hasina+khaleda

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ নভেম্বর: সংলাপ ও মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে সরকারকে কঠিন চাপে ফেলার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন ২০ দলীয় জোট নেতারা৷ তারই পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আন্দোলন ঠেকাতে হার্ডলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার বা আওয়ামী লীগ৷সরকার ও আওয়ামী লীগের সকল বাধা উপেক্ষা করে সরকারকে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে চায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট৷ ২০ দলীয় জোট নেতারা দাবি করছেন, এই সরকার দেশকে ধ্বংস করছে৷ তাই দেশের মানুষ এখন মধ্যবর্তী নির্বাচন চায়৷ সরকারকে এ দাবি মানতে বাধ্য করা হবে৷

রাজধানী ঢাকাকে ঘিরেই সরকার বিরোধী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি৷ দলটির পরবতর্ী কর্মসূচি হবে ঢাকা কেন্দ্রীক৷ সে লক্ষে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ধারাবহিক বৈঠক করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন৷ নিদলর্ীয় সরকারের অধীনে নতুন নিবার্চনে ডিসেম্বরে সরকারকে চূড়ান্ত সময়সীমা বেধে দিতে পারেন ২০ দল৷ নিদিষ্ট সময় সীমার মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে সমাধান না হলে জানুয়ারিতে ঢাকা কেন্দ্রীক আন্দোলনের ছক কষছেন খালেদা জিয়া৷দেশ ব্যাপী চলমান গণ সংযোগ শেষে আগামী মাসের শেষে ঢাকায় সমাবেশ করার নীতিগত সিন্ধান্ত রয়েছে বিএনপি৷ ওই সমাবেশ থেকে সরকারকে সংলাপের জন্য চূড়ান্ত আলটিমেটাম দেবেন খালেদা ৷ ঐ সমাবেশে বাধা দেয়া হলে সংবাদ সন্মেলনের কওে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন খালেদা ৷ দলের একটি বিশেস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে৷

দলীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, সরকার সময়সীমা না মানলে ঢাকার সমাবেশ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন ২০ দলীয় জোটকে সঙ্গে নিয়ে গণ পথযাত্রা, গণকারফিউ , স্বেচ্ছায় কারবরণ ,হরতাল অবরোধ ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন৷ আগামী ২৯ নভেম্বর কুমিল্লায় সমাবেশের মাধ্যমে খালেদা তার দেশ ব্যাপী গণ কর্মসূচি শেষ করবেন৷ এছাড়া তিনি চট্রগ্রাম বিভাগসহ আরো দুটি সমাবেশে তিনি অংশ গ্রহণ করতে পারেন৷নাম প্রকাশে অনি্চছুক বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, এবার বিএনপি দীর্ঘমেয়াদী আন্দালনের পরিবর্তে ১০ থেকে ১৫ দিনের শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলে ইতিবাচক ফল আনার চেষ্টা করবে৷ এ আন্দোলন হবে মূলত ঢাকা কেন্দ্রীক৷ তাদেও লক্ষ্য থাকবে সারাদেশ থেকে দলের সক্রিয় নেতাকমর্ীদেও ঢাকায় এনে বলিষ্ট আন্দোলন গড়ে তোলা হবে৷ এজন্য দলের আন্দোলনের রুপরেখা ঠিক করতে সোমবার রাতে গুলশানে তার রাজনৈতিক কাযর্ালায়ে উপদেষ্টাদের মাধ্যমে খালেদা জিয়া ধারাবাহিক দলের সিনিয়র নেতাদের সেেঙ্গ বৈঠক করনে৷ এরই অংশ হিসাবে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম মহাসচিবেদের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা ৷ একই দিন তিনি দলের স্থায়ী কমিটিরও বৈঠক করেন তিনি৷

ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল৷ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশান হেরিটেজ হোটেলে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ বৈঠকে অংশ নেওয়া একটি সূত্র জানায়, বৈঠকে সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে৷ আলোচনায় বিএনপিকে গত ৮ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না দেওয়া, সরকারের হয়ে পুলিশের কার্যক্রম পরিচালনা করা, বিরোধী রাজনৈতিক মতের নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশের নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়৷এদিকে,গত কিছুদিনে সরকার আবার হঠাত্‍ করে যুদ্ধাপরাধী তথা জামায়াত নেতাদের শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে সক্রিয় হয়ে ওঠে৷ যদিও বিষয়গুলো আদালত কেন্দ্রীক কিন্তু সচেতন মানুষ মনে করেন এ সংক্রান্ত সব কিছুই ঘটছে সরকারের ইশারা-ঈঙ্গিতে৷ জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযমের আপিল মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়, এমন মুহূর্তে তিনি পরপারে চলে যান৷

নেতা-কর্মীরা গোলাম আযমকে শুধু জামায়াতের সাবেক আমীর হিসেবে নয়, দলের আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে জানতেন৷ জামায়াতের মূল নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলো তার কাছ থেকেই আসতো বলে মনে করা হতো৷ সেই গোলাম আযমের মৃতু্যতে জামায়াত নেতা-কর্মীরা যখন শোক-বিহ্বল আর তখনই একের পর এক ঘটছে জামায়াতের ওপর আঘাত৷ গোলাম আযমের মৃত্যুর মাত্র এক সপ্তার মধ্যেই জামায়াতের বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হয়৷ মাঝে এক কার্যদিবসের পর দলের অর্থের মূল যোগানদাতা বলে পরিচিত মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হয়েছে৷ আবার তার পরের দিনই অর্থাত্‍ ৩ নভেম্বর দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা কামারুজ্জামানের আপিল মামলায় ফাঁিসর রায় বহাল রয়েছে৷

সর্বশেষ, সরকারের অবস্থানের এই পরিবর্তন সবাইকে হতবিহ্বল করে দিয়েছে৷ কেউ বুঝে উঠতে পারছেন না কেন সরকার এভাবে হঠাত্‍ করে নিজেদের অবস্থানের এই পরিবর্তন ঘটালো৷ এমনকি সরকারের ঘনিষ্ঠদের মুখেও প্রশ্ন, কী হতে যাচ্ছে?বিএনপি’র ধৈর্যধারণ: বিএনপি এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে যে, আগামী জানুয়ারির আগে বিএনপি আন্দোলনে নামবে না৷ তার মানে দাঁড়াচ্ছে, ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পাচ্ছে সরকার চিন্তা-ভাবনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য৷ জানুয়ারির শুরু থেকেই তীব্র আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া হবে৷ এবারের কর্মসূচি হবে ঢাকা কেন্দ্রীক৷ দীর্ঘ সময় নয়, অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের আন্দোলনে সরকারের পতন নিশ্চিত করার পরিকল্পনা রয়েছে৷ এই সংক্ষিপ্ত বা স্বল্প সময়টা হতে পারে ১৫ থেকে ২০ দিনের৷

দলীয় নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন মহলের চাপ, এমনকি সরকারের মন্ত্রীদের শত উস্কানিতেও এ মুহূর্তে বেগম খালেদা জিয়া রাজপথের আন্দোলনে নামতে রাজি নন৷ তিনি তাড়াহুড়ো করে আগোছালোভাবে কিছু করতে চান না৷ দেশ-বিদেশের পুরো সমর্থন নিয়ে তবেই মাঠে নামতে চান৷ বিদেশিরা তাকে কিছু আশ্বাস দিয়েছে, সেইসব আশ্বাসেরও একটা শেষ দেখতে চান৷ আশ্বাস বা কমিটমেন্টের কিছু ফয়সালা না করতে পারলে বিদেশিরাই নিশ্চয় বলবে, এবার তোমরা যা করার করো৷ সেই সময়টার জন্য অপেক্ষা করছেন৷ কারণ, তিনি মনে করছেন, ক্ষমতা তার নাগালের কাছাকাছি৷ সামান্যর জন্য ধরতে পারছেন না৷ ভারতের বিগত সময়ের একগুঁয়েমির কারণেই হাতের মুঠো থেকে নাটাই ছুটে গিয়েছিলো৷ এখন সেই ভারতই আশ্বাস দিচ্ছে৷ কাজেই একটু ধৈর্য ধরতে সমস্যা কোথায়? অর্থনীতির স্থবিরতা: ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা৷ কারণ, ব্যবসায়ীসহ সকল মহলই চাচ্ছিলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক৷ তা নাহলে দেশের সার্বিক অথনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকা- চালিয়ে নেওয়া যাচ্ছিলো না৷ বিগত সময়গুলোতে মনে হচ্ছিলো, সরকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চায়৷ এজন্যই মূলত জামায়াতের সঙ্গে একটা গোপন আঁতাতের চেষ্টা করেছিলো সরকার৷

