30-05-15-PM_SSC Result Published-8

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩০ মে: হরতাল-অবরোধ না থাকলে ও পরীক্ষার সময় বারবার না বদলাতে হলে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় (এসএসসি) পাসের হার আরও বাড়ত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে প্রতিকূল অবস্থায় পরীক্ষা দিয়েও পাসের হার এত বেশি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান তিনি।শনিবার সকাল ১০টার দিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এরপর প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিকূল অবস্থায়ও এত পাসের হার কম কথা নয়। একটু সুন্দর পরিবেশ পেলে শিক্ষার্থীরা অবশ্যই পরীক্ষায় পাস করবে বলে তিনি আশা করেন।

এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১০ বোর্ডের গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১০ বোর্ডে গড় পাসের হার ছিল ৯১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ পরীক্ষার্থী। এদিক থেকে এ বছর পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে।হরতাল-অবরোধে পরীক্ষায় নানা ধরনের বিঘœ সৃষ্টি না হলে এবার পাসের হার গত বছরের চেয়েও বাড়ত বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল হাতে পাওয়ার পর তিনি বলেন, রাজনীতি আমরা মানুষের জন্য করি। রাজনীতির লক্ষ্য তো আমাদের মানুষের কল্যাণ করা। মানুষের জীবনকে উন্নত করা, সমস্যা দূর করা। এটাইতো মূল্য লক্ষ্য?মানুষের জীবন উন্নত করতেই জাতির পিতা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছেন। কোনো বাধা না মেনে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। রাজনীতির এই আদর্শ নিয়েই আমরা বড় হয়েছি। স্কুল জীবন থেকেই আন্দোলনে ছিলাম। কিন্তু রাজনীতির মানুষ পোড়ানোর এই আন্দোলনের রূপ কখনো দেখি নাই।এটা দেখেছি, একাত্তর সালে যখন হানাদার বাহিনী দেশকে পোড়ামাটি করতে চেয়েছিল। তাদের কথাই ছিল- মানুষ চাই না, মাটি চাই। তাদের প্রতিধ্বনি যেন দেখেছি, বিএনপি নেত্রীর মুখে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে, হুকুম দিয়ে দিয়ে তারা মানুষকে হত্যা করেছে।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর করেন। পরে সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা স্ব স্ব বোর্ডের ফলাফলের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী তার ল্যাপটপে পরীক্ষার ফলাফল দেখেন।এ সময় তিনি বলেন, “ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফলাফল প্রকাশিত হল।গত ৫ জানুয়ারি পুলিশি বাধায় কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ সারা দেশে অবরোধের ডাক দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। অবরোধের মধ্যে কর্মদিবসগুলোতে হরতালের ডাক দেয় তারা। হরতাল-অবরোধে গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার নানা ঘটনায় দেড়শ’র বেশি মানুষ নিহত হন, দগ্ধ হন হাজারের বেশি।

অবরোধ-হরতালে নাশকতার মধ্যে এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে শুধু সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার পরীক্ষা নেয় সরকার। এ ঘটনার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় আমাদের পরীক্ষা এলো। খুব স্বাভাবিকভাবে আমাদের ছেলে-মেয়েরা পরীক্ষা দিতে যাবে, সাথে অভিভাবক, শিক্ষকরা যান। শিক্ষামন্ত্রীকে আমি বললাম, এত মানুষের জীবন আমি ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারি না। ঠিক আছে, যখন হরতাল থাকবে না, অবরোধ থাকবে না, তখন ফাঁকে ফাঁকে পরীক্ষা হবে। যদিও হরতালে মানুষের সাড়া ছিল না, হরতাল বা অবরোধ কখনোই সফল হয়নি।অবরোধ বোধহয় এখনো চলমান, ওইটা নাকি প্রত্যাহার হয়নি। যাই হোক, বাংলাদেশের মানুষ ওই হরতালে সাড়া দেয়নি। এটা একটা গোষ্ঠীর স্বার্থে, জনস্বার্থে না। সেজন্য তারা জনসমর্থন পায়নি। কিন্তু ওই অবস্থায়ও আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনি। তাই পরীক্ষা নিতে হয়েছে ফাঁকে ফাঁকে। আমি জানি এভাবে পরীক্ষা দিতে আমাদের ছেলে- মেয়েদের খুবই কষ্ট হয়েছে। কারণ একটা বিষয়ে পরীক্ষা দিতে ভালো পড়াশোনা করে তারা প্রস্তুত। তারপর তাদের পরীক্ষা হবে না। আসলে মনটাইতো ভেঙে যায়। পরীক্ষার মনোযোগটাইতো নষ্ট হয়ে যায়। তারপরও এভাবেই তাদেরকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে।

তারপরও এবার ৮৭ দশমিক ০৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কিন্তু এর আগে ৯৩ ভাগ পর্যন্ত পাসের হার তুলতে সক্ষম হয়েছিলাম। খুব আকাক্ষা ছিল- এবার আরও বৃদ্ধি পাবে। আমি জানি, যদি হরতাল-অবরোধ না থাকত, পরীক্ষার সময় বারবার পরিবর্তন না হত তাহলে অবশ্যই পাসের হার বাড়াতে আমাদের ছেলে- মেয়েরা পারত।বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের কারণে আমাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। তারপরও এই প্রতিকূল অবস্থায় আমাদের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়ে এত পাস করেছে, সেজন্য আমি অভিনন্দন জানাই। কারণ এই প্রতিকূল অবস্থায় এতদূর পাসের হার আনা এটা কিন্তু কম কথা নয়। এটাও একটা বিরাট অর্জন। ভবিষ্যতে আমি আশা করি, পাসের হার আরও বাড়বে।এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার মোট ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাস করেছে ১২ লাখ ৮২ হাজার ৬১৮ জন।পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৮৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পেয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন শিক্ষার্থী।

গত বছর এই পরীক্ষায় ৯১ দশমিক ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জন। সেই হিসাবে এবার পাসের হার কমেছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ পয়েন্ট। আর পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৩০ হাজার ৩৭৫ জন।বিএনপি-জামায়াত জোট ভবিষ্যতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি আশা করি, বিএনপি-জামায়াত মানুষ পুড়িয়ে মারা, মানুষের ক্ষতি করা, মানুষকে পঙ্গু করার কাজ থেকে বিরত থাকবে।

হরতাল-অবরোধে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আজকে অনিক, তারওতো পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল, তারওতো পাস করার কথা ছিল। কিন্তু সে দিতে পারেনি। বোমার আঘাতে তার একটা চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।তাকে বারবার ভারতে পাঠাচ্ছি। সেখানে চিকিৎসা চলছে। একটা চোখ সম্পূণরূপে নষ্ট, সেখানে পাথরের চোখ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।এ রকম বহু, দেখলে কষ্ট লাগে। এই বাচ্চাদের আজকে পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।আমি বলেছি, ফিরে এসে তুমি আবার পরীক্ষা দিবে, পাস করবে। অন্তত একটা চোখতো ভালো আছে, কাজেই সে পারবে।গত ৫ জানুয়ারি ফেনীতে অবরোধকারীদের বোমায় গুরুতর জখম হন স্কুলছাত্র অনিক ও তার সহপাঠী হৃদয়।বোমায় অনিকের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদেশে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সহায়তা দেন প্রধানমন্ত্রী।

নাশকতার এসব ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ রকম কত মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। আশা করি, এই ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে। এই ধরনের ঘটনা ঘটলে আমরাতো ছাড়ব না।মানুষের জীবন নিয়ে যারা খেলবে, তাদের কোনো ক্ষমা নেই। তাদের কোনো অধিকারই নেই। কেন মানুষ খুন করবে? কেন মানুষ পুড়িয়ে মারবে? কেন মানুষকে বোমা দিয়ে মারবে।এর আগে ৮ টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, ১টি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও একটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ মোট ১০টি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানগণ তাদের নিজ নিজ শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশ বিষয়ে রাঙ্গামাটি ও নীলফামারিতে সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকবৃন্দ, শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন।