image_113886_0

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ জানুয়ারি: গুলিবিদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানের অবস্থা স্থিতিশীল৷ তার দেহে সফল অস্ত্রপচার হলেও প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে৷ তবে ধীরে ধীরে তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে৷ তার চিকিত্‍সার জন্য বিশেষ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে৷ গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে৷রিয়াজ রহমানের ব্যক্তিগত চিকিত্‍সক শুভ রহমান বলেন, ধীরে ধীরে স্যারের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে৷ আরো কিছু সময় পার হলে তার শরীরের অবস্থা জানা যাবে৷

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করার পর তিনি গাড়িতে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় দুবর্ৃত্তরা তাকে গুলি করে৷ এরপর তাকে বহনকারী প্রাইভেটকারটিতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয় দুবর্ৃত্তরা৷ তিনি কোমরে একটি ও উরুতে তিনটি গুলিবিদ্ধ হন৷ঘটনার পর গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ তিনি সেখানেই চিকিত্‍সাধীন রয়েছেন৷ গুলিবিদ্ধ বিএনপি নেতা রিয়াজ রহমানের অবস্থা আপাতত শঙ্কামুক্ত জানিয়ে চিকিত্‍সকরা বলেছেন, অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে তার ক্ষতের পরিচর্যা চলছে৷

ইউনাইটেড হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অপারেশন বিভাগের পরিচালক দবির উদ্দিন আহমেদ বুধবার দুপুরে বলেন, রিয়াজ রহমানকে লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে তার পা ও কোমরের চারটি ক্ষত ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে পরিষ্কার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা আপাতত আশঙ্কামুক্ত বলে জানান তিনি৷

আগের রাতে সন্ত্রাসী হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমান৷তার চিকিত্‍সায় সকালে অর্থোপেডিকস বিভাগের অধ্যাপক আমিনুল সানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷

বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন-সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ কে এম জাফরুল্লাহ সিদ্দিক,নিউরোমেডিসিনেরঅধ্যাপকমাহবুবুর রহমান,ডায়াবেটিকবিশেষজ্ঞ ডা.নাজমুল ইসলাম,মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ মো. ইকবাল হোসেন ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ৷

রিয়াজ রহমানের শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে ডা. দবির উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, তার কোমরের বাঁ দিকে পেছনে দুটি ও বাঁ হাটুর নিচের দিকে দুটি ক্ষত রয়েছে৷গুলি ঢোকার প্রতিটি স্থানে দেড় সেন্টিমিটার গভীর ক্ষত হয়েছে এবং সেখানটা পুড়ে কালো হয়ে গেছে৷ আর গুলি বেরোনোর জায়গায় দুই সেন্টিমিটার গভীর ক্ষত হয়েছে৷

সিটি স্ক্যান ও এমআরআই প্রতিবেদনে কোনো ধাতব ( মেটালিক) বস্তু দেখা যায়নি জানিয়ে চিকিত্‍সক বলেন, তবে নরম ও স্নায়ু পেশীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ রিয়াজ রহমানের বাঁ পায়ের গোড়ালি ফোলা ও ফুট ড্রপ দেখা গেছে৷ তার বাঁ পায়ের অনুভূতি কম, তিনি পা নাড়াচড়া করতে পারছেন না৷রিয়াজ রহমানের শরীরে গুলি রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না৷ তবে আগমন-নির্গমন ক্ষত আছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে৷এর আগে বেলা ১২টায় মেডিকেল বোর্ড বৈঠক করে রিয়াজ রহমানের চিকিত্‍সার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়৷

মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে ফেরার পথে গুলশান ২ নম্বরের কাছে সন্ত্রাসীদের হামলার মুখে পড়েন রিয়াজ রহমান৷ সন্ত্রাসীরা তাকে কাছ থেকে গুলি করে, তার গাড়ি পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়৷রিয়াজ রহমানের স্ত্রী নার্গিস রহমান, মেয়ে আমেনা রহমান ও ছোট ভাই ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম ওমর রহমান রাত থেকেই হাসপাতালে তার পাশে আছেন৷এদিকে রিয়াজ রহমানকে দেখতে সাবেক কূটনীতিকরা হাসপাতালে যান৷

তাদের মধ্যে ব্রাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ, সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এম সাইদুজ্জামান, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক আহমেদ চৌধুরী, ফারুক সোবহান, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মোহাম্মদ জামির, সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরী ও এস এম রাশেদ আহমেদ রয়েছেন৷

রিয়াজ রহমানকে গুলির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মাহবুবুর রহমান বলেন, রিয়াজ রহমানের মতো একজন কূটনীতিকের ওপর এভাবে হামলার ঘটনায় বহির্বিশ্বে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়েছে৷ এটা কোনোভাবে কাম্য নয়৷ আমরা এরকম ঘটনায় উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ৷এ হামলার প্রতিবাদে অবরোধের মধ্যেই বৃহস্পতিবার সারাদেশে হরতাল ডেকেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল৷সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিবের ওপর হামলার তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷সরকারের উস্কনিতেই রিয়াজের ওপর এই হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া৷