DoinikBarta_দৈনিকবার্তা 16

দৈনিকবার্তা-কলাপাড়া, ২৭ এপ্রিল: কলাপাড়ায় শতাধিক খাল ভরাট হয়ে শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে।কোথাও এক ফোঁটা পানি নেই। চাষাবাদ তো দুরের কথা গবাদিপশুকে খাওয়ানো কিংবা নিজেদের ব্যবহারের পানি পর্যন্ত নেই। পুরনো এ খালগুলো এভাবে ভরাট হয়ে পানি শুন্য থাকায় কৃষির আবাদসহ মানুষের জীবনযাত্রায় ভয়ানক নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এসব খাল পুনর্খনন করা না হলে হাজার হাজার একর কৃষি জমির ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যহতের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনকি আমন আবাদও চরম শঙ্কায় পড়েছে। কারণ বর্ষা মৌসুমে রোপা আমনের জন্য পানি ধারণ করে রাখা যায় না। প্রাকৃতিকভাবে এবং খননের মাধ্যমে সৃষ্ট এসব খাল এখন কৃষকের কোন কাজেই আসছে না।

৬০ এর দশকে কলাপাড়ার গোটা উপকূলে কৃষি জমিতে চাষাবাদ করতে এবং মানুষের জীবন সম্পদ রক্ষায় করা হয় বেড়িবাঁধ। পরবর্তীতে এসব খালের পানি ওঠানামা করাতে বাঁধের অভ্যন্তরে খালের সঙ্গে করা হয় স্লুইসগেট। কিন্তু এর পরবর্তীতে এসব খালের নব্যতা ধরে রাখতে পুনর্খনন করা হয়নি। খালের দুই পাশের জমি চাষাবাদের সময় পানিতে জমির পলি ধুয়ে খাল ভরাট হয়ে যায়। ফলে এখন আর শুকনো মৌসুমে খালে এক ফোটা পানিও থাকছে না। এমনকি শত শত ভরাট খাল ও খালের শাখা সংলগ্ন জমির মালিকরা চাষাবাদের জমির সঙ্গে মিলিয়ে কওে ফেলেছে আবাদি জমিতে। ফলে জমির পানি ওঠানামা বন্ধ থাকছে। বর্ষা মৌসুমে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। আর শুকনো মৌসুমে থাকছে না এক ফোটা পানি। সব ফেটে চৌচির হয়ে যায়। নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাতলা গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিম জানান, গ্রামের মাঝখান দিয়ে অন্তত তিনটি খাল প্রবহমান ছিল। এখন বর্ষা মৌসুমে খালের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়। শুকনো মৌসুমে এক ফোটা পানি থাকছেনা। ১০ বছল আগেও এ খালের পানিতে শুকনো মৌসুসে রবিশস্যের আবাদ হতো।থাকত সেচের পানির মজুদ।

কিন্তু এখন বেহাল দশা। খাল-বিল আর চাষের জমি সব এক হয়ে গেছে। পানি না থাকার কারনে মাঠে কোন ঘাস পর্যন্ত জন্মায় না। গবাদিপশু পালন বন্ধের শঙ্কায় পড়েছে। চাষাবাদ তো গেছে একটি মৌসুম নির্ভর হয়ে। একই দশা ১২টি ইউনিয়নের ৯০ ভাগ খালের। কলাপাড়ার সবজির ভান্ডারখ্যাত নীলগঞ্জ ইউনিয়নের একজন সফল কৃষক সুলতান গাজী জানান, খাল রক্ষা করে মিঠা পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে না পারলে কলাপাড়ায় আগামি ১০ বছর পর কৃষি উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসবে। ফি বছর উপজেলা প্রশাসন কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ড ৫/৬টি খাল পুনর্খনন করছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। কৃষকের শঙ্কা খালকে ব্যবহার উপযোগী রাখতে না পারলে কৃষিকাজে চরম বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। ফি বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস ও বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গড়ে ৫-৬টি খাল পুনর্খনন করলেও পর্যাপ্ত নয়। আবার দু’একটি খাল পুনর্খনন করা হয়েছে নামে মাত্র। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা কৃষকের স্বার্থে যথাযথভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না।