unnamed5

দৈনিকবার্তা- বান্দরবান, ১১ মার্চ: পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান(প্রতিমন্ত্রী সমমর্যাদা সম্পন্ন) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা’র পূর্ব-নির্ধারিত সফরকে কেন্দ্র করে বান্দরবান সদর বালাঘাটা নামক স্থানে পাহাড়ী সংগঠনের সাথে হরতাল সমর্থকদের সংঘর্ষের দাওয়া-পাল্টা-দাওয়া ঘটনা ঘটেছে । দফায় দফায় ঘটনায় উভয় পক্ষের ১৪জন আহত হয়েছে । পরে পুলিশ ৩ব্যক্তিকে আটক করা হয় । বান্দরবান জেলা শহরে হরতাল চলাকালে কোন যানবাহন চলাচল করেনি । গুরত্বপুর্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল ।

এ ঘটনার হামলায় শিকার হয়েছেন সন্তু লারমা সফর সংগী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বান্দরবান সদর থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক পুছোথোয়াই মারমা(৪০), পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বান্দরবান জেলা শাখার সদস্য পরিমল চাকমা(২৩), পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের লেমুছড়ি শাখার সদস্য স্বপন তঞ্চঙ্গ্যা, জনসংহতি সমিতির কুয়ালং ইউপি শাখার সদস্য মংবাথোয়াই মারমা(৫২), পিসিপির বালাঘাটা শাখার সদস্য রকি তঞ্চঙ্গ্যা এবং জনসংহতি সমিতির সদস্য রামবাবু মারমা(৬০) গুরুতরভাবে আহত হন।

গুরুতর আহত অবস্থায় তাদেরকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এসময় পুছোথোয়াই মারমাকে হরতাল সমর্থনকারীরা মাথায় ও শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতরভাবে জখম করা হয়।বান্দরবানে সন্তু লারমা সরকারী সফরকে বানচাল করার উদ্দেশ্যে তথাকথিত নতুন সংগঠন ‘জাগো পার্বত্যবাসী’ এর ব্যানারে জেলায় বুধবার থেকে ৭২ ঘন্টার হরতাল চলছে । পাহাড়ে চাঁদাবাজী-সন্ত্রাসী-গুম-অপহরণ বন্ধের দাবিতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা আগমন প্রতিহত করতে কয়েকটি সমমনা বাঙালিদের সংগঠন ‘জাগো পার্বত্যবাসী’ ডাকে বান্দরবানে টানা ৭২ ঘন্টার হরতালে ১ম দিন পালিত হয়েছে।

বুধবার সকাল হতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থান নেয় হরতাল সমর্থকরা। সকাল থেকে যান চলাচল করেনি কোথাও। বান্দরবান-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-রাঙ্গামাটি রুটে কোন দুরপাল্লা বাস ছেড়ে যায়নি। বাস টার্মিনালে বুকিং কাউন্টারগুলো রয়েছে বন্ধ। সকালে বালাঘাটা স্বর্ণমন্দির এলাকায় বড় পুলের পাটাতন তুলে ফেলে হরতাল সমর্থকরা। এরপর পুলিশ এসে পিকেটারদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বুধবার দুপুর বারটায় সন্তু লারমা বান্দরবানে পৌঁছলে উত্তেজনা আরও ছড়িয়ে পড়ে। বালাঘাটা এলাকায় সন্তু লারমা গাড়ি বহরে একটি খোলা জীপে ভাঙচুর করে হরতাল সমর্থকরা। এ সময় হরতাল সমর্থক ও স্থানীয় পাহাড়ীদের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ১৪ জন আহত আহত হয়। আহতরা বান্দরবান সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় হুমায়ুন নামে আরো ৩জনকে আটক করেছে পুলিশ।

এদিকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে শহরের সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। শহর এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।বান্দরবান সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ইমতিয়াছ আহমেদ বলেন, পরিস্থিতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা উভয় পক্ষকে (পাহাড়ি-বাঙালি) শান্ত থাকার আহবান করেছি।প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায় যে, শ্রী সন্তু লারমার গাড়ী বহর বান্দরবান শহরের বালাঘাটা এলাকায় পৌঁছলে বহরের সবচেয়ে পেছনে থাকা একটি জীপ(চাঁদের গাড়ি) ও দু’টি মটর সাইকেলের উপর সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এ হামলার সন্ত্রাসীরা একটি মটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আওয়ামী লীগের বান্দরবান জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য মুজিবুল হক এবং বান্দরবান জেলা সেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক ও বান্দরবান পৌর মেয়র জাবেদ রেজার ইন্ধনে আবিদুর রহমান, কামাল উদ্দিন, নুরুল আলম, গোলাম সারোয়ার, আবদুল জলিল, সিরাজ খলিফা ও ইয়াসমিন চৌধুরীর নেতৃত্বে এ হামলা সংঘটিত হয় বলে জানা যায়।

বুধবার বিকেলে জনসংহতি সমিতির সহ-তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান গুরুতর আহত তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তারা হলেন মংবাথোয়াই মারমা, পাইঅংপ্র মারমা ও স্বপন তঞ্চঙ্গ্যা। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান(প্রতিমন্ত্রী সমমর্যাদা সম্পন্ন) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা’র পূর্ব-নির্ধারিত বান্দরবান সরকারী সফরকে বানচাল করার উদ্দেশ্যে তথাকথিত ‘জাগো পার্বত্যবাসী’ এর ব্যানারে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী সন্ত্রাসী এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কর্তৃক বান্দরবান জেলায় বুধবার থেকে ৭২ ঘন্টার হরতাল আহ্বান করা হয় । বান্দরবান যাওয়ার পথে বান্দরবান সদর উপজেলার বালাঘাটা নামক স্থানে শ্রী লারমার গাড়ী বহরের উপর প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে এক সংঘবদ্ধ ন্যাক্কারজনক হামলা চালানো হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এ ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং সেই সাথে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের অচিরেই গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং আহত ব্যক্তি যথাযথ চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানাচ্ছে।

উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিদিন্দ্রয় বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা বান্দরবান শহরের ফারুক পাড়া এলাকায় আগামী শুক্রবার পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের একটি সম্মেলনে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। গত মঙ্গলবার সকালে বান্দরবান প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বুধবার হতে ৭২ ঘন্টার হরতালের ডাক দেয় ‘জাগো পার্বত্যবাসী’ ব্যানারে কয়েকটি সমমনা বাঙালিদের সংগঠন। ‘জাগো পার্বত্যবাসী’র আহবায়ক ও জেলা বিএনপি’র সহযোগী সংগঠনের জাতীয়তাবাদী যুবদলের আহবায়ক আবিদ রহমানে সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর জলিল, যুবদলের নেতা গোলাম সরোয়ার সোহাগ, সিরাজুল ইসলাম ও কামাল উদ্দিন।