রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আটক

দৈনিকবার্তা-রাজশাহী,২৩নভেম্বর: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফিউল ইসলাম হত্যার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’সহ ৬ জনকে আটকের দাবি করেছে র্যাব৷ রাজধানী এবং রাজশাহীর বিভিন্ন স্থান থেকে শনিবার রাতে তাদের আটক করা হয়৷র্যাবের সহকারী পরিচালক রুম্মন মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷আটকরা হলেন- রাজশাহী কাটাখালী পৌর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম মানিক, যুবদল নেতা পিন্টু, কালু, বাবু, মামুন ও সবুজ৷

এদের মধ্যে যুবদল নেতা আরিফুল ইসলাম মানিকের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে রাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফিউলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ আর বাকিরা ছিল সহযোগী৷ এমনটাই দাবি র্যাবের৷

উল্লেখ্য, গত ১৫ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর চৌদ্দপাই এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হন অধ্যাপক ড. শফিউল ইসলাম৷ পরে চিকিত্‍সাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান৷ এ হত্যার ঘটনায় পরদিন ১৬ নভেম্বর রাবি রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এন্তাজুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন৷  র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান জানান, শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে ঢাকা ও রাজশাহীর বিভিন্ন স্থান থেকে এই ছয়জনকে আটক করা হয়৷তাদের র্যাব সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান৷তিনি বলেন, পিন্টুর স্ত্রী নাসরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখার সেকশন অফিসার৷ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফিউল তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ’ করেন এবং এর জের ধরে তাকে হত্যা করার কথা গ্রেপ্তাররা স্বীকার করেছেন৷

শফিউল হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ জামায়াত নিয়ন্ত্রিত’ জঙ্গি সংগঠনের জড়িত থাকার কথা বললেও তেমন কোনো প্রমাণ পাননি বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান মুফতি মাহমুদ৷তিনি বলেন, অধ্যাপক শফিউলের বাসা থেকে তার যে ছাত্রীকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে, তারও কোনো সংশ্লিষ্টতা এ ঘটনায় পাওয়া যায়নি৷ র্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, এই হত্যা পরিকল্পনায় জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল ও জামাই বাবু নামে আরো দুজন জড়িত৷ উজ্জ্বল ও পিন্টু পরামর্শ করে অধ্যাপক শফিউলের ওপর হামলার সিদ্ধান্ত নেন৷ সে অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজিয়ে বাকিদের নিয়ে হামলায় নেতৃত্ব দেন মানিক৷ আর শফিউলের মাথায় কোপ দেন সবুজ৷

গত ১৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাইয় এলাকায় লালনভক্ত শফিউলকে হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে মামলা করেছে তাতে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডেও নিয়েছে পুলিশ৷ তাদের দ্বিতীয় দফা রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন গত শুক্রবার আদালতকে বলেন, শফিউল হত্যায় ‘জামায়াত নিয়ন্ত্রিত’ জঙ্গি সংগঠনের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছেন তারা৷  ওই ১১ আসামির সবাই জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত বলেও আদালতকে জানান তিনি৷নিহত শিক্ষকের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে সৌমিন শাহরিদ জেভিন তার বাবার হত্যায় ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলোর জড়িত থাকার সন্দেহের কথা বলেছিলেন এবং আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ নামে একটি ফেইসবুক পৃষ্ঠায় হত্যার দায় স্বীকারও করা হয়েছিল৷তবে র্যাবের মুফতি মাহমুদ বলছেন, শফিউল হত্যাকাণ্ডে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্যপ্রমাণ তারা পাননি৷ তিনি বলেন, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ১১ জনের মধ্যে তিনজন হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানতে পেরেছেন৷

মতিহার থানার ওসি জানান, আরিফুল ইসলাম মানিক রাজশাহীর কাটাখালি এলাকার সন্ত্রাসী দল ‘মানিক বাহিনীর’নেতা৷ তিনি চোরাচালান, বালুমহাল ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণে বিএনপি নেতাদের ভাড়াটিয়া হিসাবে কাজ করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে৷এই যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মতিহার থানায় হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৭টি মামলা রয়েছে৷ কয়েকবার গ্রেপ্তার হলেও কিছুদিন আগে উচ্চ আদালতের থেকে জামিনে তিনি বেরিয়ে আসেন৷  মানিকের বড় ভাই আব্বাস এক সময় মহানগর যুবলীগের সহসভাপতি থাকলেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়ানোয় ২০০৯ সালে তাকে বহিষ্কার করা হয়৷জেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক জামিলুর রহমান জামিল জানান, চলতি বছর মার্চে কাটাখালি পৌরসভা যুবদলের সম্মেলনের পর মানিককে সভাপতি করে একটি কমিটি প্রস্তাব করেন জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম উজ্জ্বল৷ কিন্তু সেই কমিটি আর অনুমোদন পায়নি৷

তিনি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা পিন্টু ও উজ্জ্বল ব্যবসায়িক অংশীদার৷ পিন্টুর বাড়ি নগরীর ডাসমারিতে, উজ্জ্বলের বাড়ি কাজলা এলাকায়৷ হোসেন ইন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে তারা দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজ করতেন৷ তারা চোরাচালান, বালু মহাল ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতেন মানিকের মাধ্যমে৷