Latif-spiker

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৭ জুলাই ২০১৫: সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের দীর্ঘ আট মাস পর চিঠি দিয়ে বিষয়টি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ৷ফলে থিতিয়ে আসা সেই টওশ্নটি আবারও নতুন করে সামনে চলে এসেছে- দল থেকে বহিষ্কৃত লতিফকে সংসদ সদস্য পদও হারাতে হবে?বিতর্কিত সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কারের চিঠি প্রাপ্তির কথা অবশেষে স্বীকার করেছেন স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী৷

এর আগে গত দুইদিন এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ইঁদুর-বিড়াল খেলা খেলেন স্পিকার৷ গত ৫ জুলাই পাঠানো এ চিঠির বিষয়টি আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেন তিনি৷কিন্তু দলের পক্ষ থেকে কেউ এই চিঠি পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করতে চাননি৷দলের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ জানান, এখন পর্যন্ত এমন চিঠি পাঠানো হয়নি৷ আর চিঠি পাঠালে তো আপনাদের জানাবো৷তবে স্পিকার ড. শিরিন শারমিন আজ গণমাধ্যমকে বলেছেন, গত ৫ জুলাই তার কাছে চিঠি পাঠোনো হয়েছে৷লতিফ সিদ্দিকী তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা থেকে জামিনে মুক্তি পাবার পর তাকে ঘিরে ইসলামী দলগুলোর আন্দোলন গড়ে ওঠার হুমকির মধ্যে এই চিঠি পাঠানো হলো৷গত ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মামলায় জামিনের পর মুক্তি পান সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী৷এসময় তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলের ক্যাবিন ব্লক ৫১২ নম্বর কক্ষে চিকিত্‍সাধীন ছিলেন৷গত ২৬ মে সাত মামলায় ছয় মাসের জন্য হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছিলেন লতিফ সিদ্দিকী৷ পরে গত ২৩ জুন আরো ১০ মামলায় তাকে হাইকোর্ট থেকে জামিন দেয়া হয়৷২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে টাঙ্গাইল সমিতির এক মতবিনিময় সভায় হজ, তাবলিগ জামায়াত ও প্রধানমন্ত্রীপুত্র জয় সম্পর্কে বেশকিছু মন্তব্য করেন৷ ওই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় দেশে তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা দায়ের হয়৷নিউইয়র্কের ওই সভায় লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরবিরোধী৷ হজে যে কতো ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়৷

তিনি বলেন, হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরব গেছে৷ তাদের কোনো কাম নাই৷ তাদের কোনো প্রোডাকশন নাই৷ শুধু রিডাকশন করতেছে৷ শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা নিয়ে ওখানে দিয়ে আসছে৷ অ্যাভারেজে যদি বাংলাদেশ থেকে এক লাখ লোক হজে যায়, প্রত্যেকের ৫ লাখ টাকা করে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়৷মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) সম্পর্কে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ চিন্তা করলো, এ জাজিরাতুল আরবের লোকেরা কীভাবে চলবে৷ তারা তো ছিল ডাকাত৷ তখন একটা ব্যবস্থা করলো যে, তার অনুসারিরা প্রতিবছর একবার এক সঙ্গে মিলিত হবে এবং এর মধ্যদিয়ে একটা আয়ের ব্যবস্থা হবে৷তিনি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কেও কটূক্তি করেন ওই সভায়মামলা দায়ের পর বিদেশ থাকা অবস্থায় মন্ত্রিত্ব হারান লতিফ সিদ্দিকী৷ এমনকি তাকে দল থেকেও বহিস্কার করা হয়৷ কিন্তু গত আট মাসেও সেই চিঠি স্পিকারের হাতে পৌঁছায়নি৷

২৯ জুন মুক্তি পাবার পরই হেফাজতসহ ইসলামী দলগুলো আবার লতিফ ইসু্যতে সরব হয়ে উঠে৷ গত শুক্রবার হেফাজতসহ কয়েকটি দল তাকে ফের গ্রেপ্তারের দাবিতে বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে৷৮ মাস আগে দল থেকে বহিস্কারের পর হিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন দলের বিপক্ষে ভোট না দেয়ায় ( ফ্লোর ক্রসিং) লতিফ সিদ্দিকী দল থেকে বাদ পড়লেও সাংসদ পদে থাকতে পারবেন৷এ নিয়ে ওই সময় বিতর্ক সৃষ্টি হলে স্পিকার তখন বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়টি আইন অনুযায়ী সমাধান হবে৷

এর আগে চারদলীয় অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপির টিকিটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবু হেনাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল৷ তখন সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের আলোকে তার সংসদ সদস্যপদ রাখার সিদ্ধান্ত দেন তত্‍কালীন স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার৷নবম জাতীয় সংসদেও সাতক্ষীরা-৪ আসনে নির্বাচিত এইচ এম গোলাম রেজাকে তার দল জাতীয় পার্টি বহিষ্কার করলেও তার সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকে৷সংবিধানের ৭০ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনও নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দেন তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে৷ওই অনুচ্ছেদে দল থেকে বহিষ্কৃত হলে সদস্য পদের কী হবে, সে বিষয়ে কিছু বলা নেই৷লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ থাকবে কি না তা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে ব্যাপক আলোচনা চলছে৷ দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য টওবীণ সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অভিমত দিয়েছেন, লতিফ সিদ্দিকী স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য থাকবেন৷

হজ নিয়ে মন্তব্যের কারণে বিভিন্ন মহলের দাবির মুখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গতবছর অক্টোবরে লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর পাশাপাশি দল থেকেও বহিষ্কার করে৷ সে সময় তার সাংসদ পদ নিয়ে নানামুখি আলোচনার মধ্যে সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেছিলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ‘ফ্লোর ক্রসিংয়ে’ না পড়ায় লতিফ সিদ্দিকী দল থেকে বাদ পড়লেও সাংসদ পদে থাকতে পারবেন৷তবে এ নিয়ে ‘কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হলে স্পিকার আইন বিশ্লেষণ করে তার সমাধান দেবেন বলেও সে সময় জানিয়েছেন তিনি৷এর মধ্যে ধর্মীয় উসকানির মামলায় আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যান টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী সিদ্দিকী পরিবারের বড় ভাই লতিফ৷ উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর গত ২৯ জুন তিনি মুক্তি পান৷শেষ পর্যন্ত লতিফকে বহিষ্কার করার বিষয়টি জানিয়ে আওয়ামী লীগের পাঠানো চিঠি গত ৫ জুলাই স্পিকার শিরীন শারমিনের হাতে পৌঁছায়৷স্পিকার বলেন, গত ৫ জুলাই আওয়ামী লীগ অফিস থেকে আমাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে৷লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা আইন দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