কিন্তু, সরকারের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি৷ বিরোধীদলের আন্দোলন নেই, ভাঙচুর নেই তারপরও অর্থনীতির স্থবিরতা কাটছে না৷ ব্যবসা-বাণিজ্য এখন পুরোপুরি স্থবির হয়ে আছে৷ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে শীর্ষ ব্যবসায়ী পর্যন্ত প্রায় সকলেই কমবেশি কষ্টের মধ্যে আছে৷ সবার মুখে একটাই কথা ব্যবসা নেই৷ ব্যাংকগুলোকে পর্যন্ত অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে সময় অতিবাহিত করতে হচ্ছে৷ টাকা নিয়ে বসে আছে, কেউ ঋণ নিচ্ছে না৷ ব্যাংকের টাকা মেরে দেওয়ার উদ্দেশ্য যাদের এরা ছাড়া প্রকৃত ব্যবসায়ীদের কেউই ব্যাংকের ধারে-কাছে যাচ্ছেন না৷ ভারি যন্ত্রপাতি আমদানি অনেক কম৷ এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে এই যে, নতুন কল-কারখানা বা উত্‍পাদন কার্যক্রমে বিনিয়োগ নেই৷ আর এ কারণেই ব্যাংকগুলোতে অলস টাকার পাহাড় তৈরি হয়েছে৷ যা নিয়ে ব্যাংকগুলো মহাসংকটে পড়েছে৷

সরকারের তরফ থেকে যতোই বলা হচ্ছে মেয়াদ শেষে নির্বাচন, কিন্তু কেউ যেন বিশ্বাসই করতে চাচ্ছেন না এ কথা৷ তাই যতোবারই সুযোগ পাচ্ছেন সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করছেন- নির্বাচন ও আলোচনা প্রসঙ্গে৷ কারণ, সবাই চান, একটা কিছু হোক৷ গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে আন্দোলন-ভাঙচুর না থাকলেও কেউই এটাকে স্বাভাবিক পরিস্থিতি হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না৷ প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রীরা অত্যন্ত জোর দিয়ে বলছেন, ২০১৯ সালের আগে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না৷ অর্থাত্‍ সেই পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় আছেন৷ তারপরও কেউ যেন এটাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না৷ আর এ কারণেই ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানাবিধ কাজকর্মে মানুষ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন৷ অর্থনীতির গতি থেমে আছে এখানেই৷

