47277_1

দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ৮ এপ্রিল: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দেশের চিকিৎসা সেবাকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তোলা হবে। যাতে চিকিৎসার জন্য এদেশের কাউকে অন্য দেশে যেতে না হয়। আমরা চিকিৎসা সেবা জনগণের দোরগোরায় পৌছে দিতে চাই। নার্সিং পেশা সবচে শ্রেষ্ঠ পেশা। নার্সিং পেশাকে আমি অত্যন্ত সম্মান করি। নার্সরা সেবা দিয়ে একজন রোগীকে সুস্থ্য করে তোলেন। এ পেশাকে আমরা অত্যান্ত গুরুত্ব দিচ্ছি। নার্সিংএ ¯œাতক, মাষ্টার্স ও পিএইচডিসহ উচ্চতর ডিগ্রি করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। শীঘ্রই আরো ১০ হাজার নার্স নিয়োগ দেয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী বুধবার সকালে গাজীপুরে কাশিমপুরের সারাবোর তেতুইবাড়ি এলাকায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে নার্সিং কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের সেবা করা। আমরা সেবার মানসিকতা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে যেন আরো হাসপাতাল গড়ে উঠতে পারে সেজন্য আমর সুযোগ করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, আগে বিশেষায়িত কোন হাসপাতাল ছিলই না। তাও আমরা করেছি। নার্সিং সেবা মহৎ পেশা এ নার্সিং কলেজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সুযোগ পাবে। তিনি প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখতে স্থানীয় জনগণ ও জন প্রতিনিধিদের সহায়তা কামনা করেন। তিনি স্বাস্থ্য সেবা নিতে বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করে বলেন, আমি নিজেও অসুস্থ্য হলে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিব।

প্রধানমন্ত্রী জানান, এ হাসপাতালের সামনের সড়কে একটি আন্ডারপাস তৈরী করা হবে। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল বিশেষায়িত হাসপাতালটিকে পর্যায়ক্রমে ৫০০শয্যায় উন্নীত এবং একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হবে। তিনি মালয়েশিয়ার কেপিজে হেলথ কেয়ার বার্হাড’র প্রেসিডেন্টের বরাদ দিয়ে বলেন, এ প্রতিষ্ঠান থেকে শ্রেষ্ঠ ১০জন নার্সকে বিনামূল্যে মালয়েশিয়ায় তাদের প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর প্রশিক্ষণের সুযোগ দেয়া হবে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’র সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমানের সভাতিত্বে নার্সিং কলেজ চত্বরে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, প্রকল্প পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, মালয়েশিয়া কেপিজে হেল্থ কেয়ার বার্হাড-এর প্রেসিডেন্ট তুয়ান হাজি আমির উদ্দিন আব্দুল সাতার। এছাড়া অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বক্তব্য রাখেন বোর্ড অব ডিরেক্টরসের সদস্য নাজমুল হাসান পাপন, স্বাগত বক্তব্য রাখেন জয়েন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ মল্লিক ও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কলেজের নবীন ছাত্রী সাদিয়া ফারহানা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা একটি যুগোপযোগী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করেছি। দেশের উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় হাসপাতালগুলোর ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। বিগত ৬ বছরে সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৮ হাজার বেড বাড়ানো হয়েছে। উন্নত যন্ত্রপাতি ও অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করা হয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ২৪টি সরকারী হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রামীন জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আমরা ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সালের মেয়াদে সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন শুরু করি। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে সেগুলো বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে আমরা ক্লিনিকগুলো আবার চালু করি। বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার ৬০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে গ্রামীণ শিশু ও নারী-পুরুষ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। বিনামূল্যো প্রায় ৩০ ধরনের ঔষধ দেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অফ এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এর বেড সংখ্যা ৭০০ থেকে ১৫০০-তে উন্নীত করা হয়েছে। এখানে নবনির্মিত আউটডোর কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করা হয়েছে। এখন ২৪-ঘন্টা সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে। আমরা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল স্থাপন করেছি। ৫০শয্যা বিশিষ্ট জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটকে ৩০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। ৫০০ শয্যার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স স্থাপন করেছি। সরকারি কর্মচারিদের জন্য ১৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল এবং জাতীয় ইএনপি ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২য় ইউনিট চালু করা হয়েছে। ঢাকার কুর্মিটোলায় ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল এবং খিলগাঁওয়ে ১৫০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল চালু করেছি। ৩০০ শয্যার জাতীয বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট স্থাপনের প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষার প্রসারে সরকারি ৫টি সহ ২০টি নতুন মেডিক্যাল কলেজ , ১১টি ডেন্টাল কলেজ, ৪৭টি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, ৭২টি মেডিক্যাল এসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুল, ১০টি নার্সিং কলেজ এবং ৩১টি নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে। মিড ওয়াইফারী কোর্স চালু করা হয়েছে। মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস থেকে ৬ মাসে উন্নীত করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এজন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘের এমডিজি এওয়ার্ড ও সাউথ-সাউথ এওয়ার্ড পেয়েছে। মানুষের গড় আয়ু ৭০ বছরে উন্নীত হয়েছে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি গত পাঁচ বছরে শিক্ষা, কৃষি, শিল্প-বাণিজন্য, যোগাযোগ, ক্রীড়া প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি সেবা ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছি। অর্থনীতিতে ৬.২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আমরা মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কীম এবং লেকটের্টি মাদার ভাতা চালু করেছি। শিশুদের টিকাদান নিশ্চিত করেছি। আটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসা ও সেবা দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আরও আনেক এগিয়ে যেতে পারতাম। মানুষ ভালো আছে দেখলেই, বিএনপি নেত্রীর মাথা খারাপ হয়ে যায়। বিগত তিনটি মাস ধরে তারা অকারণে মানুষের উপর অত্যাচার , জুলুম, নির্যাতন চালিয়েছে। একশ’র বেশি নিরীহ মানুষকে পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে হত্যা করেছে। কয়েক শ’ মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করেছে। হাজার হাজার বাস, ট্রাক, যানবাহন পুড়িয়ে দিয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও তারা একইভাবে মানুষ হত্যা এবং অর্থণীতির ক্ষতিসাধন করেছে। এদেশের মানুষ তাদের এই হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের আন্দোলনে মানুষ সাড়া দেয়নি। কারণ, মানুষ উন্নয়ন চায়, ভালোভাবে বেঁচে থাকতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ আর পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চায় না।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা দেশকে স্বাবলম্বী করে তুলেছি। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। মুদ্রস্ফীতি ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ২৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বিএনপি-জামাতের ধ্বংসাত্বক কার্যকলাপের মধ্যেও আমাদের রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্জিত হচ্ছে। আমরা নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করছি। আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করব, ইনশাআল্লাহ। আসুন, সকর ভেদাভেদ ভূলে একসঙ্গে দেশের এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করি।

তিনি বলেন, আজকে নাসিং কোর্স চালুর মধ্য দিয়ে শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ পরিপূর্ণতা পেল। এজন্য আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ এই হাসপাতাল নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলেজের নার্সিং কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। নার্সিং কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা আনম গোলাম রাব্বানী জানান, ২০১৩সালের ১৮নবেম্বর ওই কলেজের উদ্বোধন করেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতোশ্রী মোহাম্মদ নজীব বিন তুন আব্দুল রাজাক ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’র সহ-সভাপতি শেখ রেহানা। বেসিক কোর্সে ২৪জন এবং পোস্ট বেসিক কোর্সে ৪০জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করছে এ প্রতিষ্ঠানটি।