DoinikBarta_দৈনিকবার্তাfull_1989988473_1431488900

দৈনিকবার্তা- সিলেট, ১৩ মে ২০১৫: সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ খুন হওয়ার পর একদিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। নিহতের বড় ভাই রতেশ্বর দাশ মঙ্গলবার রাতে নগরীর বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা করেছেন,যাতে অজ্ঞাতপরিচয় চারজনকে আসামি করা হয়েছে।বিমানবন্দর থানার ওসি গৌসুল হোসেন বলেন, অজ্ঞাতনামা চারজনকে এজাহারে আসামি করা হয়েছে। গতরাতেই মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল আলমকে এ মামলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান ওসি। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রহমত উল্লাহ জানান, অনন্তের হত্যাকারীদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালানো হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি।চারজন মুখোশধারী এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় বলে আমরা জানতে পেরেছি। পুলিশ তাদের ধরার চেষ্টা করছে। লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের আড়াই মাসের মাথায় মঙ্গলবার সকালে ৯টার পর সিলেট নগরীর সুবিদবাজার এলাকায় ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী অনন্ত বিজয় দাশকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।অভিজিৎ ছিলেন মুক্তমনা ব্লগের পরিচালক। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র অনন্তও এই ব্লগে নিয়মিত লিখতেন। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদেও সোচ্চার ছিলেন তিনি।৩১ বছর বয়সী অনন্তের সম্পাদনায় সিলেট থেকে প্রকাশিত হচ্ছিল বিজ্ঞান বিষয়ক ছোটকাগজ যুক্তি।

হত্যাকাণ্ডের পরপরই আনসার বাংলা ৮ নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে বলা হয়, আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা একিউআইএস এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।গত ফেব্র“য়ারিতে ঢাকায় অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পরও একিউআইএস দায়িত্ব স্বীকার করেছিল, তবে এই সংগঠনটির তৎপরতার বিষয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের কাছে তেমন তথ্য নেই।অনন্ত খুন হওয়ার এক ঘণ্টা পর সকাল ১০টা ২৬ মিনিটে আনসার বাংলা ৮ একটি টুইটে বলে, আল্লাহু আকবার!!! বাংলাদেশে আরও একজনকে হত্যা করা হয়েছে। শিগগিরই আমাদের অপারেশন টিমের কাছ থেকে খবরটি নিশ্চিত করব আমরা।তারও এক ঘণ্টা পর আরেকটি টুইটে বলা হয়, “আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের ভাইয়েরা ১০০% নিরাপদ।

২০১৩ সালের অক্টোবরে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে ৮৪ জনের নামের একটি তালিকা পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ, যাতে আসিফ মহিউদ্দিন, রাজীব হায়দার ও অভিজিৎ রায়ের সঙ্গে অনন্ত বিজয়ের নামও ছিল।পুলিশের ধারণা, হত্যার উদ্দেশ্যেই ওই তালিকা তৈরি করে আনসারুল্লাহ। পরে মুফতি জসীমকে ব্লগার রাজীব হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ইতোমধ্যে এ মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। অনন্ত খুনের দায় আল কায়েদার স্বীকার করা প্রসঙ্গে সিলেটের পুলিশ কমিশনার কামরুল আহসান বলেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি শুনেছি। ফলে এটাকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

সেইসঙ্গে অন্য সব বিষয় মাথায় রেখে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান কমিশনার। এদিকে, ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সিলেটে আধাবেলা হরতাল পালিত হয়েছে । সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই হরতাল কর্মসূচি দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে।হরতালের সমর্থনে কোর্টপয়েন্ট থেকে মিছিল বের করে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। তারা জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টা হয়ে আম্বরখানা পর্যন্ত যায়। সেখানে তারা শান্তিপূর্ণ পিকেটিং করে আবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হয়।মিছিলে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র দেবাশীষ দেবু ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা শাখা সভাপতি শহীদুজ্জামান পাপলু নেতৃত্ব দেন।হরতাল সমর্থকরা সকাল থেকে নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে পিকেটিং করে। কোন ধরনের ভাংচুর ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে পিকেটিং করে তারা। এদিকে, নগরের গুরুত্ব পয়েন্টে পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। পাশাপাশি র‌্যাবের টহলও জোরদার ছিল।শহীদুজ্জামান পাপলু জানান, একজন মুক্তচিন্তার বিজ্ঞান লেখক অনন্ত বিজয়কে খুন করেছে মৌলবাদীরা। আমরা এর প্রতিবাদে ও খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে এই হরতাল করেছি। তিনি বলেন, আমাদের হরতাল ছিল শান্তিপূর্ণ।