আওয়ামী লীগ সরকার তাদের কূটনীতি বা বিদেশ নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছে৷ যে মার্কিন দূত প্রায় এক বছর ধরে ঘুরেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তারপরও সাক্ষাত পাননি, সেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য উম্মুখ হয়ে রয়েছে এখন সরকার৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এখন আওয়ামী লীগের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷ এদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের নীতি গ্রহণ করেছে সরকার৷ এর কারণ হলো, আগে যে ভারতের একচেটিয়া সমর্থনে সরকার অন্য কোনো দেশের পরামর্শকে পাত্তা দেয়নি সেই ভারত থেকে এখন আর সে রকমের একগুঁয়ে সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে না৷ ইতিপূর্বে অর্থাত্‍ কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালে ভারত সরকারের নীতি ছিলো যে কোনো মূল্যে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা, সেটা এমনকি এদেশের মানুষ না চাইলেও৷ সরকার পরিবর্তনের পর ভারতের ওই নীতির পরিবর্তন ঘটেছে৷ তারা এখন আর আগের মতো একগুঁয়ে নীতিতে নেই৷ এর কারণ হলো, নতুন সরকার বুঝতে পেরেছে- জনগণ চায় না বাংলাদেশে এমন একটি সরকারকে টিকিয়ে রাখতে জোর খাটানোর পরিণতি এক সময় তাদের জন্যও বিপদ ডেকে আনতে পারে৷ এখানে জনসমর্থনহীন সরকার থাকাটা তাদের জন্যও নিরাপদ নয়৷ এই জনবিচ্ছিন্ন সরকারকে ব্যবহার করে বাইরের রাষ্ট্রগুলো যে যার স্বার্থ হাসিল করে নেওয়ার চেষ্টা করবে, যা ভারতের জন্যও ক্ষতিকর৷

জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের জানাজাসহ দাফনের সকল অনুষ্ঠান অত্যন্ত ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে৷ এজন্য সরকারের সহযোগী আচরণ ছিলো লক্ষণীয়৷ আর এ সহযোগিতার জন্য গোলাম আযমের পরিবার ও জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়৷ অন্যদিকে একই সময়ে জামায়াত নেতারা বিএনপির ভূমিকায় ভেতরে ভেতরে সমালোচনা করেন৷ গোলাম আযমের ছেলে আমান আযমী তো প্রকাশ্যে লিখিতভাবে বিএনপিকে তুলোধুনো করে ছাড়েন৷ এসবের মধ্যেই নতুন করে সরকার জামায়াতের ওপর চড়াও হলো৷ এর নেপথ্য কারণ হিসেবে পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, আরেকটি নির্বাচন সম্ভবত ঘনিয়ে এসেছে৷

বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতারা দেশে শিগগিরই আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা জোর দিয়ে বলছিলেন৷ দেশের সাধারণ মানুষও এমন একটা সম্ভাবনার কথা ভাবতে শুরু করেছিলেন৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে সেই সম্ভাবনার কথা তুড়ি মেড়ে উড়িয়ে দেন৷ তিনি মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা সরাসরি নাকচ করে দেন৷ কিন্তু সর্বশেষ, আরব আমিরাত সফর করে এসে প্রধানমন্ত্রী যে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন তাতে তিনি নির্বাচন প্রসঙ্গে অবস্থান পরিবর্তনের আভাস দেন৷ তিনি বলেন, সরকার চাইলেই যে কোনো সময় নির্বাচন দিতে পারে৷ এটা সরকারের অধিকার৷ অর্থাত্‍ গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা সরাসরি যে নাকচ করে আসছিলেন এবার তা করেননি৷ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর অনেকেই নতুন একটা নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে ভাবছিলেন৷ তারমধ্যেই ঘটছে যুদ্ধাপরাধ এবং জামায়াত নিয়ে এমন লঙ্কাকান্ড৷

মহাজোট সরকারের শেষের দিকেও জামায়াত নিয়ে এমন একটা হুলস্থুল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো, এখন আবার সেই পরিস্থিতি৷ তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরেকটি নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার কৌশল হিসেবে দেখছেন৷ক্ষমতাসীনদের পাতানো ফাঁদে পা দিতে চাচ্ছে না বিএনপি৷ একারণে তাড়াহুড়া করে বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি না দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড৷ আগামী দিনে আন্দোলন-সংগ্রামকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিতে কৌশলগত কিছুটা পরির্বতনও এনেছে দলটি৷ দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা েগেছে৷বিএনপির ওই সূত্রটি জানায়, আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচি কি হবে তা ক্ষমতাসীনদের আচরণের উপর অনেকাংশ নিভর্র করবে৷ যেখানে বাধা আসবে সেখানেই কি করে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায় সে বিষয়টিকে মাথায় রেখেই এবার আন্দোলনের পরিকল্পনা করছেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া৷

