Modi-Obama

দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ৪ ফেব্রুয়ারি: বাংলাদেশে গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে ভারত সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র পরিচালক ফিল র্যাইনার৷বাংলাদেশের চলমান সঙ্কট নিরসনে শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দিলি্ল সফরকারী ওবামা প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তা৷ বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় অবস্থানের কথাও জানান ফিল র্যাইনার৷

মঙ্গলবার ওয়াশিংটনের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ফরেন প্রেস সেন্টারে বারাক ওবামার ভারত সফর পরবর্তী আয়োজিত প্রেস কনফারেন্সে যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশের সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন৷ বাংলামেইলকে আনসারী এ তথ্য জানিয়েছেন৷

নিউইয়র্কের ফরেন প্রেস সেন্টারে আমন্ত্রিত মুশফিকুল ফজল আনসারী ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে র্যাইনারের কাছে জানতে চান, প্রেসিডেন্ট ওবামা তার সামপ্রতিক ভারত সফরের সময় আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন৷ অথচ এ অঞ্চলের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ একটি অস্থির সময় পার করছে, মানুষ গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম করছে- এমন একটি বাস্তবতায় ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক চলমান চরম অস্থিরতা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামার দৃষ্টিভঙ্গি কী?

জবাবে র্যাইনার বলেন,ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যে সফর করেছেন, সেসময় সফর সঙ্গী হিসেবে আমি লক্ষ্য করেছি প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ স্থান পেয়েছে৷ আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতে ইতিহাসের সবচেয়ে বৃহত্‍ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখেছি, যা বিশ্বে একটি নজির স্থাপন করেছে৷ আমরা সমপ্রতি এ অঞ্চলের শ্রীলংকায়ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখেছি৷

ফিল র্যাইনার বলেন, এটা নিশ্চিত যে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা উত্তেজনাপূর্ণ৷ এ সফরে দুই নেতা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার রক্ষার বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন৷ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে৷ বাংলাদেশের চলমান সঙ্কট নিরসনে দুই নেতার (ওবামা-মোদি) মধ্যে এখনো আলোচনা অব্যাহত আছে বলে জানান র্যাইনার৷

গড়ফর-ঙনধসধ-১ওবামার সামপ্রতিক ভারত সফরকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পকের্র নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে৷

দ্বিপাক্ষিক বিষয়াদি ছাড়াও আঞ্চলিক স্থিতি ও নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্র-ভারত একসঙ্গে কাজ করবে বলে সফরকালে উভয় নেতা একমত পোষণ করেছেন বলে উল্লেখ করেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র পরিচালক ফিল র্যাইনার৷

এদিকে, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ সরনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্‍ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাট৷বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরুর আগে বুধবার সকালে ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে তিনি এ সাক্ষাত্‍ করলেন৷বিকেলে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে পরিচয়পত্র পেশের মাধ্যমে আজ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি তার দায়িত্বপালন শুরু করবেন৷

সূত্র জানায়, সকালে ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাতে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের মনোভাব জানার চেষ্টা করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত্‍৷ এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব নিতে ঢাকায় আসেন মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাট ৷ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৫তম রাষ্ট্রদূত হিসেবে তিনি ড্যান মজীনার স্থলাভিষিক্ত হবেন৷

মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মার্শিয়া বার্নিকাট ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে শপথ নিয়েছেন৷ চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ঢাকায় এলেন তিনি৷ গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য এখনো কাটেনি৷

গত বছরের ২২ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ১৫তম রাষ্ট্রদূত হিসেবে মার্শিয়া বার্নিকাটকে মনোনীত করেন৷ ১৭ জুলাই মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির শুনানিতে অংশ নিয়ে তিনি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে নিঃসন্দেহাতীতভাবে ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন৷ পাশাপাশি বাংলাদেশে আরও বেশি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার নিশ্চিত করতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে তিনি সংলাপে বসারও আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ শুনানিতে তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন৷ মার্কিন সিনেটের অনুমোদন পাওয়ার পর ১৭ নভেম্বর বারাক ওবামা তাঁর মনোনয়ন চূড়ান্ত করেন৷

নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়ার পর মার্শিয়া বার্নিকাট তাঁর টুইট অ্যাকাউন্টে বলেন, আমি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সহকর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে বাংলাদেশের জনগণ, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার অপেক্ষায় আছি৷