full_253353826_1430117593

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৭ এপ্রিল: ভূমিকম্পের ঘটনায় নেপালে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৭’শ ছাড়িয়ে গেছে। মঙ্গলবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত এ হিসেব পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত তিন হাজার ৪শ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হযেছে। দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা ৬হাজার ৫০০ ছাড়িয়েছে। নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ৮০ বছরেরও বেশি সময় পর সবচেয়ে ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে নেপাল হয়ে উঠেছে যেন এক মৃত্যুপুরী। এছাড়াও নেপাল থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ১৯শ ভারতীয়কে। তাদেরকে ভারতে পাঠানো হয়েছে। খবর রয়টার্স, জিনিউজ।ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঠমান্ডু, সিন্ধুপালচোক, ললিতপুর, গোরখা এবং বখতপুর এলাকা। নেপালের রাজধানী থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে যেখানে ভূ কম্পনের উৎপত্তি স্খল সেখানে আজও উদ্ধার কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। অভিযান যতই এগুচ্ছে লাশের সংখ্যাও বাড়ছে। পাহাড় অধ্যুষিত নেপালের গ্রামগুলোতে মৃতের সংখ্যা বেশী বলে ধারনা হচ্ছে।প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সেখানে ধ্বংসস্তূপে অনেক জীবিত বা মৃত মানুষ আটকা পড়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্ধারকাজ চলছে এবং মৃতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা আছে।মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া ভবনগুলো থেকে আটকে পড়াদের আর্তনাদের মাঝে নেপালে রোববার নতুন করে ভূমিকম্পের শক্তিশালী পরাঘাত হয়েছে। কম্পন অনুভূত হয়েছে ভারত এবং বাংলাদেশেও।

এভারেস্টে আরো তুষারধসের খবর পাওয়া গেছে। এভারেস্টের বেস ক্যাম্প থেকে এ পর্যন্ত ২২ টি লাশ উদ্ধার হয়েছে এবং অন্তত ২১৭ জন পর্যটক নিখোঁজ হয়েছে বলে রোববার জানিয়েছে পর্যটন মন্ত্রণালয়।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ৬০ কিলোমিটার পূর্বে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার পরাঘাত অনুভূত হয়। লোকজন আতঙ্কে শহরের খোলা জায়গায় গিয়ে জড়ো হয়।পরাঘাত হচ্ছে একের পর এক। দুইদিনে নেপালে ৪০ টি পরাঘাত অনুভূত হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিসি)। পাহাড়ি রাস্তাগুলো ভূমিধসে কিংবা ফাটল ধরে বন্ধ হয়ে গেছে।বিভিন্ন হাসপাতালে এখনো আসছে মরদেহ। কেবল মরদেহই নয়, হাসপাতালে আসছে আহতরাও। হাজার হাজার আহতের জায়গা সংকুলান করতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।কেবলমাত্র রাজধানী কাঠমাণ্ডুতেই সাতশ’র বেশি মানুষের মৃত্যুহয়েছে। ধ্বংসস্তুপে আটকে পড়া অনেকের আর্তনাদ শুনেও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে সঙ্গে সঙ্গেই সাড়া দিতে পারছেন না উদ্ধারকারীরা। অনেকেই নেমে পড়েছেন খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজে। নেপালের কাঠমান্ডু এবং পোখরা নগরীর মাঝে শনিবার দুপুরে ৭ দশমিক ৯ মাত্রার এই ভূমিকম্পে বাংলাদেশ, ভারত ও চীনের বিস্তীর্ণ এলাকাও কেঁপে উঠে। ভারতে অন্তত ৫২ জন, তিব্বতে ১৭ জন এবং বাংলাদেশে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে, নেপালের ভূমিকম্পে প্রায় দশ লাখ শিশুর জরুরি সাহায্য প্রয়োজন। এ ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ২০০ প্রাণহানি ঘটেছে।জাতিসংঘ শিশু সংস্থা (ইউনিসেফ) জানিয়েছে, ত্রাণকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে কাজ করে যাচ্ছে।শনিবারের এ ভূমিকম্পে রাজধানী কাঠমান্ডুতে অসংখ্য শিশু ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয় শিবিরে ঠাঁই নিয়েছে। ইউনিসেফ তাদের অসুখ-বিসুখ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

এক বার্তায় জানানো হয়েছে, নেপালে ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৯ লাখ ৪০ হাজার শিশু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সাহায্য প্রয়োজন।বার্তায় আরো বলা হয় পর্যাপ্ত নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা না থাকায় অচিরেই পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি দেখা দেবে। অনেক শিশুই তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।ইউনিসেফ জানিয়েছে, দুটি কার্গো ফ্লাইটে চিকিৎসা সামগ্রী, তাঁবু, কম্বলসহ ১২০ মেট্রিক টন ত্রাণসামগ্রী এবং ত্রাণকর্মী পাঠানো হয়েছে।৭ দশমিক ৯ মাত্রার এ ভূমিকম্পে দেশটির কয়েকটি অংশের স্থাপত্য, পুরাতন স্মৃতিসৌধ, চমৎকার রাস্তাঘাট ও অন্যান্য অবকাঠামো ভেঙ্গেচুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে।