MOSARAF20141023173007নিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ ডিসেম্বর: সরকারি চাকুরেদের বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে বলে শঙ্কায় আছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল৷বাজার পরিস্থিতি সহনীয় রাখতে বেতন ধাপে ধাপে বাড়ানোর পক্ষপাতি তিনি৷ শুধু তাই নয় বাড়তি বেতনের অর্থ বিনিয়োগে ব্যবহারের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি৷সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো চলতি ডিসেম্বরেই ঘোষণার কথা রয়েছে৷ এতে বেতন দ্বিগুণের মতো বাড়ছে বলে গণমাধ্যমের খবর৷

রোববার নগরীর আগারগাঁও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি(এডিপি) বাস্তবায়ন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই তথ্য জানান৷ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম এবং সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জিইডি) শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন৷পরিকল্পনামন্ত্রীও বলেন, বেতন ৭৫ থেকে ১০০ শতাংশ বাড়ছে বলে তিনিও শুনছেন৷৭৫ শতাংশও যদি বাড়ে; আর তার পুরোটা যদি বাজারে একইসঙ্গে আসে, তাহলে বাজারের খবর আছে৷ সবাই বড় বড় চিংড়ি মাছ কিনবে; বাড়তি খরচ করবে৷ বেড়ে যাবে মূল্যস্ফীতি৷কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়তি বেতনের টাকা বাজারে এলে তোমাদেরও খবর আছে, সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন তিনি৷

গত ছয় মাস ধরে মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী৷ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসভিত্তিক) মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২১ শতাংশ৷ছয় দিন আগে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করতে গিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছিলেন, অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি নেমে আসবে৷২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও৷উদাহরণ দিতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, একজন রিকশাচালক দিনে পাঁচ-ছয়শ টাকা আয় করে৷ তার পুরোটাই পরিবারের পেছনে ব্যয় করে৷ অনেকে আবার নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে টাকা খরচ করে৷

এই রিকশাচালকদেও প্রতিদিনের বাড়তি আয়ের (প্রয়োজনীয় খরচ শেষে যেটা থাকে) ১০০ টাকাও যদি সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করে সেই টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের বাড়ির (বাসস্থানের) ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়, তাহলে খুবই ভালো হবে৷সরকার এই ধরনের একটি প্রকল্প নেওয়ার কথা ভাবছে বলে জানান মুস্তফা কামাল৷মন্ত্রণালয়গুলো ইচ্ছা অনুযায়ী নিজের পছন্দ মতো প্রকল্প পরিচালক(পিডি)পরিবর্তন করতে পারতো৷ তবে এখন থেকে প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন করতে হলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত প্রঞ্জাপন লাইন মন্ত্রণালয়গুলোকে মেনে চলতে হবে৷ ঘনঘন প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন করলে তা প্রকল্প অগ্রগতিকে ব্যাহত করে৷

তিনি আরো বলেন, ডেমোগ্রাফিক ডিভিড্যান্ডকে কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগ-বান্ধব অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাই৷ আমরা বর্তমান বিনিয়োগ করছি ভবিষ্যত্‍ এ কিছু পাব এই আশা থেকেই৷ এজন্য প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে৷ তবে এ উন্নয়নে সবাইকে নিয়েই এগুতে হবে৷ আয় বৈষম্য যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না চলে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷আগে আমাদের স্বপ্ন ছিলো প্রতি গ্রামে গ্রামে বিদু্যত্‍ ও গ্যাস পৌঁছে দেয়ার৷এর সঙ্গে সঙ্গে এখন আমরা চাচ্ছি প্রতি গ্রামে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়াএডিপি প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আগামী বছর থেকে এডিপি বাস্তবায়নে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে আসা হবে৷ একটি প্রকল্পের বিভিন্ন অংশকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করে তা তদারকি করা হবে৷ তখন বোঝা যাবে প্রকল্পের কোন অংশে সমস্যা হচ্ছে৷ যেসব প্রকল্প ভালভাবে কাজ করছে না সেসব প্রকল্প থেকে অর্থ কাজ ভাল হচ্ছে এমন প্রকল্পে স্থানান্তর করা হবে৷

