kumir1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৫ ফেব্রুয়ারি: চার মাস আগে একটি কুমির ডিমেটেরিয়া নাবিরেকে খেয়ে ফেলে, যখন তিনি তার বাসার কাছেই এক লেকে পানি আনতে গিয়েছিলেন। সেই কুমিরটি ঐ এলাকায় আবার ফিরে আসে। কিন্তু এবার সে দেখতে পায় নাবিরের স্বামী সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছে, প্রতিশোধ নেবার জন্য।

ডিমেটেরিয়া নাবিরে উগান্ডার লেক কিয়োগার তীরে এক দল নারীর সাথে পানি সংগ্রহ করছিলেন, যখন কুমিরটি তাকে আক্রমণ করে। কুমিরটি তাকে কামড়ে ধরে পানিরে নিচে নিয়ে যায়। তারপর ডিমেটেরিয়া নাবিরেকে আর দেখা যায়নি।তার স্বামী মুবারাক বাটামবুজে শোকে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর সময় নাবিরে অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। মুবারাক শুধু তার স্ত্রীকে হারান নি। জন্ম নেবার আগেই তিনি তার শিশু সন্তানকেও হারিয়েছেন। তিনি অসহায় হয়ে পরেছিলেন।

150204121410__80755186_croc-man-spear-624.jpg3

“কুমিরটি আমার বউকে পুরোপুরিই খেয়ে ফেলে। তার কোন কিছুই আর দেখা যায়নি – কোন কাপড় না, শরীরের এমন কোন অংশ না যেটা দেখে আমি তাকে সনাক্ত করতে পারি.” তিনি বলেন। “আমি বুঝতে পারছিলাম না আমি কী করবো। আমার জীবনের সেটাই শেষ ছিল, আমি একদম অসহায় বোধ করছিলাম”। বল্লম হাতে মুবারাক বাটামবুজে কিন্তু গত মাসে ৫০-বছর বয়স্ক মুবারাক বাটামবুজে জানতে পারলেন ঐ কুমিরটি আবার এলাকায় ফিরে এসেছে।

“একজন আমাকে ডেকে বললো, মুবারাক, তোমার জন্য খবর আছে। যেই কুমির তোমার বউকে নিয়েছিল, সেই কুমির এখানে এসেছে, আমরা তার দিকে এই মুহূর্তে তাকিয়ে আছি”। তিনি তখন কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে লেকের কাছে গেলেন। কিন্তু কুমিরটি ঘায়েল করা সহজ ছিল না।

“কুমিরটি ছিল বিশাল এক জন্তু, আমরা তাকে লাঠি-সোটা দিয়ে আর পাথর মেরে ঘায়েল করার চেষ্টা করি, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিলো না”। তখন বাটামবুজে স্থানীয় এক কুমারের কাছে গেলেন। “আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম, আমি যে জন্তুর সাথে লড়াই করছি সে আমার স্ত্রী এবং সন্তানকে কেড়ে নিয়ে গেছে। আমি প্রতিশোধ চাই”।“আমি কুমারকে বললাম আমাকে এমন একটি বল্লম বানিয়ে দিতে যেটা ঐ কুমিরকে হত্যা করতে পারবে”।

কুমার পাঁচ ডলারের বিনিময়ে তাকে সেরকম একটা বল্লম বানিয়ে দেয়।টাকার পরিমাণ বাটামবুজের জন্য বেশ বড় অংকই ছিল, কিন্তু যে জন্তু তার ভবিষ্যৎ কেড়ে নিয়েছে তাকে হত্যা করার জন্য তিনি বদ্ধপরিকর ছিলেন।নতুন বল্লম হাতে মুবারাক বাটামবুজে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিলেন।তারা যখন লেকে পৌঁছালেন কুমিরটি তখনও সেখানে ছিল। কিন্তু বাটামবুজের বন্ধুরা ভয় পেয়ে গেলেন।

“ঐ জন্তুকে আক্রমণ করো না’, তারা আকুতি করেন। ঐ জন্তু এত বিশাল, তোমাকে খেয়ে ফেলবে। বল্লমটি যথেষ্ট নয়, বল্লম দিয়ে কাজ হবে না।কিন্তু বাটামবুজে নাছোড়বান্দা।“আমি জন্তুটাকে মারতে প্রথম বার ব্যর্থ হয়েছি”, তিনি তাদের বললেন।“আমি মৃত্যুর তোয়াক্কা করি না, যদি আমি এই জন্তুকে মারতে গিয়ে মরি। আমি এই বল্লম দিয়ে তাকে ঘায়েল করবো”।

উগান্ডা ওয়াইল্ড লাইফ অথোরিটি-র রেঞ্জার অসওয়াল্ড তুমানিয়া বলেন, ৬০০ কিলোগ্রাম ওজনের এই কুমিরটি চার মিটারের বেশি দীর্ঘ ছিল“আমি বল্লমটা কুমিরের শরীরে ঢুকিয়ে দেই, যখন আমার বন্ধুরা সহায়তা করার জন্য কুমিরের পিঠে ঢিল ছুড়তে থাকে”।“পরিস্থিতি ভয়ানক হয়ে উঠে এবং সেখানে আতংকের সৃষ্টি হয়। কিন্তু আমি ভীত ছিলাম না। আমি শুধু ঐ কুমিরকে মুত দেখতে চেয়েছি”।টানা দেড় ঘণ্টা ক্ষিপ্ত কুমিরের সাথে লড়াই করার পর অবশেষে জন্তুটির মৃত্যু হয়।ক্লান্ত হয়ে সবাই তাদের গ্রামে ফিরে যায়।সবাই হতবাক হয়ে গ্রামে ফিরে যায়। জন্তুটির বিশাল আকার সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলো।“এটা সাধারণ কোন কুমির ছিল না। এত বিশাল তার আকার। লোকজন আমাকে আর আমার বন্ধুদের হিরো বলে ডাকলো”।

মৃত কুমিরকে দেশের রাজধানী কামপালার মাকারেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পশু চিকিৎসক উইলফ্রেড এমনেকু তাকে পরীক্ষা করেন।তিনি বলেন কুমিরটির পেটে একটি হাড় পাওয়া গিয়েছিল যেটা সম্ভবত মানুষের তবে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ডারউয়িন বিশ্ববিদ্যালয়ে কুমির বিশেষজ্ঞ এ্যাডাম ব্রিটন বলেন যে কুমিরটির পেটে ডিমেটেরিয়া নাবিরের কোন পাওয়া গেলে তিনি আশ্চর্যই হবেন।

150204062028_ugandamap

“বারো সপ্তাহের পর সাধারণত একই খাবার থেকে কোন হাড্ডি পেটে রযে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে”।বাটামবুজেকে গ্রামবাসীরা তারকা মর্যাদা দিয়ে গেলেও, তার স্ত্রীকে কবর দেবার কোন সুযোগ হবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।“আমার মন খুবই হতাশ, কারণ আমি আমার স্ত্রী আর সন্তানকে হারিয়েছি, কিন্তু গ্রামবাসীরা আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েই যাচ্ছে,” তিনি বলেন।“তারা বলছে, আমরা ঐ লেকে যাই পানি আনতে, এবং আমরা নিশ্চিত কুমিরটি অন্য কাউকে নিয়ে যেতো”।“আমি এখন এই এলাকার একটা হিরো, সবাই আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েই যাচ্ছে”।