21-06-15-Baily Road_Iftar-1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ জুন: নতুন ঢাকার আভিজাত্য এবং পুরনো ঢাকার স্বাদের ঐতিহ্যে সমন্বয়ে তৈরি বেইলি রোডের ইফতারি। পরিচ্ছন্ন-পরিবেশ ও ভিন্ন স্বাদের কারণে নাটক পাড়াখ্যাত এলাকাটির ইফতারির কদর রয়ে গেছে আগের মতোই। বেইলি রোডের বেইলি বারবিকিউ, গার্ডেন ওয়েসিস, সুইস, ডেকেরাট, ফ্রেশকো, ক্যাপিটাল ইফতার বাজার, নবাবী ভোজ, ভিলেজসহ খাবারের জন্য প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী ও দূর-দূরান্ত থেকে ইফতারি কিনতে ছুটে আসেন রসনাবিলাসীরা। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই প্রতি রমজানে দুপুরের পর থেকে বেইলি রোডের বাহারি দোকানগুলোতে ইফতারসামগ্রীর বিশাল পসরা নিয়ে বসেন দোকানিরা।

পুরনো ঢাকার ইফতারির তুলনায় বেইলি রোডের ইফতারির দাম বেশি হলেও ক্রেতার কমতি নেই। এএলাকার ইফতারের অন্যতম আকর্ষণ চার ভাইয়ের সেই বিখ্যাত ক্যাপিটাল কনফেকশনারী।এবারের রোজায় তাদের রেসিপির সংখ্যা দেখা গেল শতাধিক। সুতিকাবাব, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুচপের পাশাপাশি ডিমের হালুয়া, লাবাং, লাচ্ছি, ফালুদা, মিষ্টি দই, জর্দা, পনির সমুচা, কিমা সমুচা, কিমা পরোটা, পনির রোল, পনির পরোটা, চিকেন শর্মা, পাটিশাপটা, খাসির হালিম, মুরগির হালিম, তালের বড়া, জাফরানি জিলাপি, চিকন জিলাপি, সাসলিক, ড্রামস্টিক, অনথন, জাফরানি শরবত, ফ্রোনবল, কোপ্তা, জুস, লুচি, ছোলাবুট, ডাবলি গুমনি, বড়বাপের পোলায় খায়, ছানা মসলা, ফিশ কোপ্তা, লাচ্চাসেমাই, গ্রিল স্যান্ডউইচ, বিফবল, বিফ কাটলেট, ইরানী কাবাব, মাটন কাবাব পাওয়া যাচ্ছে।

এছাড়া এখানে পুরি, ডিমচপ, চিকেনচপ, জালিকাবাব, বিফ স্টিক, শামিকাবাব, স্প্রিংরোল, চিকেন কাটলেট, চিকেন সমুচা, গ্রিল, এগচপ, রেশমি কাবাব, বিফ শিক, মাটন শিক, চিকেন ফ্রাই, চিকেন উইংসের কদরও বেশ।মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকা থেকে ইফতার কিনতে আশা হাফিজ উদ্দিন জানান, বেইলি রোডের দোকানগুলোতে উন্নত পরিবেশ, পরিচ্ছন্ন-পরিবেশনা ও সুস্বাদু খাবারের কারণে এখানে আসি।

গত বছরের চেয়ে এবার ইফতারসামগ্রীর দাম বেড়েছে অনেক। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে সামনের দিনে হয়তো বাইরের খাবার কেনা বন্ধ করে দিতে হবে।এম আর হায়দার নামের এক ব্যবসায়ী বেইলি রোডের ইফতারি কিনতে সেই চকবাজার থেকে এখানে এসেছেন। চকে ইফতারসামগ্রীর এমন রাজকীয় আয়োজন থাকতে বেইলি রোডে কেন, এমন প্রশ্নে তিনি জানালেন, পত্র-পত্রিকা ও টিভি মারফত এই বাজারের নাম শুনেছেন। এখন একটু চেখে দেকে পরখ করতে চাই।বাসাবো থেকে এসেছেন মুকুল আহমেদ। তার এলাকায় এত বাহারি খাবারের আয়োজন নেই বলেই এত দূর আসা। কিন্তু ক্রেতাদের অনেকের মনেই বেশ অসন্তোষ। গত বছরের তুলনায় ইফতারসামগ্রীর দাম এবার বেশ চড়া।

ছোট্ট এক প্যাকেট ফালুদার দাম কী দোকানভেদে ২০০-২৫০ টাকা হয়, তা আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না। হালিম ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, একটি পরোটা প্রকারভেদে ১৫ থেকে ৪০ টাকা, এক কেজি কলিজা ভুনা ৫০০ টাকা, গরুর চাপ ৪০০ টাকা, মুরগির ঝাল ফ্রাই ৩৫০-৪০০ টাকা।ইমরান খান নামের এক বিক্রেতা দাম বাড়ানোর কথা স্বীকার করে বলেন, কোনো কোনো খাবারের দাম গত বছরের তুলনায় ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় তারা বাধ্য হয়ে খাবারের দাম বাড়িয়েছেন বলে তিনি জানান।

