40847-2

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যা মামলায় পাঁচ জনকে মৃতু্যদণ্ড দিয়েছে আদালত৷ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে ছয় জনের৷ দণ্ডিতরা সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী৷ তিন বছর আগে সংগঠনের আরেক পক্ষের হামলায় নিহত জুবায়েরও ছাত্রলীগ করতেন৷ এ হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে দুজন খালাস পেয়েছেন৷ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবু্যনালের বিচারক এবিএম নিজামুল হক রোববার এ রায় ঘোষণা করেন৷এ মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- খন্দকার আশিকুল ইসলাম আশিক, মো. রাশেদুল ইসলাম রাজু, খান মো. রইছ, জাহিদ হাসান, ইসতিয়াক মেহবুব অরূপ, মাহবুব আকরাম, নাজমুস সাকিব তপু, মাজহারুল ইসলাম, কামরুজ্জামান সোহাগ, মো. নাজমুল হুসেইন প্লাবন, শফিউল আলম সেতু, অভিনন্দন কুণ্ডু অভি ও মো. মাহমুদুল হাসান মাসুদ৷

আসামিদের মধ্যে মাহবুব আকরাম ২০১২ সালের ১৩ জানুয়ারি ও নাজমুস সাকিব ওরফে তপু ২০১২ সালের ১৫ জানুয়ারি আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছিলেন৷মৃতু্যদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- খন্দকার আশিকুল ইসলাম আশিক (কাঠগড়া থেকে পলাতক ২৩/২/১৩), মো. রাশেদুল ইসলাম রাজু (পলাতক), খান মো. রইছ ওরফে সোহান, (কাঠগড়া থেকে পলাতক ২৩/২/১৩), জাহিদ হাসান (পলাতক), মাহবুব আকরাম (কাঠগড়া থেকে পলাতক ২৩/২/১৩)৷

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ইশতিয়াক মেহবুব অরূপ (কাঠগড়া থেকে পলাতক, ২৩/২/১৩), নাজমুস সাকিব তপু (জেলহাজতে), মাজহারুল ইসলাম ( জেলহাজতে), ৯), কামরুজ্জামান সোহাগ (জেলহাজতে), শফিউল আলম সেতু (জেলহাজতে), অভিনন্দন কুণ্ডু অভি ( জেলহাজতে)৷ একই সঙ্গে এদের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে৷ কোনো অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় মো. নাজমুল হোসেন প্লাবন ও মো. মাহমুদল হাসান মাসুদকে বেকসুর খালাস দেন করেছেন বিচারক৷

দীর্ঘ তিন বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র জুবায়ের হত্যা মামলার রায় দেয়া হলো৷এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি বহুল আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণার কথা ছিল৷ কিন্তু ওইদিন হরতালের কারণে আসামিদের আদালতে হাজির করতে না পারায় রায় হয়নি৷ বিচারক রায়ের জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন৷গত ২৮ জানুয়ারি এ মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য ৪ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন বিচারক৷ ওইদিন আদালতে হাজির হওয়া ছয় আসামির জামিন বাতিল করে জেলহাজতে পাঠানো হয়৷ এছাড়া সাত আসামি পলাতক রয়েছেন৷

গত ২২ জানুয়ারি আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন৷ এর আগে গত ৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়৷এ মামলায় ৩৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন ট্রাইবু্যনাল৷ সাক্ষ্যদাতাদের মধ্যে জুবায়েরের ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাকালীন প্রাণরসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম বদিয়ার রহমান, প্রভিসি প্রফেসর ড. মো. ফরহাদ হোসেন ও পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক বর্তমান পিপলস ইউনির্ভাসিটির ভাইস চ্যান্সেলর ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরজু মিঞা,প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কবিরুল বাসার ও সাবেক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শহিদুল ইসলাম৷ দণ্ডিতদের মধ্যে আশিক, রইছ, আকরাম ও অরূপ শুনানি চলাকালে কাঠগড়া থেকে পালিয়ে যান৷ মাহবুব আকরাম ছাড়াও নাজমুস সাকিব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন৷

রায় ঘোষণার আগে সকালে আসামিদের মধ্যে কারাবন্দি সোহাগ, মাজহারুল, সেতু, অভি, তপু, প্লাবন ও মাহমুদুলকে আদালতে হাজির করা হয়৷

তিন বছরের বেশি সময় বিচার চলার পর গত ২৮ জানুয়ারি বিচারক নিজামুল হক এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার জন্য দিন দিয়েছিলেন৷ওই দিনই সাত আসামির জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যাদের দুজন খালাস পেয়েছেন৷জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের স্নাতক শেষ বষের্র ছাত্র জুবায়ের ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন৷ এ ঘটনায় পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্‍কালীন নিবন্ধক হামিদুর রহমান আশুলিয়া থানায় এই হত্যা মামলা করেন৷

২০১২ সালের ৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ ছাত্রের বিরুদ্ধে ঢাকার হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা মীর শাহীন শাহ পারভেজ৷ হত্যাকাণ্ডের দেড়বছর পর মামলাটি অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে এলে তা দ্রুত বিচার ট্রাইবু্যনালে পাঠানো হয়৷জুবায়ের নিহত হওয়ার পর ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে পদত্যাগে বাধ্য হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সময়কার উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির৷