DoinikBarta_দৈনিকবার্তা453

দৈনিকবার্তা-রাবি, ১৮ মে: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ক্লাস বন্ধ থাকলেও চলছে একাধিক বিভাগের চুড়ান্ত পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খোলা রাখা হলেও এরই মধ্যে বেশিরভাগ হলে বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ ও ডাইনিং-ক্যান্টিনসহ ক্যাম্পাসের একাধিক খাবারের দোকান। হল পরিস্কারের কাজে নিয়োজিত কর্মচারীরাও নিয়মিত আসছেন না। তাই ক্যাম্পাস বন্ধের আগে সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দূর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষকদের কোয়ার্টারের ইন্টারনেট সংযোগসহ সব কিছু চালু রয়েছে আগের মতোই।বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৭ মে থেকে শুরু হয় গ্রীষ্মকালীন ছুটি। আবাসিক হলগুলো আগামী ২১ মে থেকে বন্ধ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ছুটিতে সকল বিভাগের ক্লাস বন্ধ থাকলেও চালু রয়েছে চুড়ান্ত পরীক্ষা। এতে করে অনেক শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছে ক্যাম্পাসে। বন্ধের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা, এনিমেল হাজবেন্ড্রী এন্ড ভেটেরিনারি সায়েন্স, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, দর্শন ও প্রাণীবিদ্যাসহ একাধিক বিভাগের চুড়ান্ত পরীক্ষা চলেছে। এছাড়াও পরীক্ষা না থাকলেও বিভাগের সাক্ষাৎকার, ফিল্ড ওয়ার্ক, টিউশনিসহ একাধিক কারণে অনেক শিক্ষার্থী বাড়িতে যেতে পারেননি। তাই তাদেরকে বাধ্য হয়ে হলে অবস্থান করতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ১১টি এবং ছাত্রীদের ৫টি হলের প্রতিটিতে এখন অন্তত ৪০ জন করে শিক্ষার্থী অবস্থান করছে।

কিন্তু কয়েকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাদার বখ্শ, সৈয়দ আমীর আলী, নবাব আব্দুল লতিফ, শাহ শখদুম (এসএম) ও রোকেয়াসহ প্রায় সকল হলে বন্ধ রয়েছে ওয়াইফাই (তারবিহীন ইন্টারনেট)। গত কয়েকদিন ধরে এসব হলে বন্ধ করা হয়েছে ডাইনিং ও ক্যান্টিন। এছাড়াও ক্যাম্পাসের টুকিটাকিসহ বিভিন্ন চত্বরের খাবারের দোকানগুলোও বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েকদিন ধরে। তবে শাহ মখদুম ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ক্যান্টিন খোলা থাকায় শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগ কিছুটা কমেছে। গত প্রায় তিন দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল হলের ঝাড়–দার, মালি ও ছুইপাররা নিয়মিত হলে আসছেন না বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে করে হলের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিভাগের রিচার্সের কাজ ও টিউশনি করানোর জন্য গ্রীষ্মকালিন ছুটি শুরু হলেও বাড়িতে যেতে পারিনি। কিন্তু হলের ওয়াইফাই বন্ধ থাকায় আর রিচার্সের কাজ করতে পারছি না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মুকুল চন্দ্র দাস বলেন, ‘কোচিং এ চাকুরি করার কারণে ক্যাম্পাস বন্ধের পরও হলে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিন দুটিই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে রান্না করে খাচ্ছি।’দর্শন বিভাগের মাস্টার্সের এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘গত চার বছর ধরেই দেখছি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল বন্ধের আগের ছয়-সাত দিন এবং পরের ছয়-সাত দিন ডাইনিং-ক্যান্টিনসহ ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে করে হলে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের অনেকভাবে কষ্টের সম্মুখিন হতে হয়।’বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাম্পাসে অবস্থিত শিক্ষকদের কোয়ার্টারের ইন্টারনেট, টেলিফোন সংযোগসহ সব কিছু চলছে আগের মতো। শিক্ষার্থীদের হলে ডাউনিং-ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা আশ্চার্যিত হয়েছেন।কয়েকজন শিক্ষক নাম ও পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে শিক্ষার্থীদের হল বন্ধ হলে শিক্ষকদের কোয়ার্টার কেনো খোলা থাকবে? একই এলাকার মধ্যে থেকে যদি শিক্ষার্থীদের হলের ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে শিক্ষকদের কোয়ার্টারের সংযোগ বন্ধ রাখা হোক। কিন্তু তাতো হচ্ছে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক এস এম এক্রাম উল্যাহ বলেন, ‘কোনো হলে ডাইনিং-ক্যান্টিন বন্ধ থাকার কথা নয়। কেননা অনেক শিক্ষার্থীই তো হলে আছে। তবে বন্ধ থাকলে আমি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে দেখছি।শহীদ হবিবুর রহমান হলের এই প্রাধ্যক্ষ ওয়াইফাই সংযোগের বিষয়ে বলেন, ‘আমার হলে তো ওয়াইফাই সংযোগ রয়েছে। অন্য হলে নেই কেনো তা আমার জানা নেই।’ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট হল প্রাধ্যক্ষদের সাথে কথা বলে জানাতে চান তিনি।বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘বেশি শিক্ষার্থী না থাকায় হলের ডাইনিং-ক্যান্টিন মালিকরা লোকসানের ভয়ে হয়তো তা বন্ধ রেখেছেন। তবে ওয়াইফাই বন্ধের বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষরা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা তা আমার জানা নেই।’