bangladesh bank

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩০ জুলাই ২০১৫: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান তৈরি ও উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য প্রবৃদ্ধি সহায়ক ও বিনিয়োগবান্ধব মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ঋণপ্রবাহ ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারী খাতের ঋণের যোগান লক্ষ্যমাত্রা ১৫ শতাংশ।বৃহস্পতিবার কেন্দ্রিয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গভর্নর ড. আতিউর রহমান মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন।

এ সময় ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান, এস কে সূর চৌধুরী ও নাজনীন সুলতানা, প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরুপাক্ষ পাল, চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট এডভাইজার আল্লাহ মালিক কাজমী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।গভর্নর বলেন, উৎপাদন কর্মোদ্যোগের জন্য বিবিধমুখী চলমান নীতি সমর্থন সংকুলান করে প্রণীত হয়েছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মুদ্রানীতি কার্যক্রম।

এর প্রথমার্ধের মুদ্রানীতির ভঙ্গি হলো-সামাজিক ন্যায়বোধভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তার পাশাপাশি ঋণ যোগানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্ফীতি এড়িয়ে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি পরিমিতি এবং সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা জোরালো করা।তিনি বলেন, নতুন মুদ্রানীতি কার্যক্রমে প্রবৃদ্ধিবান্ধব অর্থায়নের আগের মুদ্রানীতির সমর্থন সূত্রগুলো সচল থাকার পাশাপাশি নতুন দু’টি অর্থায়ন সূত্র যোগ হবে। প্রথমটি হলো অভ্যন্তরীণ ও রফতানি উভয় বাজারের জন্য উৎপাদনমুখী প্রকল্পগুলোর মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদি বৈদেশিক মুদ্রা অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক থেকে আহরণ করা ৩০০ মিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল। আর দ্বিতীয়টি হলো রফতানিমুখী বস্ত্র, পোশাক ও চামড়া শিল্পে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া অবলম্বনের অর্থায়নের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার পুন:অর্থায়ন সহায়তা।

মুদ্রানীতিতে বলা হয়, দেশজ উৎপাদনে ৭ শতাংশ প্রকৃত প্রবৃদ্ধি এবং ৬ দশমিক ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির মাত্রা ধরে অভ্যন্তরীণ ঋণ যোগানের প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপন করা হয়েছে বিগত অর্থবছরের প্রাক্কলিত ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য ১৬ দশমিক ৩ শতাংশে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ যোগানের প্রবৃদ্ধি আগের অর্থবছরের প্রাক্কলিত ১৩ দশমিক ৬ শতাংশের বিপরীতে চলতি অর্থবছরে ১৫ শতাংশে প্রাক্কলিত হয়েছে। ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধি বিগত অর্থবছরের ১৩ দশমিক ১ শতাংশের বিপরীতে এবার ১৫ দশমিক ৬ শতাংশে প্রাক্কলিত হয়েছে।বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভ মুদ্রা যোগানে আগের অর্থবছরের ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিপরীতে চলতি অর্থবছরে জন্য প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ শতাংশ।

আতিউর রহমান বলেন, উচ্চতর প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের জন্য অভ্যন্তরীণ ঋণ যোগানের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা প্রয়োজন বলে অনেকে ধারণা পোষণ করলেও অর্থনীতির প্রকৃত খাতে বিরাজমান ভৌত অবকাঠামোগত অপ্রতুলতা এবং অন্যান্য সুবিদিত প্রতিবন্ধকতা নিরসন না করে অপরিমিত তারল্যস্ফীতি আনা মোটেই প্রবৃদ্ধিবান্ধব হবে না। কেবলমাত্র অনুৎপাদনশীল বেশি ঝুঁকিনির্ভর কর্মকা- উৎসাহিত করে মূল্যস্ফীতি এবং সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধির ইন্ধন যোগাবে।

তিনি বলেন, আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে মুদ্রানীতিতে সংযত ও সতর্ক ভঙ্গি বজায় রেখে ঋণ যোগান প্রবৃদ্ধির পর্যাপ্ততার দিকে নজর রাখার পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত স্ফীতি এড়িয়ে চলেছি- যার ফলে ভোক্তা মূল্যস্ফীতির পরিমিতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখায় টেকসই অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হয়েছে।মুদ্রানীতি প্রকাশনায় উল্লেখ করা হয়, বিনিয়োগের জন্য অবকাঠামোগত সুবিধার অপ্রতুলতা, বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি মন্দা এবং দেশে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতাজনিত বিঘেœর প্রেক্ষাপটে ব্যাংকিং খাত থেকে অভ্যন্তরীণ ঋণ যোগানের প্রবৃদ্ধি আগের মুদ্রানীতিতে প্রক্ষেপিত ১৭ দশমিক ৪ শতাংশের চেয়ে অনেকটা নিচে মে মাস শেষে ছিল ১০ দশমিক ৪ শতাংশ।