২৫ বছর ধরে এই এলাকায় তারা ইফতারি বিক্রি করে আসছেন।নানা বয়সী ক্রেতাসমাগমে সন্তুষ্ট দোকানিরা। তবে প্রতিদিন ইফতারের আগে এ এলাকার যানজটও যেন ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাড়ি নিয়ে বেইলি রোডে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেককে দূরে কোথাও গাড়ি রেখে হেঁটে ইফতারি নিয়ে যেতে দেখা যায়।এদিকে, রাজধানীর পুরান ঢাকায় জমে ঐহিত্যবাহী ইফতার বাজার। আর বেইলী রোডে পাওয়া যায় অভিজাত ইফতার। তবে ঢাকার অধিকাংশ রেস্টুরেন্ট, খাবারের দোকান, ফুটপাত ও সড়কের অলিতে-গলিতে জমে হরেক রকমের ইফতার।রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে রমজান উপলক্ষে ইফতারের এমন আয়োজন লক্ষ্য করা গেছে। রোজা উপলক্ষে মূলত দুপুরের পর থেকে বিক্রেতারা ইফতার সামগ্রীর পসরা নিয়ে বসতে থাকেন। তবে সকাল থেকে ইফতারের বিভিন্ন আইটেম তৈরি শুরু হয়।

রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, রামপুরা, কারওয়ান বাজার, মহাখালী ঘুরে দেখা যায়, অভিজাত হোটেল ও রেস্তোরাঁর পাশাপাশি ছোট-বড় রেস্টুরেন্ট, মিষ্টির দোকান, খাবারের দোকানের সামনে বিভিন্ন ধরনের ইফতার সামগ্রী নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা।এসব দোকানপাট ও ফুটপাতে দেখা যায়, পিঁয়াজু, ছোলা, বেগুনি, দইবড়া, মাংসের ভুনা, গরু ও মুরগির রোস্ট, ভেজিটেবল রোল, আলু ও সবজির চপ, হালিম, পরোটা, শাহী জিলাপি, কিমা, ফিরনি, খেজুর, বাদাম, কয়েক ধরনের শরবতসহ বিভিন্ন ধরনের ইফতার সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া বিভিন্ন সড়কের মোড় ও ফুটপাতের ওপর ভাসমান হকারদেরকে ইফতার বিক্রি করতে দেখা যায়। হোটেল ও রেস্টুরেন্টের সামনে যে সব ইফতার বিক্রি হতে দেখা যায় তার, অনেক দোকানে ধূলাবালি ও মাছি থেকে রক্ষা পেতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আছে।এসব দোকানের বিক্রেতাদের দাবি, রোজাদারদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ইফতার তৈরি ও বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন তারা। সারা মাসব্যাপী ভাল মানের ইফতার বিক্রি করতে চান তারা। মৌচাকের একটি রেস্টুরেন্টের সামনে ইফতার বিক্রি করছেন শাহিন আনোয়ার। তিনি বলেন, রমজানে মাসে তাদের রেস্টুরেন্টে নিয়মিত খাবার বিক্রি বন্ধ থাকে। রোজার পুরো মাস ধরে তারা শুধু ইফতারই বিক্রি করে থাকেন।শুধু ব্যবসার উদ্দেশ্যেই নয়, সারাদিন রোজা শেষে মানুষ যেন স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দিয়ে ইফতার করতে পারেন, সেই ব্যবস্থাই তাদের করা আছে বলে জানান তিনি।তবে সড়কের মোড় ও ফুটপাতে যে সকল হকাররা ইফতার সামগ্রী বিক্রি করছেন তারা খোলা আকাশের নিচে ইফতারের বিভিন্ন আইটেম নিয়ে বসেছেন।

মালিবাগ রেলগেট এলাকায় খোলা আকাশের নিচে ইফতার বিক্রি করছেন আইয়ুব আলী। তিনি বলেন, বড় বড় দোকানে বেশি দামে ইফতার বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু সবার কথা চিন্তা করে সহজ মূল্যে ইফতার বিক্রি করছেন তিনি। প্রতি বছর এখানে ইফতার বিক্রি করেন। তার ইফতার সবাই পছন্দ করেন বলে জানান তিনি।রামপুরা এলাকায় একটি দোকানে ইফতার কিনতে এসেছেন স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম। তিনি জানান, বাসায় বিভিন্ন ইফতার সামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে। এরপরও বাজার থেকে হালিম, মুরগির রোস্ট, পরোটা, শাহী জিলাপী কিনেছেন বলে জানান তিনি।