23-02-15-PM_Cabinet Meeting-2

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ ফেব্রুয়ারি: সরকারি প্রকল্প এবং উন্নয়ন কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সচিবদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিতবৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের এ কথা জানান৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ভোগবিলাস করতে নয়; জনগণের জন্য কাজ করতে সরকার গঠন করেছে৷ এ সময় সরকারি প্রকল্পগুলোর তদারকি ও মূল্যায়ন করতে ১০ মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব৷

মোশাররাফ হোসাইন আরো বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতোই সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজের তদারকি ও মূল্যায়ন করতে গভর্মেন্ট পারফরমেন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কমিটি’ গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে৷স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য, গণপূর্ত, যোগাযোগসহ প্রাথমিকপর্যায়ে ১০টি মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিবদের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের চুক্তি হয় বলেও জানান তিনি৷সরকারি কর্মচারীদের বার্ষিক কর্মমূল্যায়ন ও তাদের দায়িত্বের প্রতি দায়বদ্ধতার লক্ষ্যে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বার্ষিক কর্মসংস্থান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে৷এর মাধ্যমে সরকারি দফতরসমূহের দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি এবং নিবিড় পরিবীক্ষণের মাধ্যমে বিঘোষিত নীতি ও কর্মসূচির দ্রুত বাসত্মবায়নে এক সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হলো৷এই চুক্তির আওতায় প্রত্যেক মন্ত্রণালয়/বিভাগ সরকারের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রাধিকার বিশেষত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২১ ও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এবং কর্মবিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের বাজেট কাঠামোর আলোকে স্ব-স্ব বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি প্রণয়ন করবে৷প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সোমবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে কেবিনেট সচিবের সঙ্গে ১০ মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবগণের এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম মোশাররফ হোসেইন ভূইঞা বলেন, এর মাধ্যমে সরকারি কর্মসংস্থান ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আওতায় ১০টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে বার্ষিক কর্মমূল্যায়ন চুক্তির আওতাভূক্ত হলো৷সচিব বলেন, এটি হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা ও তাদের বার্ষিক কর্মদক্ষতা মূল্যায়নে জনপ্রশাসনের অভ্যনত্মরীণ একটি ব্যবস্থা৷ চুক্তিতে কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা পরিমাপের রূপরেখা রয়েছে৷

মোশাররফ হোসেইন বলেন, প্রত্যেক সরকারের রাজনৈতিক রূপরেখা রয়েছে৷ সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই রূপরেখা যথাযথভাবে বাসত্মবায়ন করা৷ এলৰ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মমূল্যায়নও প্রয়োজন৷তিনি বলেন, সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) নেতৃত্বে একটি কোর কমিটি ভারত, ভূটান, কেনিয়া, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারি কর্মকর্তাদের দক্ষতা মূল্যায়ন ব্যবস্থা পর্যালোচনার মাধ্যমে এই সরকারি কর্মসংস্থান ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রণয়ন করেছে৷

স্বাক্ষরকৃত মন্ত্রণালয়/বিভাগ হচ্ছে- সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ৷অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগও পর্যায়ক্রমে এই চুক্তিতে স্বাৰর করবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ কথা বলেন৷চুক্তি স্বাক্ষর শেষে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, কর্মসম্পাদন ব্যবস্থা পদ্ধতি ও বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি নিবিড় পরিবীৰণের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের দক্ষতা ও জবাবদিহিতার উন্নয়ন এবং সরকারের নীতি ও কর্মসূচি দ্রুত বাসত্মবায়নে সহায়তা করবে৷মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকার জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন ২০০০ ও জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল ২০১২ এর সুপারিশের আলোকে সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস’া পদ্ধতি চালুর সিদ্ধানত্ম নিয়েছে৷ এই পদ্ধতি বাসত্মবায়নে গত বছরের জুন ও নভেম্বর মাসে আনত্মর্জাতিক বিশেষজ্ঞের সহযোগিতায় তিনটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়৷ এই কর্মশালায় সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিব এবং প্রত্যেক মন্ত্রণালয়/বিভাগের একজন করে অতিরিক্ত সচিব/যুগ্ম-সচিব অংশগ্রহণ করেন৷

