দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ৩০ এপ্রিল: গাজীপুরে এক কলেজ ছাত্রীকে (১৮) ধর্ষনের অভিযোগে এক প্রভাষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এঘটনায় ওই কলেজ শিক্ষককে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতের নাম আব্দুল আলী স্বপন (৩০)। সে গাজীপুর জেলা শহরের কাজী আজিম উদ্দিন কলেজের ইংরেজী বিষয়ের প্রভাষক এবং জয়দেবপুর থানাধীন রাজেন্দ্রপুরের নয়নপুর এলাকার মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে। এ ব্যাপারে বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ধর্ষক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রী মামলা দায়ের করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেপ্তারকৃত প্রভাষককে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মামলা ও বাদির বরাত দিয়ে কালীগঞ্জ থানার এসআই মো. মনিরুজ্জামান জানান, কাজী আজিম উদ্দিন কলেজের মানবিক শাখা থেকে ওই ছাত্রী এবার এইচ এসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। একই কলেজে লেখাপড়া করার সুবাদে ওই শিক্ষক আব্দুল আলী স্বপনের সঙ্গে প্রায় দুই বছর আগে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে শিক্ষক স্বপন ওই ছাত্রীকে নানা রকম প্রলোভন ও কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। মঙ্গলবার ওই ছাত্রীর অসুস্থ্য মা, ভিক্টিমের ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে জেলা শহরে ডাক্তার দেখাতে যান। পরে সেখানে রাত হয়ে যাওয়ায় অসুস্থ্য মা ছোট মেয়েসহ কালীগঞ্জের বাসায় না ফিরে রাতে জয়দেবপুর থানাধীন বিলাশপুরে ভিক্টিমের (ওই ছাত্রীর) বড় বোনের বাসায় থেকে যান। এ খবর জানতে পেরে শিক্ষক স্বপন মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই ছাত্রীর কালীগঞ্জের বাড়িতে যায়। পরে ওই ছাত্রীর ঘরে ঢুকে বিভিন্ন কথাবার্তা বলতে থাকেন। এসময় স্বপনকে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করলে সে ওই ছাত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে স্বপন খুন করার ভয়ভীতি দেখিয়ে রাত ১২টার দিকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে পাশের ঘরে নিয়ে তিনবার ধর্ষণ করে। পরে ধ্বস্তাধ্বস্তি ও কান্নার শব্দ পেয়ে আশেপাশের লোকজন গিয়ে ধর্ষককে আটক করে ও ছাত্রীকে উদ্ধার করে পুলিশে সোপর্দ করেন। ঘটনাটি নিয়ে পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যাক্তিবর্গের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হওয়ায় মামলা দায়েরে বিলম্ব হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ বৃহস্পতিবার দুপুরে ভিক্টিমকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
এদিকে কাজী আজিম উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. আলতাফ হোসেন জানান, গত ১ ডিসেম্বরে স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে একই ছাত্রীর সঙ্গে স্বপনের জেলা শহরের একটি বাসায় অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে গত ৬ ডিসেম্বরে একটি জাতীয় দৈনিক প্রত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়। পরে বিষয়টি তদন্তের জন্য কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক আয়েশ উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ১৫দিন পর ওই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন কর্মকর্তারা। তখন কোন অভিযোগকারী না পাওয়ায় কর্মকর্তারা তদন্ত প্রতিবেদনে ওই শিক্ষকের দুই বছরের ইনক্রিমেন্ট ও ৬মাসের প্রভিডেন্ট ফান্ড বন্ধ করা এবং ৬মাস তাদের পর্যবেক্ষন করা ও এসময়ে ওই ঘটনায়র পুনঃরাবৃত্তি ঘটলে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। পরে ১৮এপ্রিল পরিচালনা পর্ষদ এক সভায় তার বিরুদ্ধে ওই সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। বুধবার স্বপনের বিরুদ্ধে আবারো ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শিক্ষক স্বপনের স্ত্রী মাহফুজা আক্তার রিমা সাংবাদিকদের জানান, তাদের সংসারে রাইসা (৬) ও তামীম (৩) নামের দু’টি সন্তান রয়েছে। তিনি এঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।