14-01-15-PM-8

দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ২৮ জানুয়ারি:  রাষ্ট্রীয় পদ মর্যাদাক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায়কে ‘নীতির বাইরে বলে মন্তব্য করেছেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। নিজেরাই নিজেদের প্রমোশন দেওয়া সমীচীন নয়, সম্পূর্ণ এথিকসের বাইরে, বুধবার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন তিনি।মর্যাদাক্রম নিয়ে এক রিট আবেদন সম্প্রতি আপিল বিভাগ নিষ্পত্তি করেছে। এর ফলে জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং প্রধান বিচারপতি পদ মর্যাদা একই এবং জেলা জজদের মর্যাদা সচিবদের ওপর হবে বলে সংশ্লষ্ট কয়েকজন আইনজীবী সাংবাদিকদের জানান।

পরে বিচারকরা পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে এই বিষয়ে কথা না বলতে আইনজীবীদের বারণ করে দেন। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, প্রতোকটা ক্ষেত্রে একটা নিয়ম-নীতি আছে। আমাদের সংবিধানে বলা আছে, সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আইন সভা, বিচার বিভাগ ও প্রশাসন- এই তিনটি হচ্ছে স্তম্ভ। এর সমন্বয়ে সব কিছু চলবে। কিন্তু কেউ যদি নিয়ম না মেনে হঠাৎ করে তাদের ইচ্ছামতো একটি ঘোষণা দিয়ে দেয়, তাহলে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আমার অবাক লাগে, সেটা সংবিধানে সুনির্দিষ্টভাবে রয়েছে- কার, কোথায়, কী অবস্থান হবে। এখানে যার যার নিজের মর্যাদা নিজে দেওয়া, নিজের পক্ষে নিজের রায় দেওয়া, এটা তো সমীচীন নয়। এটা তো পার্টিজান রোল হয়ে যায়।

এভাবে নিজের পক্ষে নিজেকে ঘোষণা কখনও কোনোদিন আদালতের রায়ে দেওয়া যায় না। এরকম হলে যে যেখানে আছে, যার যার মতো করে সুযোগ নেবে, কোনো শৃঙ্খলাই থাকবে না, বলেন সরকার প্রধান। তিনি আরও বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে চরম একটা বিশৃৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির উপক্রম হয়েছে। এর আগে বেতনভাতার ব্যাপারেও তারা আলাদা একটি কমিশন করে বেতন-ভাড়া বাড়িয়ে নেয়। সেখনেও নানা রকমের সমস্যা হয়। যাই হোক, পরে আমরা বসে মিটমাট করে একটা জায়গায় গেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জেলা জজের মর্যাদা যদি সচিব মর্যাদার হয়, তাহলে উচ্চ আদালতে যারা আছেন, তারা কোন মর্যাদায় যাবেন? যেতে যেতে তো মনে হয় তারা রাষ্ট্রপতির উপরেই চলে যাবেন।” তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকপর্যায়ে বিভিন্ন দেশ কিভাবে চলে সেটা আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে যার যার কর্তব্য পালন করবে। বিচার বিভাগ তার দায়িত্ব পালন করবে। সকলের সাথে একটি সমন্বয় থাকতে হবে। তাহলেই রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে। সেই জায়গাটা যদি নষ্ট করা হয়। উচ্চ আদালত থেকেই যদি এটা আসে, তাহলে সেটা দুঃখজনক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে আইনমন্ত্রী আলাপ-আলোচনা করছেন। এই সমস্যাটা কিভাবে সমাধান করা যায়, তার যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশা করি, আমাদের বিচারক যারা আছেন, তারাও বিষয়টি বুঝবেন যে কোনো আদালতই নিজে নিজকে প্রমোট করা বা কোনোভাবে লাভবান বা বেনিফিসিয়ারি করা সম্পূর্ণ এথিকসের বাইরে। দেশব্যাপী মুষ্টিমেয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার জাতীয় সংসদের শীতকালীন আধিবেশনে এ কথা বলেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্যে করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি অসুস্থ ছেলেকে হারিয়েছেন এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন সন্তান হারা মায়ের কি বেদনা। তিনি আরো বলেন, আর পেট্রোলবোমা মেরে নিরীহ মায়ের কোলখালী করবেন না। এ সময় এক সাংসদ বিএনপিকে বিরোধীদল বলায় প্রধানমন্ত্রী কথা ঠিক করে বলার পরামর্শ দেন।

বিএনপি আন্দোলনে দেশের মানুষ এখন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে তাদের ভুলের কারণে তারা আজ সংসদ ও বিরোধীদল হারিয়েছে –এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি এখন শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দল তাকে আর বিরোধীদল বলা যায় না। সাংবিধানিকভাবে সংসদে এখন বিরোধীদল আছে নাশকতা বন্ধে সড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপন প্রসঙ্গে কুমিল্লা -৯ এর সাংসদ তাজুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা। দেশের প্রতিটি সড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা তো সম্ভব নয় দেশের প্রতিটি মানুষের চোখই এক-একটি সিসি ক্যামেরা এ সময় প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি এলাকায় নিজ নিজ দায়িত্বে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। আন্দোলনে নামে দেশব্যাপী অপকর্ম করছে বিএনপি আর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে আওয়ামী লীগের ওপর এ কথা জানিয়েছে তিনি আরো বলেন, বিএনপি এখন সন্ত্রাসী ও খুনের দলে পরিণত হয়েছে। সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে আর কোন মায়ের কোল খালি না করতে বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী অ সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য তাজুল ইসলামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এ আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পুত্রের মৃত্যুতে শোকাহত হয়েছেন, যার কারণে তাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হয়েছে। পুত্র শোকে একজন মা কাতর হবেন এটাই স্বাভাবিক। ওনার ছেলের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে তারপরও তিনি এর শোক সহ্য করতে পারছেন না। আর যাদের সন্তান, স্বামী, স্ত্রী, বাবা বা ভাই পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। আবার অনেকের স্বজন যন্ত্রণায় ছটফট করে চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন, তারা কিভাবে এ শোক সহ্য করছেন, প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ বিষয়টি উপলব্ধি করে আর কোন মায়ের সন্তানকে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে না মারার আহ্বান জানান।

গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি নেত্রীর সাথে আলোচনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার ছেলে মারা যাওয়ার পর গুলশান কার্যালয়ে তাকে সমবেদনা জানাতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। কার্যালয়ের গেটে ভেতর থেকে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি আমি যখন গাড়ি থেকে নেমে পকেট গেট দিয়ে ভিতরে যেতে চাই, জানতে পারলাম ওই গেটটিও বন্ধ। তখন নিরুপায় হয়ে সেখান থেকে চলে আসতে হয়েছে। তিনি বলেন, ২০ দল মানুষকে পুড়িয়ে মারা, গাড়ি ভাঙচুর করাসহ জঘণ্য ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। দোষ করে খালেদা আর দুঃখজনক হল কিছু মানুষ আমাদেরকেও দোষ দেয়। আমাদের দোষটা কি? ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করছিল। দেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ কথা নেই, বার্তা নেই অবরোধ আর হরতালের নামে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো শুরু হল।

তাদের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য এখন তারা সরকারের নেই, বিরোধীদলেও নেই উল্লেখ করে সংসদ সদস্যসহ অন্যান্যদের সতর্ক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপিকে এখন আর বিরোধীদল বলার কোন সুযোগ নেই। সংসদীয় গণতন্ত্রের বিধান হচ্ছে যারা সংসদে বিরোধীদলের আসনে বসেন তারাই বিরোধীদল। সেই হিসেবে জাতীয় পার্টি এখন বিরোধীদল। আর বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল- যে দল একটি সন্ত্রাসী দল, জঙ্গির দল, খুনীর দল। যারা মানুষ খুন করে। তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের জনগণকে সাথে নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর আহ্বান জানান। সরকারি দলের ইসরাফিল আলমের অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি প্রশাসনিক স্তরে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টারে ইন্টারনেট সার্ভিস দেয়া হয়। যেখানে বিদ্যুৎ নেই সেখানে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ডিজিটাল সেন্টারগুলো চালু রাখা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ইন্টারনেট স্পীড বাড়ানোর জন্য আরো একটি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনসহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নামে একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে ইন্টারনেট স্পীড আরো অনেক বেড়ে যাবে। পর্যায়ক্রমে আমরা ৩-জি থেকে ৪-জি- তে চলে যাবো। ইন্টারনেট স্পীড এমনভাবে বাড়ানো হবে যাতে সকলে অবাধে ব্যবহার করতে পারে। সরকারি দলের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উচ্চ শিক্ষার প্রসারে দেশের প্রতিটি জেলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে একটি করে সাধারণ-বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।