ebola

দৈনিকবার্তা-গৌরনদী,১১অক্টোবর ২০১৪ : প্রানঘাতি ইবোলা ভাইরাস কবলিত পশ্চিম আফ্রিকার লাইবেরিয়া থেকে ছয় প্রবাসী বুধ ও বৃহস্পতিবার বরিশালের গৌরনদী ও পাশ্ববর্তি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছেন৷ ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে তাদের ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন না হওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে৷

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, লাইবেরিয়ার বং জেলার ভাঙ্গা বাজারে বসবাসকারী বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাঙ্গিলা গ্রামের রুহুল আমিন সরদার (৩৫) ও তার শা্যালক লাইবেরিয়ার নিম্বা জেলার ঘান্তা এলাকায় বসবাসকারী মাদারীপুরেরর কালকিনি উপজেলার আটিপাড়া (ভাংগা ব্রিজ) গ্রামের ইলিয়াস হাওলাদারের স্ত্রী সেতু বেগম (২৫), শ্যালকের পুত্র তাছরিন সনেট হাওলাদার (৮), কন্যা ঐষী (২), কালকিনি সদরের মাহাবুব সরদার (৩০) ও খুলনার ভুলু ওরফে দুলু (৪২) ইবোলা ভাইরাসের ভয়ে বুধবার ও বৃহস্পতিবার সকালে স্বদেশে ফিরে আসেন৷ ওইদিন সন্ধায় তারা সবাই গ্রামের নিজ বাড়িতে পৌছেছেন৷ ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের মেডিকেল টিমের দায়িত্বহীনতার কারণে তাদের ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন না হওয়ায় ভয়ে পাড়া প্রতিবেশীরা ও আত্মীয় স্বজনরা তাদের সাথে দেখা সাক্ষাত করছেন না৷

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরসহ কোন বিমান বন্দরে মেডিকেল পরীক্ষা না হওয়ার কথা স্বীকার করে সেতু বেগম ও রুহুল আমিন মুঠোফোনে কালের কন্ঠকে বলেন, ‘লাইবেরিয়ায় ইবোলা ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাসের ভয়ে আগস্ট মাস থেকে দেশে ফিরে আসার চেষ্টা করি৷ কিন্তু দেশটি সতর্কাবস্থাজারি করলে লাইবেরিয়ার সাথে অন্য দেশের বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকায় আমরা দেশে ফিরে আসতে পারেননি৷ বহু কষ্টে বিমানের ট্রানজিট টিকিট সংগ্রহ করে গত ৪ অক্টোবর আমরা চার জন লাইবেরিয়া থেকে বিমানে মরক্কো গমন করি৷ সেখান থেকে আলজেরিয়া হয়ে কাতারের দোহায় যাই৷ অতপর কাতার কিউ-৬৩৪ নম্বর বিমানে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৫টায় আমরা ঢাকায় পৌছাই৷ লাইবেরিয়া থেকে মরক্কো পর্যন্ত বিমানের সহযাত্রী কালকিনির মাহাবুব সরদার ও খুলনার ভুলু নামের দুই জন বাংলাদেশী যাত্রী মরক্কো থেকে দুবাই হয়ে দুবাই বিমানে বুধবার বাংলাদেশে পৌছে৷৷ শুধু বাংলাদেশের বিমান বন্দরে নয় কোন বিমান বন্দরেই তাদের ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন হয়নি বলে তারা জানান৷

রুহুল আমিন জানান, কর্ম সংস্থানের উদ্দেশ্যে গত তিন বছর পূবে লাইবেরিয়ায় গমন করেন৷ লাইবেরিয়ার বিভিন্ন স্থানে প্রায় দুই শতাধিক বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছে৷ এর মধ্যে গৌরনদী ও কালকিনি এলাকার রয়েছেন ১২ জন৷ গত ২ মাস আগে পশ্চিম আফ্রিকার লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিয়নসহ কয়েকটি দেশে ইবোলা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে৷ এতে ২ সহস্রাধিক লোক মারা গেছে৷ এর মধ্যে লাইবেরিয়ায় মারা গেছে প্রায় ৯০০ মানুষ৷ লাইবেরিয়ায় এ রোগটি মহামারি আকার ধারন করায় দেশটির সরকার গত আগষ্ট মাসের প্রথম থেকে শতর্কাবস্থাজারি করে৷ ওই দেশের সাথে সারা বিশ্বের বিমান যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়৷ ফলে বিপাকে পড়েন বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমিকরা৷ কাজ-কর্ম বন্ধ থাকায় তারা বাসায়বন্দি জীবন যাপন করেন৷ পা্রনের ভয়ে বাইরে বের হতে পারছেননা, দেশেও ফিরতে পারছেননা৷ এ কারণে তাদের স্বজনরা মহা দুচিন্তাায় পড়েছেন৷ লাইবেরিয়া প্রবাসী গৌরনদীর বাথর্ী গ্রামের তারেক বেপারী মুঠোফোনে বলেন, চাকুরি করার আশায় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তিনি টুরিষ্ট ভিসায় লাইবেরিয়ায় আসেন৷ ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে নিম্বা জেলার ঘান্তা এলাকায় বসবাস করে, সে চাকুরীর সন্ধান করছেন৷ এখনও সে চাকুরি পাননি৷ এদিকে দেশটির সর্বত্র প্রাণঘাতী ইবোলা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কে তার দিন কাটছে৷ প্রানের ভয়ে এখন সে বাসার বাইরে বের হচ্ছেন না৷ তারেক আরো জানান, এ রোগ ছড়িয়ে পড়ায় দেশটির অনেক লোক এ রোগে মারা গেছে৷ তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য তার মা তানজিলা বেগম বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে কোন জবাব পাননি৷ এলাকাবাসীর অভিযোগ করে বলেন, ঢাকা শাহজালাল বিমান বন্দরে লাইবেরিয়া থেকে আগত লোকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছেনা৷ বাঙ্গিলা গ্রামের সরোয়ার আলম, রেশমা বেগম এ প্রসঙ্গে বলেন, ইবোলার ব্যাপরে সরকার কোন শতর্কতা অবলম্বণ না করায় এবং ফেরত আসা লোকজনের মধ্যে এ রোগ ছড়িয়ে আসে কিনা তা নিয়ে আমরা আতঙ্কে আছি৷’

গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকতর্া ডা. মোসলেম উদ্দিন ডাক্তারী পরিক্ষার ব্যাপারে বলেন, ‘এব্যাপারে সিভিল সার্জনের সাথে কথা হয়েছে৷ তার নিদের্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে৷