Gazipur-(1)- 22 April 2015-Open University (4th Convocation)

দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ২২ এপ্রিল: শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বিশ্বায়নের যুগে শিক্ষা অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ প্রদানে সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তবে নিঃসন্দেহে এটি ব্যয়বহুল এবং আমাদেও সীমিত সম্পদ দিয়ে তা মেটানো এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। উ›মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভার্চুয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হবে। আধুনিক প্রযুক্তির এই সময়ে শিক্ষা হবে মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধির হাতিয়ার। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষাকে সহজেই ব্যয় সাশ্রয়ী করা সম্ভব। গাজীপুরে উ›মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) ৪র্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বুধবার এ কথা বলেন। এসময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উ›মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে সততা, দেশপ্রেম ও বাঙালি সংস্কৃতির আলোকে, অসাম্প্রদায়িক উদার দৃষ্টিভঙ্গীকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান।

বুধবার বিকেলে গাজীপুর ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত বাউবি’র এ ৪র্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হমিদের পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি সভাপতিত্ব করেন এবং গ্র্যাজুয়েটদের মাঝে সনদ বিতরণ করেন। অনুষ্ঠাণে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী) অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী সমাবর্তন বক্তব্য রাখেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবুল হোসেন আহমেদ ভুঁইয়ার পরিচালনায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মান্নান। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন।

মন্ত্রী বলেন, উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম একটি বৃহৎ ও বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও দূর শিক্ষণ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পদ্ধতির অন্যতম মাধ্যম। এই বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজটহীনভাবে কোর্স ক্রেডিট পদ্ধতিতে শিক্ষাদান অব্যাহত রাখছে। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে যারা বঞ্চিত তারা এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের কাজে লাগাচ্ছেন। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

অনুষ্ঠানের সমাবর্তন বক্তা ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, বুদ্ধিভিত্তিক চর্চা, মানবিক বিকাশ, গণতান্ত্রিক চেতনার স্ফুরণ ও সংস্কৃতির মুক্ত আঙ্গিনা বিশ্ববিদ্যালয়। উ›মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ই-লার্ণিং, ভার্চুয়াল লার্ণিং ও ব্লেন্ডেড এডুকেশনসহ শিক্ষার নানাবিধ প্রযুক্তির কৌশল ব্যবহার করে এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে মধ্য ভার্চুয়াল ইউনিভিার্সিটিতে রূপান্তর করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মাননান স্বাগত ভাষণে বলেন, দেশের সর্বস্তরের মানুষকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে উ›মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বদ্ধপরিকর। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করার জন্য উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, নাতি-নাতনীদের বিনা বেতনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, এক হাজার ছয়শত স্টাডি সেন্টারের ২৪ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণের জন্য ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব আন্তর্জাতিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যার নির্মাণ কাজ সমাপ্তির পথে। তিনি বলেন, সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভার্চুয়াল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়া হবে। ইতোমধ্যে এ কাজে ৯০% শেষ হয়েছে। এজন্য ওয়েব রেডিও, ওয়েব টেলিভিশন, মাইক্রো এসডি কার্ড, ভার্চুয়াল ইন্টার একটিভ ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

বাউবি কর্তৃপক্ষ জানায়, উন্মুক্ত এবং দূর শিক্ষণ পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের জন্য দেশের একমাত্র এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৭ হাজার গ্রাজুয়েট প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদেরকে এ সমাবর্তনে সনদ প্রদান করা হয়েছে।