khulna-1

দৈনিকবার্তা-খুলনা, ১১ মার্চ: খুলনা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন রাস্তা ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ৫৫ লাখ টাকার দরপত্র ভাগাভাগি করে নিয়েছেন ক্ষমতাসীন নেতারা। টেন্ডার জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার নগর ভবনে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। নগরীর গল্লামারী এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা কেসিসির পূর্ত বিভাগের সামনে ও নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে পাহারা বসায়। এর আগের রাতে সাধারণ ঠিকাদারদের কাছ থেকে দরপত্র নিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।কেসিসি’র সূত্র জানায়, গল্লামারী এলাকায় লিনিয়ার পার্কের প্রবেশ রাস্তার উন্নয়নের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় গত ১৫ ফেব্র“য়ারি। এই কাজের ব্যয় ধরা হয় ৫৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা। গতকাল ছিল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৬টি সিডিউল বিক্রি হয়। জমা পড়ে ১৪টি। এর মধ্যে বৈধ কাগজপত্র রয়েছে মাত্র ৩টির। বাকি ১০টির কোনো কাগজপত্রই নেই। একটির আংশিক কাগজপত্র আছে।

গতকাল বুধবার বেলা ১২টায় নগর ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, মূল ভবনের পেছনে লোকজন নিয়ে দাড়িয়ে আছে মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজুর রহমান হাফিজ। ২০০৪ সালে প্রণীত পুলিশের তালিকায় খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অন্যতম ছিলেন তিনি। পূর্ত ভবনের সামনে চেয়ার পেতে ৬/৭ জন যুবক বসা। তারা গল্লমারী এলাকার উঠতি সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। ভবনের দ্বিতীয় তলায় নির্বাহী প্রকৌশলী-২ লিয়াকত আলী খানের কক্ষে ছিল দরপত্র জমা দেওয়ার বাক্স। সেখানেও হাফিজের সহযোগীরা পাহারায় ছিলেন। কেসিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, এর আগেও কেসিসিতে দরপত্র সিন্ডিকেট হয়েছে। কিন্তু গত ৭ বছরের মধ্যে বহিরাগতদের নিয়ে মহড়া এবং গেটে পাহারা এবারই প্রথম।নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার জানান, গল্লামারী এলাকার রাস্তার কাজটি অন্যের ঠিকাদারি লাইসেন্সে হাফিজ করতে চায়। এজন্য সিন্ডিকেট করে দরপত্র জমা দেওয়া হচ্ছে। তারা জানান, কেসিসি ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তসলিম আহমেদ আশা ও যুবলীগ নেতা হাফিজ মঙ্গলবার রাতেই অন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে সিডিউল নিয়ে নিয়েছেন।

বিষয়টি স্বীকার করে তসলিম আহমেদ আশা গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ১৬ জন ঠিকাদার মিলে আমরা বৈঠক করেছি। সেখানে সবার সম্মতিতে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেভাবেই দরপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, হাফিজ কেসিসির নিয়মিত ঠিকাদার। এর আগে সে কেসিসির সড়কের কাজ করেছে। তবে পূর্ত ভবনের সামনে চেয়ার নিয়ে পাহারায় থাকা যুবকদের তিনি চেনেন না।তবে টেন্ডার ভাগাভাগির অভিযোগ অস্বীকার করে যুবলীগ নেতা হাফিজুর রহমান হাফিজ সাংবাদিকদের বলেন, তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম বাঁধন অ্যান্ড কোং। এই প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়নি। তিনি ব্যবসায়িক কাজে সিটি করপোরেশনে গিয়েছিলেন। এছাড়া কাজী ট্রেডার্স এর সাথে তার কোনো সম্পক্তৃতা নেই।

কেসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী-২ লিয়াকত আলী খান সাংবাদিকদের জানান, জমা পড়া দরপত্রগুলোর মধ্যে কাজী ট্রেডার্স সর্বনিন্ম দর দিয়েছে ৫৫ লাখ ৪০ হাজার ১৭০ টাকা। এটি টুটপাড়া এলাকার কাজী তরিকুল ইসলামের প্রতিষ্ঠান। যাচাই-বাছাই কমিটির পর্যালোচনা শেষে ঠিকাদার চূড়ান্ত হবে। তিনি বলেন, দরপত্র জমা দেওয়া নিয়ে ঠিকাদারদের সিন্ডিকেট হওয়া বা ঠিকাদারদের বাঁধা দেওয়ার কোনো অভিযোগ তিনি পাননি। তার কক্ষে বসে টেন্ডার পাহারা সম্পর্কে তিনি বলেন, এরা সবাই কেসিসির ঠিকাদার। সবাই কোনো না কোনো কাজে বসে ছিলেন।