SADDIk-1417976778

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ ফেব্রুয়ারি: দেশের বর্তমান সঙ্কট নিরসনে যার সঙ্গে আলোচনায় বসলে শানত্মি আসবে তার সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম৷ মতিঝিলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তার চলমান অবস্থান কর্মসূচি থেকে বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ আহ্বান জানান তিনি৷

কাদের সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা ও আপনার পিতার হত্যার প্রতিবাদকারী হিসেবে দয়া করে আপনি আমাকে সময় দেন৷ গণেশ উল্টে গেলে তখন সাক্ষাত্‍ দিলে লাভ নাই৷ আমি আপনাকে খালেদা জিয়া কিংবা আমার সঙ্গে আলোচনায় বসতে বলিনি৷ যার সঙ্গে আলোচনায় বসলে দেশে শানত্মি আসবে আপনি তার সঙ্গেই আলোচনায় বসুন৷

তিনি বলেন, বিকলাঙ্গ জাসদের ইনু ভাইসহ দু’একজন ছাড়া সবাই সংলাপ চায়৷ আলোচনা না করে আপনি কিভাবে ক্ষমতায় থাকতে চান৷ আপনি তো মন্ত্রীপরিষদেও কথা বলেন, তাহলে বিরোধীদের সঙ্গে কথা বলবেন না কেন?

মানুষের মতামত নিয়ে দেশ চালান৷ আপনি বোরকা পরে পাবলিক বাসে দুই দিন ঘুরেন৷ দেখবেন মানুষ কী বলে৷ শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই সরকার মানুষের সমর্থনে পরিচালিত হচ্ছে না৷ দারোগা, পুলিশ, র্যাব সব আপনার হাতে তারপরও যদি কেউ পেট্রোল বোমা মারে, সেটা আপনারই ব্যর্থতা৷ দেশে শানত্মি আনতে না পারলে অবিলম্বে পদত্যাগ করম্নন৷

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, পুলিশ ও বিজিবির কর্মকর্তারা সন্ত্রাসী নেতাদের মতো বক্তব্য দিতে পারে না৷ এজন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে৷

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, যারা নিজের দেশের মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না, তাদের বিদেশে শানত্মিরক্ষা মিশনে থাকার কোনো অধিকার নেই৷ বেআইনীভাবে আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনী আর একটা সাধারণ মানুষকে হত্যা করলে তাদেরকে শানত্মি রৰা মিশন থেকে ফেরত পাঠাতে জাতিসংঘের মহাসচিবকে অনুরোধ জানাবো৷ তিনি বলেন, বিশ্ব শানত্মিরক্ষায় তারা তখনই কাজ করবে যখন তারা এদেশে শানত্মি রক্ষা করতে পারবে৷ কাদের সিদ্দিকী বলেন, সেনাবাহিনীর অনেক কিছু করার আছে৷ আইনের মধ্যে ও সংবিধানের মধ্যে থেকে তাদের যা করার করতে হবে৷

ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ভারতের নেতারা যত বড় হন তারা তত সাধারণ হন, মানুষের আপন হন৷ ১৪ হাজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে প্রাণ দিয়েছে, একাত্তরে তাদের রক্ত আর বাঙালিদের রক্ত একাকার হয়ে এই মাটিতে মিশে আছে৷ আমি নিজে ১৬ বছর ভারতের আশ্রয়ে ছিলাম৷ সেজন্য ভারত কখনো আমার কাছে কিছু চায়নি৷ কিন্তু আমি আশা করবো তারা আমার কৃতজ্ঞতা যেন তারা না হারায়৷ ভারত সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই দেশের মানুষ মনে করে ভারত এই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে৷ বর্তমান সরকারের অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ডে বিন্দুমাত্র সমর্থন দিলে এদেশের মানুষের হৃদয় থেকে ভারত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে৷

এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার সাথে বিদায়ী স্বাক্ষাত না করা ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নিশা দেশাইকে সরকারের মন্ত্রীর দুই আনার মন্ত্রী বলা বাংলার কৃষ্টি সভ্যতাকে অসম্মান ও আনত্মর্জাতিক কনভেনশন লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেন তিনি৷

বর্তমান সংকটের মূলে ৫ জানুয়ারির ভোটার ও প্রার্থীবিহীন নির্বাচনকে দায়ী করে তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি কোন ভোট হয়নি৷ ভোট কেন্দ্রে কুকুর-বিড়ালও জেগে ছিল না, যে দুই একটা ছিল তারাও ঘুমিয়ে ছিল৷

তিনি বলেন, যতদূর জানি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গৃহবন্দী নন৷ তাহলে আমার স্ত্রীকে তার সাথে দেখা করতে না দেয়া সরকারের অধিকারের মধ্যে পড়ে না৷ এতে আমার স্ত্রী ও খালেদা জিয়া উভয়েরই নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে৷

তিনি বলেন, দেশ যখন জ্বলছে তখন ঘরে বসে আফসোস করার চাইতে রাসত্মায় বসে আমি নিজেকে যোগ্য করে তোলার চেষ্টা করছি৷ স্বাধীনতার পর আমার অনেক ভুলত্রুটি থাকতে পারে, সেই নিন্দা নিতে আমি প্রস্তুত৷ কিন্তু এই কর্মসূচি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গ্রহণ করেছি, কোন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নয়৷

এ ছাড়া দুই নেত্রী যতদিন গো ধরে বসে থাকবেন, ততদিন তার অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান মুক্তিযুদ্ধের এ কিংবদনত্মী৷ আলোচনায় বসে এবং অবরোধ হরতাল প্রত্যাহার করে দেশে শানত্মি প্রতিষ্ঠার দাবীতে গত ২৮ জানুয়ারি থেকে মতিঝিলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নিরবিচ্ছিন্ন অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কাদের সিদ্দিকী৷

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, কাদের সিদ্দিকীর স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকী, কোষাধ্যৰ আবদুলস্নাহ বীর প্রতীক, আইন সম্পাদক এডভোকেট মাহবুব হাসান রানা, যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক হাবিব উন নবী সোহেল, আতিকুর রহমান সাদেক, ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রিফাতুল ইসলাম দ্বীপ প্রমুখ৷এদিকে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী বিকেলে বঙ্গবীরের অবস্থান কর্মসূচীতে সংহতি প্রকাশ করতে আসেন এবং কিছু সময় তিনি সেখানে অবস্থান করেন৷