BGB1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ জানুয়ারি: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি)মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, হরতাল ও অবরোধে নাশকতাকারীরা যদি জনগণের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে, তবে নিরীহ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করবে বিজিবি৷

দেশজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকা বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচাতে কোনো বোমাবাজকে গুলি করতে বিজিবি কুন্ঠিত হবে না৷

বৃহস্পতিবার সকালে বিজিবি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিজিবি সদস্যরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবে কোনো ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করার জন্য৷ যদি বিজিবি সদস্যরা আক্রানত্ম হয় তখন জীবন বাঁচানো তাদের অধিকার৷ ওই সময় যদি প্রয়োজন হয় তবে অস্ত্র ব্যবহার করবে৷

সংবাদ সম্মেলনে আজিজ আহমেদ বলেন, সীমান্ত রক্ষা আমাদের প্রাইম কাজ৷ কিন্তু জনগণের জানামাল রক্ষা করা, সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা দেওয়া- এসব আমাদের সেকেন্ডারি কাজ৷ সুতরাং এ কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে না৷

অবরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবি কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করছে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, বিজিবির সবই লিথাল (টওাণঘাতি) অস্ত্র৷ বিজিবি সদস্যরা কাউকে গুলি করবে না৷ তবে কেউ আক্রমণ করলে জীবন বাঁচাতে গুলি করতে পারে৷ একজন ব্যক্তি যদি বোমা ফাটায় তাহলে ৫ জন লোক নিহত হতে পারে৷ এই দৃশ্য কোনো বিজিবির সদস্যের নজরে এলে ওই বোমাবহনকারীকে ক্যাজুয়ালটি করা তার দায়িত্ব৷

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা দিতে এ পর্যন্ত দেশের ২১ জেলায় বিজিবি নামানো হয়েছে৷ অবরোধের মধ্যে রাতে মহাসড়কে দূরপাল্লার যান চলাচলেও নিরাপত্তা দিচ্ছে এ বাহিনী৷

বিজিবি সদস্যরা কতদিন এভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, ২০১৩ সালের কথা তো আপনাদের মনে আছে, সুতরাং আমরা মাসের পর মাস, যতদিন প্রয়োজন, সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা করে যাব৷

হরতাল ও অবরোধে বিজিবির দায়িত্ব পালন করার কারণে সীমানত্ম রক্ষায় দায়িত্ব পালনে সমস্যা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিজিবির স্ট্যান্ডবাই সদস্যদেরই হরতাল ও অবরোধে দায়িত্ব পালনের জন্য নিযুক্ত করা হয়৷ সীমানত্ম থেকে কোনো সদস্য প্রত্যাহার করা হয় না৷তিনি বলেন, হরতাল ও অবরোধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে বিভিন্ন জেলায় বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে৷

মহাপরিচালক বলেন, ৩৫টি জেলার প্রশাসক বিজিবি মোতায়েনের জন্য অনুরোধ করেছেন৷ আমরা ১৭টি জেলায় বিজিবি মোতায়েন করেছি৷ জেলা প্রশাসকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে বিজিবি মোতায়েন করা হচেছ৷ কিছু কিছু জায়গায় বিজিবি স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে, প্রয়োজনে নামানো হবে৷হরতাল-অবরোধে কত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে জানতে চাইলে বিজিবির ডিজি বলেন, আপতত ৮৫ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) মোতায়েন করা আছে৷ আরও ৮০ পস্নাটুন মজুদ রাখা হয়েছে৷ দরকার হলেই তাদের নামানো হবে৷

পণ্য পরিবহনে বিজিবি সহায়তা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, বুধবার রাতে সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে ৩৫ হাজার পরিবহনে বিজিবির সদস্যরা সহায়তা করেছে৷সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির মহাপরিচালক ভারত ও মায়মানমারের সীমানত্ম বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, চোরাচালান রোধসহ সীমানত্ম অপরাধ রোধে বিজিবি ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদার করেছে৷

বাংলাদেশ-ভারত সীমানত্মে ৩৬১ কিলোমিটার ও বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমানত্মে ১৯৮ কিলোমিটার এলাকায় বিওপি (সীমানত্ম চৌকি) নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এ কারণে ওই এলাকাগুলোয় টহল দেওয়া যায় না৷ ওই অঞ্চলগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়েছে৷ ওই অঞ্চলগুলোতে বিওপি স্থাপনের কাজ চলছে৷এই অরক্ষিত অঞ্চলের চোরাচালান ও অপরাধ রোধে বিজিবির এয়ার উইং চালু করার বিষয়ে সিদ্ধানত্ম হয়েছে বলেও তিনি জানান৷

তিনি বলেন, ৪টি হেলিকপ্টার থাকবে এয়ার উইংয়ে৷ এরমধ্যে দুইটি হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক টহল দেবে এবং ২টি স্ট্যান্ডবাই থাকবে৷

প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ে প্রসত্মাব পাঠানো হয়েছে৷ এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে৷ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিজিবি’র এক বছরের সফলতার নানা দিক তুলে ধরেন৷