সূত্র জানায়, ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে বিএনপি ঢাকায় একটি জনসভা করার বিষয়ে ইতোমধ্যে ঐক্যমতে পৌঁছেছে৷ ওই জনসভায় সারাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণে লোক সমাগমের টার্গেট নেয়া হয়েছে৷ সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ওই জনসভায় খালেদা জিয়া সরকারের প্রতি শেষবারের মতো সংলাপের প্রস্তাব দেবেন৷ সরকার বিএনপির পক্ষ থেকে দেয়া প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে চুপচাপ বসে থাকবে না বিএনপি৷ পথযাত্রা থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ ভবন, সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যাবে বিএনপি৷সেক্ষেত্রে ঘোষণা করা হতে পারে হরতাল, অবরোধ, গণকারফিউ, স্বেচ্ছায় কারাবরণের মতো কর্মসূচি৷ এসব কর্মসূচির নেতৃত্বে থাকবেন বেগম খালেদা জিয়া৷ আর বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায়ই এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে৷

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নীলফামারীর জনসভায় ঢাকার আন্দোলন নিয়ে দেয়া বক্তব্যের বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপি৷ অতীতের ব্যর্থতা থেকে বের হয়ে আসতে মহানগর বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা৷ সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে আন্দোলনে সফল করতে দলের প্রতিটি অঙ্গ সংগঠন ও সহযোগী সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ প্রায় শেষ পর্যায়ে৷ শিগগিরই ছাত্রদল ও শ্যমিক দলের কমিটি গঠনকে ঘিরে নিজেদের মধ্যে বিরাজমান সমস্যা সমাধান করবে দলটি৷এদিকে মুখ দেখে নয়, যারা আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে নামতে আগ্রহী তাদের নিয়েই যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল ও মহিলা দলের নতুন কমিটি ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে বলেও জানা গেছে৷

যদিও বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহলের কয়েকজন মনে করছেন দেশে-বিদেশে এ সরকারের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই৷ আর সেকারণে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়ে সফলতা আসতে একমাসের বেশি লাগবে না৷ একতরফা নির্বাচনে ভোটবিহীন অবস্থায় ক্ষমতায় আসায় দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের উপর ক্ষিপ্ত৷ তারা তাদের ভোটের অধিকার হারানোর বিষয়টিকে মোটেই ভালোভাবে নেয়নি৷ আর এরই প্রমাণ মিলছে খালেদা জিয়ার জেলা পর্যায়ের জনসভায়৷দলীয় সূত্রে জানা যায়, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলন-সংগ্রামের কৌশল হিসেবে সাংগঠনিক মজবুতি, জেলা পর্যায়ে জনসভা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পেশাজীবীদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় করে যাচ্ছেন৷ এর মাধ্যমে দলকে চাঙ্গা করে জনসমর্থন আরো বৃদ্ধি করতে চাচ্ছেন তিনি৷ যাতে সময়মতো আন্দোলন-সংগ্রামের ডাক দিলে সকলের সাড়া পাওয়া যায়৷ বিএনপি নেতারা মনে করছেন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের তরফ থেকে সব দলের অংশ গ্রহণে দ্রুত একটি জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবে সরকার৷ আর সরকারের পক্ষ থেকে এর উদ্যোগ নেয়া না হলে দাবি আদায়ে রাজপথেই থাকবে বিএনপি৷

খালেদা জিয়া আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেছেন, গত ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর বিএনপি আন্দোলন করেনি৷ তার দল চেয়েছিল আলোচনার মাধ্যমে সব ধরনের রাজনৈতিক সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান হবে৷ ইতিমধ্যে সরকার ১০ মাস সময় পেয়েছে৷ কিন্তু আর নয়৷ সময়মতো আন্দোলনের ডাক দেবেন তিনি৷ এ সরকারকে বিদায় করেই ঘরে ফেরার ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া৷ এমনকি সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করার কথাও বলেন তিনি৷দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়া বলেন, ওমুক ভাই তোমুক বলে কোনো লাভ হবে না৷ দল থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হবে, যার অধীনে থাকতে বলা হবে আগামী দিনে তা-ই করতে হবে৷ তিনি বলেন, কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা বিদায় করা কোনো কঠিন কাজ হবে না৷

এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিশ্ব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আওয়ামী লীগ সরাসরি ঘোষণা না দিয়ে আইন করে রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পাঁয়তারা করছে৷তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন প্রক্রিয়ায় আন্দোলন করেই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করা সম্ভব৷

বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার তাদের অঙ্গীকার থেকে সরে গিয়ে এখন পুরো বিষয়টিই অস্বীকার করছে৷ দমন-পীড়নের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে৷ ফলে এখন আন্দোলনের বিকল্প নেই৷আরেকটি সূত্র জানায়, দলীয় ইসু্যর চেয়ে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইসু্যগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি৷ রাজনৈতিক বিতর্ক এড়িয়ে কর্মীদের সক্রিয় করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে৷সূত্র আরও জানায়, বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হলেও তারা কোনো সাড়া দিচ্ছে না বলেও বৈঠকে রাষ্ট্রদূতদের জানানো হয়েছে৷ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বৈঠক শেষে বলেন, আসলে এটি একটি নিয়মিত বৈঠক৷ অনেকটা চা চক্রের মতো৷দলের আন্দোলন কর্মসূচিতে অসম্পৃক্ততা, নীতি-নির্ধারণী বিষয়ে পর্যাপ্ত পরামর্শ ও সহায়তা না দেয়া ও নিষি্ক্রয়তা নিয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্যদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া৷ বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি৷ বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্রে একথা জানা গেছে৷ বৈঠক সূত্র জানায়, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলের স্থায়ী কমিটির ভূমিকায় আন্দোলন কর্মসূচি ও তাদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা, নীতি-নির্ধারণী বিষয়ে তাদের পর্যাপ্ত পরামর্শ ও সহায়তা না দেয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন খালেদা জিয়া৷ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পদ এবং দায়িত্ব অনুযায়ী যথাযথ ভূমিকা পালনে গাফিলতি ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে নেতাদের সতর্ক করেন তিনি৷

খালেদা জিয়া বলেন, ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের পর আন্দোলন কর্মসূচি থেকে সরে আসা একটি ভুল ছিল৷ কিন্তু আপনারা কেউ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেননি৷ সারা দেশের মানুষ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে৷ তারা সবাই প্রস্তুত৷ আপনারা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের নেতৃত্ব দিতে পারছেন না৷ আন্দোলন কর্মসূচি দিলে আপনারা কেউ মাঠে নামছেন না৷ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর রাজপথে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেননি৷ বিদেশিরা বলছে, দল হিসেবে সুনির্দিষ্ট ইসু্যতে বিএনপি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না৷ জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে দেয়নি সরকার৷ এতবড় একটি ঘটনার পর আপনারা প্রতিবাদ করেননি৷ কীভাবে আন্দোলনকে জোরালো করা যায় আপনাদের সুনির্দিষ্ট কোনো ভূমিকা নেই৷ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য হিসেবে আপনাদের ভূমিকা হতাশাজনক৷ আপনাদের এই নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে সারা দেশের নেতাকর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে৷