এদিকে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সংক্রান্ত ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেন৷

বৈঠক শেষে মন্ত্রিসভার একাধিক মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফাইল অনুমোদন করেছেন৷নিয়মানুযায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এখন নির্বাচন কমিশনকে(ইসি) ডিসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুরোধ জানালে ইসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে৷

ঢাকা সিটির জন্য সময়মত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে বলেও জানান একজন মন্ত্রী৷ তবে একাধিক প্রার্থী যেন না থাকে, সে বিষয়ে সমন্বয় করে প্রার্থী দেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী৷

তবে নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সব সদস্যকে নির্বাচন নিয়ে কাজ করতে বলেছেন৷ বিশেষ করে ঢাকা মহানগরের দায়িত্বে যেসব আওয়ামী লীগ নেতা রয়েছেন তাদের জোর দিয়ে কাজ করতে বলেছেন৷একজন মন্ত্রী বলেন, সরকার চায় সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক৷সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভার সদস্যদের দু’একজন এই মুহূর্তে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন৷ তারা বলেছেন, এই মুহূর্তে নির্বাচন দেওয়া ঠিক হবে কি না- তা ভেবে দেখা দরকার৷এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আপনারা যে সুবিধাজনক সময়ের কথা চিন্তা করছেন, সেই সুবিধাজনক সময় আপনাদের কাছে কখনও মনে হবে না৷ নির্বাচন হওয়া দরকার৷ সিটি করপোরেশনের জনসাধারণ এভাবে কষ্ট ভোগ করতে পারে না৷নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সেবা যাতে জনগণ পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে৷ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয় মন্ত্রিসভায়৷ চট্টগ্রাম সিটি এবং ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থী কাকে করা হবে তা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সরকারমন্ত্রীকে দ্রুত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নির্দেশ দেন৷ সে সময় ঢাকা উত্তরের জন্য আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হককে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন৷২০০২ সালের এপ্রিলে ভোটের পর ২০০৭ সালের মে মাসে অবিভক্ত ডিসিসির নির্বাচনের মেয়াদ শেষ হয়৷অন্যদিকে, সেনা হস্তক্ষেপ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার টেলিফোন কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গ্রেফতারের দাবি উঠেছে মন্ত্রিসভায়৷

এ কথোপকথনকে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে মন্ত্রিসভার সদস্যদের অনেকেই মান্নাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন৷ আবার কেউ কেউ মান্নাকে বিএনপির পেইড এজেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন৷সংবাদমাধ্যমে মাহমুদুর রহমান মান্নার দু’টি পৃথক অডিও প্রকাশ হয়৷বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা এবং অপর একজন অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে মান্নার কথোপকথনের ওই অডিও নিয়ে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানিয়েছে সূত্র৷ বৈঠকে ওই অডিও নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যরা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কেউ কেউ মান্নার আগের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও কথা বলেছেন৷ তারা বলেন, মান্না একেক সময় একেক দল করেছেন৷ কখনও জাসদ, কখনও বাসদ, এরপর আওয়ামী লীগ- এভাবে দল বদল করেছেন৷ তার নিজের রাজনৈতিক কোনো চরিত্র নেই৷এ নিয়ে হাস্যরসও হয় মন্ত্রিসভায়৷

বিএনপির পেইড এজেন্ট হয়ে এখন তিনি কাজ করছেন বলেও মন্ত্রিসভার সদস্যদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন৷আবার কেউ কেউ বলেছেন, মান্নার বড় ভাই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ জামায়াতের তত্‍কালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ করতেন মান্নার বড় ভাই৷ ঘটনাচক্রে হয়তো মান্না জাসদে যোগ দিয়েছিলেন৷মন্ত্রীদের ক্ষোভের কথা শোনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কথোপকথনের যে তথ্য ফাঁস হয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে, তারা একটা ষড়যন্ত্র নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন৷ এখন আপনারাই চিন্তা করেন, ভেবে দেখেন, কী করা যায়?