15_Fernandez-Taranco_101213

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ ফেব্রুয়ারি: চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সরকারি ও বিরোধী উভয় দলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফারনান্দেজ তারানকো। যদিও সরকার দেশি বা বিদেশি এমন যেকোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত নয়। কিন্তু বিএনপি সব সময়ই স্বাগত জানিয়ে আসছে।মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আয়োজিত নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন জাতিসংঘ মহাসচিবের ডেপুটি মুখপাত্র ফারহান হক।

বিষয়টি জানিয়েছেনসেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাংবাদিকমোহাম্মদ মুশফিকুল ফজল আনসারী।সরকারি তরফে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হচ্ছে না। বিশেষ করে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত চলমান রাজনৈতিক সমস্যাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আখ্যা দিয়ে এ বিষয়ে অসহযোগিতামূলক মনোভাব দেখিয়েছেন।মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জাতিসংঘের অবস্থান জানতে চেয়ে মহাসচিবের ডেপুটি মুখপাত্র ফারহান হককে প্রশ্ন করেন এক বিদেশি সাংবাদিক। জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার কোনো তথ্য জানা নেই। তবে সহকারী মাহাসচিব তারনকো মহাসচিব অর্পিত দায়িত্ব অনুসারে কাজ শুরু করেছেন। এ মুহূর্তে তার বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা না থাকলেও সঙ্কট নিরসনে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তিনি অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও অব্যাহত সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনায় ফের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। মহাসচিব বান কি মুনের এ উদ্বেগের কথা জানান তার ডেপুটি মুখপাত্র ফারহান হক।বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়েই চলেছে। মানুষ নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছে। এমন বাস্তবতায় জাতিসংঘের নেয়া উদ্যোগের কানো ফলাফল আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ফারহান হক বলেন, ‘অব্যাহতভাবে মানুষের প্রাণহানি ও সহিংসতায় ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিব অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতি প্রতিষ্ঠায় মহাসচিব বান কি মুন ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশ্র“তিবদ্ধ। সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে মাহাসচিব বান কি মুন আশাবাদী।

উল্লেখ্য,দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে ২০১৩ সালের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে এসেছিলেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফারনান্দেজ তারানকো। ওই সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বৈঠকে মধ্যস্থতা করেছিলেন তিনি। তবে তার চলে যাওয়ার পর এ ব্যাপারে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।এদিকে, অবরোধ-হরতালে চলমান নাশকতা ও সহিংসতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রীকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন।

তার উপ মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, সংলাপের মধ্য দিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ অবসানের আহবান জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে।তবে চিঠিতে মহাসচিব কি লিখেছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন ফারহান।তবে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, বান কি-মুন সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন এবং দেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার স্বার্থে চলমান অস্থিরতার অবসান ঘটানো জরুরি বলে মত দিয়েছেন।
সূত্রটি জানায়, রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসানে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আলোচনা শুরুর লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রয়োজন হলে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর সহায়তা নিতে পারে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মহাসচিব।দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে ২০১৩ সালেও শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি লেখেন। অগাস্টে একই আহ্বান জানাতে তিনি দুই নেত্রীকে টেলিফোনও করেন।বান কি-মুনের দূতিয়ালিতে সে সময় দুই দফা ঢাকা সফর করেন অস্কার ফারনান্দেজ তারানকো। ঢাকায় এসে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা বসে এই সহকারী মহাসচিব সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার তাগাদা দিয়ে যান।বান কি-মুনের দূতিয়ালির পরও সে সময় সংলাপ ব্যর্থ হয় এবং বিএনপির বর্জনে সহিংসতার মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।এরপর প্রায় এক বছর পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নতুন আন্দোলনে আবার রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়।

৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করতে না পেরে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সারা দেশে লাগাতার অবরোধ ডাকেন, ফিরে আসে আগুন-বোমার নাশকতা। ফেব্র“য়ারির শুরু থেকে সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া প্রতিদিনই অবরোধের সঙ্গে হরতাল করছে ২০ দলীয় জোট।সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, অবরোধের এই দেড় মাসে পেট্রোল বোমা ও ককটেল হামলায় সারা দেশে নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৫ জন, আহত হয়েছেন ৫৫৬ জন। এ সময় ৬৬৪টি যানবাহন পেট্রোল বোমা দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ৪১০টি যানবাহন ভাংচুর করেছে অবরোধ সমর্থকরা। ২৮টি স্থাপনা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রেলপথে নাশকতার ঘটনা ঘটেছে ২৫টি; নৌপথে ছয়টি।নাশকতার কয়েকটি ঘটনায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলাও হয়েছে। অবশ্য বিএনপি বলে আসছে, সরকারি লোকেরাই নাশকতা করে ২০ দলের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে সব পক্ষকেই সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

গত বুধবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণহানিতে সংস্থার পক্ষ থেকে উদ্বেগের কথা জানান।ওই সময় তিনি জানান, মহাসচিব বান কি মুন সাবেক সহকারী মহাসচিব (রাজনীতি বিষয়ক) অস্কার ফারনান্দেজ-তারানকোকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান সম্প্রতি ভারতীয় দৈনিক টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে বলেন, সংকট নিরসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংলাপ আয়োজনে জাতিসংঘের যে কোনো উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানাবেন।জাতিসংঘ মহাসচিবের চিঠির বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোনো বক্তব্য পাওয়া না গেলেও দলটির নেতারা সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে বলে আসছেন, বিএনপি যতদিন নাশকতার রাজনীতি’ বন্ধ না করবে, ততদিন তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হতে পারে না।