অর্থনীতিতে সেভিংস ও ইনভেস্টমেন্ট টার্ন আনতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, জাতীয় আয়কে বিনিয়োগে পরিণত করা গেলে তবেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়৷ঢাকা-চট্টগ্রাম ৪ লেন প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একদম দিনক্ষণ দিয়ে বলা যাবে না এই প্রকল্প কবে শেষ হবে৷ তবে আমি আশাবাদী আগামী অর্থবছরের মধেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে৷পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি বিভাগ প্রকল্প বাস্তবায়নে ভাল করছে না এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলো মূলত কারিগরি প্রকল্প৷ এগুলো বিনিয়োগ প্রকল্প নয়৷ আমাদের প্রকল্পের ব্যযকৃত অর্থ পরিশোধ করা হয় শেষ তিন মাসে৷ কেবলমাত্র তখনই তা বাস্তবায়িত হয়েছে বলে ধরা হয়৷ তাই বছরের শেষ দিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন হার বেড়ে যায়৷৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মৌলিক কিছু বিষয় প্রাধান্য পেতে পারে বলে জানান মুস্তফা কামাল৷

তিনি বলেন, দেশের সকল মানুষকে আমাদের অর্থনীতির হাতিয়ার বা চালিকাশক্তি বিবেচনায় নিয়ে দেশের প্রাপ্ত সম্পদকে পরিকল্পিতভাবে সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গতিশীলতার মাধ্যমে বেগবান করাটা থাকবে অন্যতম লক্ষ্য৷সর্বাত্মক প্রাধান্য পাবে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি৷ আগেই বলেছি দেশের সকল মানুষকে অর্থনীতির হাতিয়ার হিসাবে বিবেচনায় রাখা হবে গুণগত উত্‍কর্ষতা না হারিয়ে৷ জোড়া দেয়া হবে অর্থনীতির এলাকায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য৷ এক কথায় আমরা একটি গতিময় এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য সামনে রেখে এই পরিকল্পনা দলিলটি তৈরি করতে যাচ্ছি৷

তিনি আরো বলেন, এই দলিলটা কেবল ৫ বছরের জন্য নয়৷ এটা হবে আমাদের জন্য একটি ভিত্তি দলিল যার হাত ধরে আমরা এগিয়ে যেতে চাই এবং লক্ষ্য অর্জন করতে চাই যাহা আমাদের জন্য নির্ধারিত আছে ২০২১, ২০৩০ এবং ২০৪১ এর জন্য৷ ২০০৮-২০১৩ এই সময়কালে ইউরোপ, আমেরিকাসহ প্রায় দেশেই বিশ্বের অর্থনীতি ছিল এক মহা মন্দার কবলে৷ সেই ভয়াবহ মন্দার মধ্যেও আমরা ২০০৯-২০১৪ এই সময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের নেতৃত্বে একটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ও ৬ষ্ঠ পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা অনুসরণ করে আমরা আমাদের অর্থনীতিতে এক অভূতপূর্ব এবং অবিশ্বাস্য সফলতা অর্জন করেছি৷ যাহা আজ সারা বিশ্বে সমাদৃত৷এখন আমরা ৬ষ্ঠ পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে ৭ম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছি৷ ৬ষ্ঠ পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন তাঁদেরকেই আবার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ৭ম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনাটি প্রণয়ন করার জন্য৷

মন্ত্রী বলেন, অবকাঠামো খাতকে প্রাধিকার দেয়া হবে৷ প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দেয়া হবে৷ কৃষি, স্বাস্থ্য, কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াকরণ, সেবা খাত, প্রাণিসম্পদ, খাদ্য নিরাপত্তা খাতকে আলাদাভাবে বিবেচনায় রাখা হবে৷ পর্যটন শিল্পখাতকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হবে৷ গুণগত মান রক্ষা করে সময়মতো এডিপি বাস্তবায়ন এবং সকলস্তরে অপচয় রোধ প্রাধান্য পাবে৷ শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান ও উত্‍পাদনশীলতা বৃদ্ধিকে গুরুত্ব দেয়া হবে৷