতিমা বিসর্জন করা হচ্ছে৷ লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আব্দুস সালাম জানান, প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়ছে৷ পুলিশের পাশাপাশি র্যাবেরও টহল রয়েছে৷ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির প্রতিনিধিরা জানান, মূলত ‘দর্পণ বিসর্জনের’ মাধ্যমে সকালেই দেবীর শাস্ত্রীয় বিসর্জন সম্পন্ন হয়৷ মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে প্রতমা থেকে ঘটে এবং ঘট থেকে আবার ভক্তের হৃদয়ে ‘মাকে’ নিয়ে আসাকে বিসর্জন বলে৷

রাজধানীর অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন হয় সদরঘাটে বুড়িগঙ্গা নদীতে৷ এর আগেই নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিমা জড়ো করা হতে থাকে পলাশী মোড়ে৷শঙ্খ আর উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাক-ঢোলের সনাতনি বাদ্যের সঙ্গে আধুনিক উচ্চস্বরের সাউন্ড সিস্টেমে দেবী বন্দনার গানের মধ্য দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক দিয়ে কয়েক হাজার মানুষের এ শোভাযাত্রার সময় বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয় যানজটের৷ পলাশী থেকে পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বুড়িগঙ্গা তীরে শেষ হয় শোভাযাত্রা৷ প্রতিমা ঘাটে নিয়ে আসার পর শেষবারের মতো ধুপধুনো নিয়ে আরতিতে মেতে ওঠেন ভক্তকূল৷ শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্যদিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেয়া হয়৷