tmpphpfPG24Aদৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ জুন: অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে বেকসুর খালাস দিয়ে ঘোষিত হাইকোর্টের রায় বাতিল করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। রায়ে নিম্ন আদালতের সাজা বাতিল করে দেয়া হয়েছে।এর আগে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগ এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মায়ার আপিল হাইকোর্টে পুনরায় শুনানি করে নিষ্পত্তির আদেশ দেয়া হয়।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, এ অবস্থায় সংবিধান অনুযায়ী মায়ার সংসদ সদস্য পদ থাকা উচিৎ নয়। এ বিষয়টি নিয়ে সংসদে বড় পরিসরে আলোচনা হতে পারে।অন্যদিকে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী পদে থাকতে সমস্যা হবে না বলে মনে করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল বাছেদ মজুমদার।বৃহস্পতিবার মায়ার মামলার আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার পর তিনি

সাংবাদিকদের সামনে এ মন্তব্য করেন।তিনি বলেন, মায়ার মামলার আপিল যেহেতু এখনো বিচারাধীন তাই সংবিধান অনুযায়ী তার সংসদ সদস্য পদ যাবে না। সংবিধানের ৬৬ ধারার ২ দফার (ঘ) উপদফা মায়ার ক্ষেত্রে অ্যাপ্লিকেবল নয়।

ওই ধারার ২ দফার ঘ উপদফায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকবার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দু’বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ২০০৮ সালে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধভাবে ৬ কোটির বেশি টাকার সম্পদ অর্জনের মামলায় ১৩ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছে। ২০১০ সালের অক্টোবরে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কেবলই আইনি প্রশ্নে ওই রায় বাতিল করেন। দুদক এর বিরুদ্ধে আপিল করে। ১৪ জুন সুপ্রিম কোপ্র“র আপিল বিভাগ হাইকোৃেটর রায় বাতিল করে হাইকোর্টে আপিলের পুনঃশুনানির নির্দেশ দেন।বুধবার এই রায়ের লিখিত অনুলিপি প্রকাশিত হওয়ার পর মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী পদে থাকার কোনো বৈধতা নেই বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কৌসুলি এডভোকেট খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের কাছে তার মতামত জানিয়েছেন।এর আগে গত ১৪ জুন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে দুর্নীতি মামলা থেকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এ দিন মামলাটি হাইকোর্টে নতুন করে শুনানির আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বুধবার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ লিখিত অনুলিপি প্রকাশিত হলো।জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীকে ১৩ বছরের কারাদ- দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। একই সঙ্গে তাঁকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। ওই রায়ে আদালত অবৈধভাবে অর্জিত তাঁর ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দেন।ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী ওই রায় ঘোষণার সময় পলাতক ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ দুর্নীতির মামলা থেকে তাঁকে খালাস দেন। পরে হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় দুদক।

সেনা-সমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৩ জুন রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির এই মামলাটি করে দুদক। ওই বছরের ২৫ অক্টোবর মায়া, তাঁর স্ত্রী পারভীন চৌধুরী, দুই ছেলে সাজেদুল হোসেন চৌধুরী ও রাশেদুল হোসেন চৌধুরী এবং সাজেদুলের স্ত্রী সুবর্ণা চৌধুরীকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২ কোটি ৯৭ লাখ ৯ হাজার টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। ৫ কোটি ৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে অর্জন করে ৬ কোটি ২৯ লাখ ২৩ হাজার টাকার সম্পদ নিজেদের দখলে রেখেছেন। ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারি বিচারিক আদালত মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করলেও মামলার বাকি আসামিদের খালাস দেন।আপিল বিভাগ মায়ার খালাস আদেশ বাতিল করার পর বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মন্ত্রিত্ব এবং সংসদ সদস্য পদ ১৪ জুন থেকে খারিজ হয়ে গেছে। আইন বিশেষজ্ঞরা সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে এই মতামত দিয়েছেন।ওই ধারার ২ দফার ঘ উপদফায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হবার এবং সংসদ সদস্য থাকবার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দু বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে।

ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দুর্নীতি একটি নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ। সে কারণে ১৪ জুন তারিখে আপিল বিভাগ রায় দেওয়া মাত্রই মায়ার সংসদ সদস্য পদ এবং মন্ত্রিত্ব দুটোই বাতিল হয়ে গেছে। আইনের চোখে তিনি আর মন্ত্রী নন। সংবিধানে বলা আছে, কারও সদস্যপদ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে স্পিকার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন এবং তাদের মতই চূড়ান্ত হবে।আইন বিশেষজ্ঞ ড.শাহদীন মালিক মনে করেন, ‘আইন ও নৈতিকতা উভয় মানদ মন্ত্রীকে অবশ্যই অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। এবং এখন স্পিকারের করণীয় হবে ১৯৮১ সালের সংসদ সদস্য যোগ্যতা নির্ধারণী আইনের অধীনে বিষয়টি আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া।আইন কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ২০০১ সালে জেনারেল এরশাদের জনতা টাওয়ার দুর্নীতির মামলায় এই একই মত দিয়ে বলেছিলেন, আপিল করলেও দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির সাজা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত সংসদের সদস্যপদ থাকবে না।সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম তাঁর কনস্টিটিউশনাল ল অব বাংলাদেশ বইয়ে বলেন, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরেও কোনো ব্যক্তি সংবিধানের ওই ৬৬(২) অনুচ্ছেদের কারণে অযোগ্য গণ্য হতে পারেন। যার অর্থ হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পর মায়ার সংসদ সদস্যপদ ও মন্ত্রিত্ব থাকে না।