PM_Ban_ki_moon__BG_947565180

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১ মে: কারচুপির অভিযোগ তদন্তের জন্য আহ্বান জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে বাংলাদেশের সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন।নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণকে স্বস্তিকর বললেও মাঝপথে তাদের সরে দাঁড়ানোকে মহাসচিব দুঃখজনক হিসাবে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছেন’ বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী জানান।তিনি জানান, শুক্রবার বেলা ১টা ৪৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তাদের মধ্যে প্রায় ১৪ মিনিট কথা হয়।প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেছেন, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো প্রাণহানী ছাড়া নির্বাচন হয়েছে।

গত ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্ধী বিএনপির প্রার্থীরা ভোট চলাকালেই কারচুপির অভিযোগে বর্জনের ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি জাতিসংঘ মহাসচিবও ইতোমধ্যে সব অনিয়মের নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেছেন, ‘বিএনপি গত তিন মাসে আন্দোলন করে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জনসম্পদ নষ্ট করেছে। মানুষ এসব চায় না। এ কারণে, মানুষ তাদের ভোট দেয়নি।বিএনপি সেটি বুঝতে পেরে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে’ ভোট শুরুর তিন ঘণ্টা পরই সরে দাঁড়িয়েছে বলে বান কি-মুনকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিএনপিকে নাশকতা, সন্ত্রাসের পথ ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড পরিহার করে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসার পরামর্শ দেবেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। তার কাছে এমন আশাবাদই ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শামীম চৌধুরী জানান, প্রধানমন্ত্রী বান কি মুনকে বলেছেন, তিন ঘণ্টা পর বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেও যে ভোট দলটির সমর্থিত প্রার্থীরা পেয়েছেন তাতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের নামে গত তিন মাসের সহিংসতার কথা তুলে ধরে জাতিসংঘ মহাসচিবকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের আন্দোলনের ডাকে জনগণ আসেনি, নেতা কর্মীরাও থাকে নি। একইভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েও মাঠে নামাতে পারেনি তার দল। নির্বাচন কেন্দ্রে এজেন্ট পাঠাতেও হয়েছে। আর তার কারণ তারা জনগণকে হত্যা করে আন্দোলন করেছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার জনগণকে শান্তি ও নিরাপত্তা দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। একই সঙ্গে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। বান কি মুন প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, এমডিজি অর্জন, শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। গণতন্ত্র সুসংহত করতে আওয়ামী লীগ সরকারের নিরলস কাজের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি স্পষ্টভাষায় সন্ত্রাস ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানান।

শামীম চৌধুরী জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনালাপে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসা স্বস্তিকর ছিলো কিন্তু মাঝপথে সরে যাওয়া দুঃখজনকএজন্য উদ্বেগও প্রকাশ করেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী টেলিফোন করার জন্য জন্য বান কি মুনকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বানকি মুনের আন্তরিকতার প্রশংসা করেন তিনি।তিন সিটিতেই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়েছে বলেও জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবে ভোট দিয়েছে। আইন শৃংখলাবাহিনী দৃঢ় ভূমিকা পালন করেছে বলেই দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোন প্রাণহানি ছাড়া নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হলো। নির্বাচনে ৪৪ শতাংশ ভোট পড়েছে জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবকে প্রধানমন্ত্রীর বলেন ভোটের সংখ্যা অস্বাভাবিক ছিলো না। যে কারণে ভোট নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলোর অবকাশ নেই।নির্বাচন কমিশনের কাছে ৫ শতাংশ অনিয়মের অভিযোগ এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই ভোট বাতিল করেই ফল ঘোষণা দেয় কমিশন।বিএনপি অসৎ উদ্দেশ্যে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তিন মাসে যে মানুষ পুড়িয়ে, জনসম্পদ নষ্ট করে আন্দোলন হয়েছে তা দেশের জনগণ চায় না।