খালেদা জিয়া বলেন, সারা দেশে আপনারা শীর্ষ নেতারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত৷ ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে অনেক আগে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত মহানগর কমিটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেননি৷ ঢাকা মহানগর কমিটি অগোছালোর কারণে আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ এসময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস এর ব্যাখ্যা দিতে চাইলে খালেদা জিয়া ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন৷ এবং এ বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন৷সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের আইনি জটিলতায় জড়িয়ে ফেলছে৷ সর্বশেষ সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সিলেট সিটি মেয়রসহ বিএনপির কয়েকজন নেতাকে জড়িয়েছে৷ এরকম স্পর্শকাতর কিছু মামলায় বিএনপির অনেক নেতাকে জড়িয়েছে৷ আমার বিরুদ্ধেও মিথ্যা দুর্নীতির মামলার বিচার শুরু হয়েছে৷ কিন্তু আপনারা কেউ এর সোচ্চার প্রতিবাদ করতে পারেননি৷ খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন৷ এখন সরকার এত বড় বড় দুর্নীতি করছে সেগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশিতও হচ্ছে৷ কিন্তু আপনারা এসব বিষয়ে তথ্যপ্রমাণসহ প্রতিবাদ করতে পারছেন না৷ দলীয় ফোরামে পর্যালোচনা এবং প্রমাণ জোগাড় করে সহযোগিতা করছেন না৷পুরো বৈঠকে খালেদা জিয়া ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেন৷

সূত্র জানায়, আন্দোলন ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচির কথা আলোচনায় আসেনি৷এসময় কয়েকজন সদস্য ঢাকায় মহাসমাবেশের পরামর্শ দিলে খালেদা জিয়া বলেন, এখনো ঢাকা মহানগর অগোছালো৷ আগে আপনারা ঢাকা মহানগর কেন্দ্রিক গণসংযোগ বাড়ান৷তিনি ঢাকা মহানগরে আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠনে জনসংযোগের ওপর জোর দেন৷এসময় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা আগামীতে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন৷খালেদা জিয়া বলেন,বিগত আন্দোলনে আপনাদের সামর্থ অনুযায়ী ভূমিকা রাখতে পারেননি৷ আগামী দিনে আপনারা নামেন আর না নামেন দেশবাসীকে নিয়ে আমি রাজপথে নামবো প্রায় আড়াই ঘন্টার বৈঠকে আগের দুই দিনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে উঠে আসা বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা হয়৷ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে দলের ঢাকা মহানগর কমিটিকে দ্রুত চাঙ্গা করে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ বৈঠকে আন্দোলনে ঢাকাবাসীকে ব্যাপক হারে সম্পৃক্ত করার পক্ষে মত দেয়া হয়৷

বৈঠক সূত্র জানায়, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারকে বাধ্য করার আন্দোলনে নামার আগে নেতাদের মতামত নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া৷ মূলত এ লক্ষ্যেই তিন দিনের বৈঠক করেছেন তিনি৷ প্রথম ও দ্বিতীয় বৈঠকে সাংগঠনিকভাবে দলকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তোলা, দ্রুততম সময়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির পুনর্গঠন, আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়ন ও কর্মসূচি ঘোষণা, নেতাদের রাজপথে থাকার বিষয়ে নিশ্চিত করা, ব্যাপক পরিসরে জনসম্পৃক্ততা, দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ইসু্যতে অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং মোর্চার সমর্থন ও সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন নেতারা৷ এক্ষেত্রে সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, আসম আবদুর রবের জাসদসহ অন্যান্য দলকে আন্দোলনের এক প্লাটফর্মে দাঁড় করানোর বিষয়ে আলোচনা হয়৷ যেখান থেকে যুগপত্‍ কর্মসূচি পালিত হবে৷

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয় পর্যালোচনা ছাড়াও সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী দিনের আন্দোলনের কর্মসূচি ও কৌশল নির্ধারণ নিয়ে নীতিনির্ধারকদের মতামত জানতে চেয়েছেন খালেদা জিয়া৷ রাজধানীসহ সারা দেশে একযোগে আন্দোলনের কর্মসূচি পালনের লক্ষ্যে কর্মকৌশল নির্ধারণের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে৷এর আগে সোম ও মঙ্গলবার দলের উপদেষ্টা, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে ধারাবাহিক আরও দুটি বৈঠক করেন খালেদা জিয়া৷

এদিকে, সরকার বিরোধী আন্ধোলনে ব্যর্থতার কলষ্ক মূছতে চায় ঢাকা মহানগর বিএনপি৷ বিএনপি চেয়ারপারসন সারাদেশের পাশাপাশি রাজধানীতে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে বিশেষ মনোযোগী৷ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সারা দেশের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাতেও কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে বিশেষ মনোযোগী৷ঢাকা আন্দোলনের ব্যাপারে খালেদার কাঙ্খিত চাহিদার কথা দলের দ্বায়িত্ব মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পাশাপমি জোট নেতাদেও অবদিত করেছেন খালেদা৷সে ব্যাপাওে তিনি প্রয়োজনীয় দিক নিদের্শনা েিদয়া হচ্ছে জোট নেদাদেত৷ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি জোটের নেতাদেরও অবহিত করেছেন৷ বিগত সময়ের মতো যেন ঢাকার আন্দোলন ব্যর্থ ও নিষ্ক্রিয় না হয় সে ব্যাপারেও তিনি নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের কথায় প্রমাণিত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগের অধীনে বিগত নির্বাচনে কারচুপি হয়েছিল৷বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরে শুক্রবার এই মন্তব্য করেছেন৷ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি যে কারচুপির আশঙ্কা করেছিল, তা এইচ টি ইমামের কথায় প্রমাণিত হলো৷মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, বিএনপি আন্দোলনে নেই-এটা বলা ভুল৷ আমরা আন্দোলনে আছি, থাকব৷ সময় মতো জনগণকে সম্পৃক্ত করে অবৈধ সরকারের পতন ঘটানো হবে৷ আন্দোলনের মাধ্যমে এ অবৈধ সরকারকে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে৷এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে গত ৩ অক্টোবর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিএনপির কঠোর আন্দোলন কঠোর হাতে প্রতিরোধ হবে, তরুণ প্রজন্ম ইয়াহিয়ার দালাল ও তার (খালেদা জিয়ার) দালালদের অনুসরণ করবে না৷

শেখ হাসিনা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সংলাপের দাবি আবারো নাকচ করে দিয়ে বলেন, কার সঙ্গে সংলাপ করবো? খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ? খুনি, ধর্ষক, লুটেরাদের সঙ্গে সংলাপ করার মতো দৈন্য দশায়’ তার সরকার কিংবা বাংলাদেশ এখনো পড়েনি৷ বিশ্ব দরবারেও এখন আর কেউ বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক সমস্যার কথা বলেন না৷ তাই কোনো খুনির সঙ্গে আলোচনা নয়৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির কথিত কঠোর আন্দোলন মোকাবিলা করার ক্ষমতা সরকারের রয়েছে৷ তাদের মানুষ হত্যা করার আন্দোলন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোরভাবে প্রতিহত করবে সরকার৷

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, বিএনপি সরকারকে চাপ দিয়ে সংলাপ ও মধ্যবর্তী নির্বাচনের অযৌক্তিক দাবি আদায় করতে পারবে না৷ সেই ক্ষমতা বিএনপির থাকলে অনেক আগেই এ দাবি আদায় করে নিত৷ এই সব আন্দোলনের কথা বলে দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করাই তাদের উদ্দেশ্য৷ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, বিএনপি কীসের আন্দোলন করবে? তাদের নেতারাই তো মাঠে নেই৷ নেতারা না থাকলে কর্মীরা মাঠে থাকে না৷ তাই মাঠে না নেমে ফাঁকা আওয়াজ দিয়ে লাভ কি? তবে আন্দোলনে নেমে নাশকতার চেষ্টা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে৷ বিএনপি-জামায়াত জোটকে এবার কোন ধরনের ছাড় দেয়া হবে না৷

জনগণের শান্তি নষ্ট করলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হবে বলে হুশিয়ার করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক৷ তাকে মানসিক অসুস্থ অভিহিত করে তিনি বলেন, দেশের স্থিতিশীল পরিবেশ ও শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে যে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হবে৷ বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি৷ নানক বলেন, দেশবাসীর কাক্ষিত উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার যে কোনো ষড়যন্ত্র জনগণ দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করবে৷ শান্তি, নিরাপত্তা ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে সরকার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে শৈথিল্য প্রদর্শন করবে না৷