দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৪ জুলাই: প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ডিজিটাল জুডিশিয়ারির মাধ্যমে বিচারের ক্ষেত্রে দ্রুততা এবং মানুষের জন্য সহায়ক বিচারিক পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা হবে৷প্রধান বিচারপতি বলেন, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই প্রয়োজনবোধে বিচার বিভাগেরও ন্যায্য সমালোচনা হতে পারে৷ কিন্তু অনুচিত্ অথবা দায়িত্বহীন সমালোচনা বিচার বিভাগের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনবে৷বিচার প্রক্রিয়ার ডিজিটালাইজেশন নিয়ে এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব মন্তব্য করেছেন তিনি৷শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ডিজিটালাইজেশন অব বাংলাদেশ জুডিশিয়ারি’ শীর্ষক এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়৷জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপি ও বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় এসেমিনারের আয়োজন করে সুপ্রিমকোর্ট৷’ডিজিটালাইজেশন অব বাংলাদেশ জুডিশিয়ারি’ শীর্ষক এ সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক৷ সন্মানিত অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রবার্ট ওয়াটকিনস৷
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতি, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং ইউএনডিপির কর্মকর্তারাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন৷প্রধান বিচারপতি বলেন, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই প্রয়োজনবোধে বিচার বিভাগেরও ন্যায্য সমালোচনা হতে পারে৷ তবে দায়িত্বহীন সমালোচনা বিচার বিভাগের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনবে৷
তিনি বলেন, বিচার বিভাগে মামলায় দীর্ঘসূত্রিতা, সীমিত প্রবেশাধিকার, আদালতের রায়ের বিষয়ে স্বচ্ছতা ও ভবিষ্যদ্বাণীর অভাব এবং আর্থিক, বাস্তবিক ও অন্যান্য উপায়ের কমতি রয়েছে৷তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে স্বল্প খরচে বিচার বিভাগের জন্য উপযোগী আইসিটি অবকাঠামো তৈরি, যা দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে ভূমিকা রাখতে পারে৷ আদালত বান্ধব আইসিটি সফটওয়্যার তৈরির মাধ্যমে দেশের সকল আদালতে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করে বিচার ব্যবস্থাপনাকে যুগোপোযোগী করতে হবে৷প্রধান বিচারপতি বলেন, দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আইনের শাসন৷ এটি মাথায় রেখেই সকল সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত্৷ দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে বিচার বিভাগের জন্য উপযোগী আইসিটি অবকাঠামো তৈরি এখন সময়ের দাবী৷
তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে আধুনিকায়নের জন্য ৬৪টি জেলাকেই ই-জুডিশিয়ারির অধীনে আনতে হবে৷ এজন্য ই-জুডিশিয়ারির জন্য বহু কার্যক্রম গ্রহণ ও কার্যকর করা প্রয়োজন৷ এর মধ্যে রয়েছে আদালত কক্ষ বান্ধব নির্দেশনামুলক বাংলা লেখার যন্ত্র, সকল আদালতের জন্য ওয়াইফাই সুবিধা, বিচারপ্রার্থীদের জন্য অনলাইনে মামলার তথ্য প্রাপ্তির সুবিধা, ওয়েব সাইট-এসএমএস ভিত্তিক কার্যতালিকা,সুপ্রিমকোর্ট এবং জেলা আদালতের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের সুবিধা, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ, ইলেক্ট্রনিক মামলা রুজু পদ্ধতি চালু৷
তিনি বলেন, জেলা আদালতের জন্য মামলা ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, প্রত্যেক আদালতের জন্য ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন, রায় সংরক্ষণের জন্য আর্কাইভ,স্বয়ংক্রিয় সেকশন, রেকর্ড ডিজিটালাইজেশন, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার, ই-লাইব্রেরি, ইনভেনটরি সিস্টেম, জেলা আদালতের জন্য ডাটা সেন্টার, বায়ো- মেট্রিক অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম, বিচারক ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ এবং কর্মশালা প্রয়োজন৷ প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, এখন সময় এসেছে স্বল্প খরচে বিচার বিভাগের জন্য উপযোগী আইসিটি অবকাঠামো তৈরির, যা দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে ভূমিকা রাখে৷ প্রধান বিচারপতি বলেন, দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আইনের শাসন৷ এটি মাথায় রেখেই সকল সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত্৷বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত মার্কিন বিচার বিভাগের ইতিহাস তুলে ধরেন৷ যেখানে সুপ্রিম কোর্টর সঙ্গে সরকারের ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা উল্লেখ করেন তিনি৷ বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ডি রুজভেল্টের সময়ের কথা তুলে ধরেন তিনি৷
বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সংক্রান্ত মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পুনর্বিবেচনা দরকার বলে মত দেন অর্থমন্ত্রী৷ বিচার বিভাগকে ডিজিটাল করে মানুষের কাছে সঠিক বিচার পৌঁছানোর বিষয়ে আশা প্রকাশ করেন তিনি৷আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক তার বক্তৃতায় বিচার বিভাগের উন্নয়নে প্রধান বিচারপতির নেয়া সব উদ্যোগের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন৷ তিনি বলেন, মামলার দীর্ঘসূত্রিতা ও মামলাজট কমাতে ডিজিটালাইজেশন পদ্ধতি কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে৷ বিচার বিভাগের উন্নয়নে প্রধান বিচারপতির নেওয়া সব উদ্যোগের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক৷তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার বক্তৃতায় সমপ্রতি প্রধান বিচারপতির নেয়া বিচার বিভাগের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে ডিজিটালাইজেশনের জন্য বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে এবং সেটা বাস্তবায়ন করা হবে৷ দেশের সকল জেলা আদালতগুলোতে ইন্টারনেট সংযোগ ও কম্পিউটার খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দেয়া হবে৷ বিচার বিভাগকে তথ্যপ্রযুক্তির বাইরে রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী৷ তিনি আরো বলেন, প্রতিটি আদালতে একক নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে৷
